নিখুঁত টেনিসের সামনে পরাজয় ফেডেরারের

বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বরের জন্য আরও একটা ব্যাপার কিছুটা অস্বস্তির ছিল বলে মনে হয়। সেটা হল কোর্ট। বরাবর সেন্টার কোর্টে খেলতে অভ্যস্ত গতবারের চ্যাম্পিয়নকে আজ নামতে হয়েছিল এক নম্বর কোর্টে। তবে এটা হারের অজুহাত হতে পারে না।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

লন্ডন শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

ইন্দ্রপতন: দারুণ শুরু করেও পাঁচ সেটের লড়াইয়ে হেরে গেলেন ফেডেরার। শেষ চারে কেভিন অ্যান্ডারসন।  ছবি:এএফপি 

বিশ্বাসই হচ্ছে না কারও! আরও চার দিন উইম্বলডন চলবে। অথচ তিনি থাকবেন না। রজার ফেডেরার।

Advertisement

কেভিন অ্যান্ডারসনের কাছে হেরে ফেডেরার নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এত ভাল শুরু করেও এ ভাবে হারতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা পাঁচ সেটের ল়ড়াইয়ে ফেডেরারের ছিটকে যাওয়ার চেয়েও বেশি অবাক করার মতো দক্ষিণ আফ্রিকার কেভিন অ্যান্ডারসনের জয়টা। যিনি এর আগে ফেডেরারের বিরুদ্ধে চার বার মুখোমুখি হয়ে চার বার তো হেরেছেনই, একটা সেটও জিততে পারেননি। উইম্বলডনেও এর আগে চতুর্থ রাউন্ডের বেশি এগোতে পারেননি কোনও দিন।

এ বার সেন্টার কোর্টে ফেডেরারের উইম্বলডনের প্রথম ম্যাচেও আমি ছিলাম। আর আজও দেখলাম চার ঘণ্টা ১৪ মিনিটের ম্যারাথন লড়াইটা। স্কোরলাইন বলছে ফেডেরার হেরেছেন ৬-২, ৭-৬ (৫), ৫-৭, ৪-৬, ১১-১৩। ঘটনা হল, প্রথম সেট মাত্র ২৬ মিনিটে জেতার পরে দ্বিতীয় সেট টাইব্রেকারে গেলেও ফেডেরার একটুও চাপে পড়েছেন বলে মনে হয়নি। বরং উইম্বলডনে টানা ৩৪টা সেট জেতার পরে মনে হচ্ছিল ২০০৫-’০৬ গড়া নিজের রেকর্ড ভেঙে অবলীলায় সেমিফাইনালে চলে যাবেন। একটা সময় তো তৃতীয় সেটে ৫-৪ এগিয়ে গিয়ে ম্যাচ পয়েন্টের সামনেও ছিলেন। টানা ৮৫টা গেম তাঁর জেতা হয়ে গিয়েছে তখন নিজের প্রিয় গ্র্যান্ড স্ল্যামে। দর্শকরা তুমুল চিৎকার করছেন ফেডেরারের পক্ষে। তখনই তাঁর ব্যাকহ্যান্ডের একটা শট নেটে লাগে। ব্যাস, ওখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়। অনেকেই হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন এই অ্যান্ডারসনই গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে ফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিলেন। চমকে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁরও আছে।পরের গেমে ফেডেরারের সার্ভিস ভেঙে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন কেভিন। ওখান থেকেই ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকেন ফেডেরার। সুইস কিংবদন্তিকে দেখে তখন মনে হচ্ছিল নিজের স্বাভাবিক খেলা না খেলে অন্য পরিকল্পনায় চলে গিয়েছেন। মানে ‘প্ল্যান বি’। আগ্রাসী না খেলে বিপক্ষের ভুলের জন্য অপেক্ষা করে যাও। মনে হয়, ঠিক এই কারণেই ফেডেরারকে ডুবতে হল। কারণ, অ্যান্ডারসন আজ তুখোর সার্ভিস করছিলেন। গোটা ম্যাচে ওর ২৮টা ‘এস’ সার্ভিস থেকেই ব্যাপারটা স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, ১২টা ব্রেকের ৯টাই বাঁচান। মানে প্রায় নিখুঁত টেনিস। ফেডেরারকে তিনি কোনও সুযোগই দেননি আর ম্যাচে ফেরার।

Advertisement

বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বরের জন্য আরও একটা ব্যাপার কিছুটা অস্বস্তির ছিল বলে মনে হয়। সেটা হল কোর্ট। বরাবর সেন্টার কোর্টে খেলতে অভ্যস্ত গতবারের চ্যাম্পিয়নকে আজ নামতে হয়েছিল এক নম্বর কোর্টে। তবে এটা হারের অজুহাত হতে পারে না।

বরং আমি তো তারিফ করব কেভিনের মানসিকতার। এ রকম একটা মঞ্চে একজন কিংবদন্তির বিরুদ্ধে খেলতে নেমে প্রথমে পিছিয়ে গিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোই শুধু নয়, পঞ্চম সেটে প্রতিটা শটে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে খেলেছেন। ফেডেরার বিকল্প কোনও পরিকল্পনায় যাওয়ার সুযোগই পাননি। অসীম ধৈর্য ধরে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়। পঞ্চম গেমে ক্রমশ ফল এগিয়েছে ৪-৪, ৬-৬, ৮-৮, ১০-১০। শেষ পর্যন্ত ১১-১১ তে সুযোগ পেয়ে যান কেভিন। ফেডেরার ডাবল ফল্ট করে ব্রেক পয়েন্ট উপহার দিয়ে বসেন। এর পরে ফের ফোরহ্যান্ড নেটে মেরে গেমটা হারেন। পরের গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখতেই কেল্লাফতে কেভিনের!

অনেকে জানতে চাইবেন ৩৬ বছর বয়সি ফেডেরার কি আবার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবেন? নিজের ঘর-বাড়ির মতো হয়ে যাওয়া ঘাসের কোর্টেই তো হেরে গেলেন। তাঁদের বলব দু’বছর আগেও কিন্তু এই প্রশ্নটাই উঠেছিল! কিন্তু তার পরেও ফেডেরার স্বমহিমায় কোর্টে ফিরে আসেন। একবার ভেবে দেখুন তার পরে তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স‌ংখ্যা কত? মাত্র তিনটি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement