মোহনবাগানকে আই লিগ দেওয়া কোচ কিবু। ইউরোপা লিগ জয়ী লোপেতেগি। —ফাইল চিত্র।
সেভিয়াকে ইউরোপা লিগ জেতানোর পরে জুলেন লোপেতেগির আনন্দ ঝরলো কান্না হয়ে। ৫৩ বছর বয়সি সেভিয়া কোচের চোখে জল দেখে মোহনবাগানকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করা কোচ কিবু ভিকুনা বলছেন, ‘‘আবেগ নিয়েই তো আমাদের জীবন।’’ জীবনে কখনও উঁকি দেয় মেঘ আবার কখনও ঝলমল করে রোদ। লোপেতেগির থেকে এই বাস্তব আর কে ভাল জানেন!
সেই কোন ছোটবেলা থেকেই লোপেতেগির সঙ্গে বন্ধুত্ব মোহনবাগান থেকে কেরল ব্লাস্টার্সের রিমোট কন্ট্রোল হাতে নেওয়া কিবুর। দুই পরিবারের সম্পর্কও ছিল গভীর। সেই সম্পর্কের বন্ধন এখনও অটুট। শনিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে কিবু বললেন, ‘‘আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে দারুণ ঘনিষ্ঠতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে বেশ কয়েকটা ছুটির দিন আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি।’’ সেই দিনগুলো এখনও খোঁজেন কিবু। লোপেতেগি কি খোঁজেন না? ফিরে যেতে চান না ফেলে আসা সেই সব দিনগুলোয়?
নিজের ওয়েবসাইটে লোপেতেগিকে নিয়ে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন কিবু। সেই ভিডিয়োয় সদ্য ইউরোপা লিগ জয়ী কোচকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কিবুকে সেই ছোটেবলা থেকেই আমি জানি। ছেলেবেলায় আমরা একসঙ্গে কত ফুটবল খেলেছি। বয়সে কিবু আমার থেকে ছোট ছিল। ওকে ছোটবেলায় যে রকম ছটফটে দেখেছি, এখনও সে রকমই রয়ে গিয়েছে।’’
আর কিবু বলছেন, ‘‘আমার দাদা প্যাটক্সির বন্ধু লোপেতেগি। ছোটবেলা থেকে আমরা একসঙ্গে খেলতাম। একসঙ্গে অনেক দিন কাটিয়েছি। সেই বন্ধুত্ব এখনও রয়ে গিয়েছে। আমি তো সপ্তাহ খানেক পোর্তোয় গিয়ে লোপেতেগির কোচিংও দেখে এসেছি।’’
আরও পড়ুন: মেসি, রোনাল্ডোর সাম্রাজ্যে ভাগ বসাতেন লেওনডস্কি? কে পেতে পারতেন এ বারের ব্যালন ডি’অর
কোচ লোপেতেগিকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করছেন কিবু? বেইতিয়া-ফ্রান গঞ্জালেজদের কোচ বলছেন, ‘‘লোপেতেগির গেম রিডিং খুব ভাল। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্বের জন্য ফুটবলারদের কাছ থেকে ও শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছে। মেথোডিক্যাল কোচ বলতে যা বোঝায়, ও তেমনই।’’
এ রকম কোচকেও অন্ধকারের রাস্তায় হাঁটতে হয়েছিল। খারাপ সময়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যেতে হয়েছিল। বছর দু’য়েক আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের বল গড়ানোর ঠিক আগের দিন লোপেতেগিকে বরখাস্ত করে স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন। বুলফাইটিংয়ের দেশের ফুটবল ফেডারেশনকে কিছু না জানিয়েই রিয়ালের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করে বসেছিলেন লোপেতেগি। আর সেই কারণ দেখিয়েই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
যে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য তাঁকে চাকরি হারাতে হয়েছিল জাতীয় দলের, সেই ক্লাবে মাত্র চার মাস ১৭ দিন চাকরি করেন লোপেতেগি। তার পরেই কিবুর বন্ধুর শুরু হয় সেভিয়া মিশন। জার্মানির কোলনের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৩-২ গোলে হারানোর পরে লোপেতেগির চোখে আনন্দাশ্রু।
ছোটবেলার বন্ধুর এমন সাফল্যের পরে কি কথা হয়েছিল?
A post shared by Kibu Vicuña (@kibu_vicuna) on
সবুজ-মেরুন-এর প্রাক্তন কোচ বলছেন, ‘‘আমার বাবা প্রতিটি ম্যাচের পরেই জুলেনের বাবার সঙ্গে কথা বলেন। ওঁদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে্। আমার সঙ্গে এখনও হয়নি। কারণ আমি লোপেতেগিকে খারাপ সময়তেই কেবল মেসেজ পাঠাই। ভাল সময়ে তো শুভেচ্ছা জানানোর অনেককেই পাওয়া যায়। খারাপ সময়ে পাশে তো কেউ থাকে না।’’ দুঃসময়ে যিনি পাশে থাকেন, তিনিই তো পরম বন্ধু।