তৃপ্ত: মোহনবাগান গ্যালারিতে কিবু। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
পরপর তিনটি ট্রফিতে ব্যর্থতার পর, আই লিগের প্রথম দু’টি ম্যাচে পুরো পয়েন্ট পায়নি মোহনবাগান। তখন কিবু ভিকুনা যেখানেই যেতেন তাঁকে শুনতে হত, আপনি কী কোচিং করান মশাই যে, দল গোল করতে পারে না! জেতে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনবাগান তাঁবুতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ কিবু তুলে আনেন সেই দিনগুলির কথা। তার পর বলেন, ‘‘আজই এখানে আশার সময় গাড়ির ড্রাইভারকে বলছিলাম, সে দিন যারা আমাকে নানা ভাবে বিদ্রুপ করত তারাই এখন আমাকে এবং ফুটবলারদের নিয়ে নাচানাচি করছে। ছবি তুলছে।’’ পরে অবশ্য যোগ করেন, ‘‘এটা নিয়ে অবশ্য কখনও কিছু ভাবিনি। নানা লোকের মত হিসাবে নিয়েছি। তবে এ সব আমাকে বাড়তি শক্তি যোগাত।’’
তখনও মাঠ ‘দর্শকশূন্য’ হওয়ার সরকারি ঘোষণা হয়নি। ডার্বির টিকিট কেনার লম্বা লাইন পড়েছে, বিক্রিও হচ্ছে। কিবুর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি। তিনি পরের মরসুমে ভারতে কোচিং করাবেন কি না তা নিয়ে ক্লাব জুড়ে গুঞ্জন। সেই লাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে এসে স্পেনীয় কোচ বলে দেন, ‘‘এখনও এই বিষয়টি নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে এখানে একা একা থাকতে হয়। এটা খুব সমস্যার। যা সিদ্ধান্ত নেব স্ত্রী এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। তবে ভারতে আমার দশ মাসের থাকার অভিজ্ঞতা দারুণ। মোহনবাগানে কোচিং করিয়ে আমি খুশি।’’ কিবুর স্ত্রী কাসিয়া থাকেন পোল্যান্ডে। ফুটবলের সঙ্গেই যুক্ত। লা লিগার হয়ে চারটি দেশে কাজ দেখাশোনা করেন। মাঝে দু’বার তিনি কলকাতায় এলেও চাকরির জন্য বেশি দিন ছুটি পাননি। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, কেরল, জামশেদপুর-সহ কয়েকটি দলের কোচিং করানোর প্রস্তাব এসেছে তাঁর কাছে। বেইতিয়াদের কোচ ঠিক করেছেন, যা সিদ্ধান্ত নেবেন আই লিগ শেষে।
টানা ১৪ ম্যাচে অপরাজিত কোচ অবশ্য রবিবারের ডার্বি নিয়ে কোনও চাপ অনুভব করছেন না। কিছুটা অকপট ভঙ্গিতে তিনি বলে দেন, ‘‘চাপ ছিল চেন্নাই বা আইজল ম্যাচের আগে। সদস্য-সমর্থকরা সবাই ধরে নিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছি। সেটাই চাপে ফেলে দিয়েছিল সবাইকে। এখন সেই চাপ নেই। ছেলেদের বলেছি ডার্বি উপভোগ করো।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছেন বলে কি ডার্বি-সহ আই লিগের বাকি ম্যাচগুলিকে তা হলে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না? ফ্রান গঞ্জালেসদের ‘হেড মাস্টার’ আঁতকে ওঠেন। বলে দেন, ‘‘সেটা একেবারেই নয়। আমি বলেছি নিজেদের খেলা আরও উন্নত করো। যত বেশি সংখ্যক পয়েন্ট তুলে আনতে হবে। ডার্বিও জিততে চাই। গতবারের ডার্বির চেয়ে ইস্টবেঙ্গল এখন অনেক শক্তিশালী। ভিক্টর পিরেজ, জনি আকোস্তা আসায় ওরা ভাল খেলেছে। ওরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল।’’
সাধারণত কোনও ফুটবলারকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হন না কিবু। এ দিন অবশ্য ৯ ম্যাচে ১০ গোল করা পাপা বাবাকর জিয়োহারার প্রশংসা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। বলে দিলেন, ‘‘ও আসার পর আমাদের দলের চেহারাটাই বদলে গিয়েছে। মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে পাপার অবদান বিশাল। টানা নয় ম্যাচ গোল করেছে। হাফ চান্স থেকেও গোল করেছে।’’ চার ম্যাচ আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে দলের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি তিনটি কারণ তুলে এনেছেন তিনি। সেগুলি হল এক) রক্ষণ এবং আক্রমণের সমন্বয়। দুই) সব ম্যাচে গোল করা। তিন) লিগের সবথেকে কম গোল খেয়েছি। কিবু এ দিন দলের তিন জুনিয়র ফুটবলার শেখ সাহিল, শুভ ঘোষ এবং কিয়ান নাসিরির প্রশংসা করে বলেছেন, ‘‘সাহিলকে আমি রক্ষণ থেকে মাঝমাঠে এনেছি। সেখানে দারুণ সফল। শুভর গোল করার খিদে দারুণ। আর কিয়ান রাইট ব্যাকে খেললে সফল হবে।’’