এশিয়া কাপের মতো কর্ণ জিতলেন জীবনযুদ্ধেও

কর্ণের স্বপ্নপূরণের যাত্রায় সঙ্গ দিলেন মা নিলু কুমারী। ছেলের আবদারে খড়গপুরের ব্লুজ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কর্ণকে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর মা। নিলু দেবী তখন হয়তো কল্পনাও করেননি, একদিন তাঁর ছেলেই যুব এশিয়া কাপ তুলে দেবে দেশকে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০২
Share:

লড়াকু: ফাইনালে কঠিন পিচে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস কর্ণের। টুইটার

বাবা চেয়েছিলেন ছেলে পড়াশোনা করে তাঁর মতো শিক্ষকতা করুক। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কর্ণ লাল। বাবার কঠোর অনুশাসন তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০১১ সালে আচমকা পাল্টে গেল ছবিটা। যকৃতের সংক্রমণ জীবন কেড়ে নেয় বাবার। কর্ণের তখন এগারো বছর বয়স। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কর্ণ বুঝে গিয়েছিল, এখন থেকেই তার প্রকৃত লড়াই শুরু হল।

Advertisement

কর্ণের স্বপ্নপূরণের যাত্রায় সঙ্গ দিলেন মা নিলু কুমারী। ছেলের আবদারে খড়গপুরের ব্লুজ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কর্ণকে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর মা। নিলু দেবী তখন হয়তো কল্পনাও করেননি, একদিন তাঁর ছেলেই যুব এশিয়া কাপ তুলে দেবে দেশকে। শনিবার কলম্বোয় এশিয়া কাপ ফাইনালে বাংলাদেশকে পাঁচ রানে হারিয়ে সপ্তম বার চ্যাম্পিয়ন অনূর্ধ্ব-১৯ ভারত। ৪৩ বলে ৩৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলকে জিততে সাহায্য করেন ১৮ বছর বয়সি বাংলার অলরাউন্ডার।

প্রথমে ব্যাট করে ৩৩তম ওভারে ১০৬ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। কঠিন পিচে কর্ণের ৩৭ রানের ইনিংসের পাশাপাশি ৩৩ রান করেন অধিনায়ক ধ্রুব জুরেল। কিন্তু বাকিরা সে ভাবে ছন্দে না থাকায় হারের আতঙ্ক তৈরি হয় ভারতীয় শিবিরে। জবাবে ১০১ রানে অলআউট বাংলাদেশ। পাঁচ উইকেট নিয়ে অথর্ব অঙ্কলেকর ম্যাচের সেরা হলেও কর্ণের অবদানকে অগ্রাহ্য করা যায় না।

Advertisement

এশিয়া কাপ জয়ের অনুভূতি ঠিক কেমন, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারলেন না কর্ণ। কলম্বো থেকে ফোনে বাংলার অলরাউন্ডার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘ম্যাচ জেতার পরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। মায়ের সেই জীবনসংগ্রামের দিনগুলো চোখের সামনে ভাসছিল। মা যদি ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে সম্মতি না দিতেন, তা হলে এই জার্সিতে কখনওই হয়তো খেলা হত না।’’ আরও বললেন, ‘‘আজ হয়তো বাবাও খুশি হবেন। উনি বেঁচে থাকতে আমাকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন। তবে এই সাফল্য দেখলে নিশ্চয়ই তা উপভোগও করতেন।’’

খড়গপুরের বাড়িতে দুই মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে ছেলের খেলা দেখছিলেন মা নিলু কুমারী। ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে তিনিও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। নিলু দেবী বললেন, ‘‘বাবাকে লুকিয়ে ছোটবেলায় পাড়ার মাঠে খেলত কর্ণ। ভয়ও পেত। বাবা বাড়ি ফেরার আগেই ও চলে আসত। যে দিন পারত না, সে দিন আমাকেই ওর বাবার হাত থেকে বাঁচাতে হত। কিন্তু আজ ওর বাবা থাকলে ছেলের সাফল্যে নিশ্চয়ই গর্ববোধ করতেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement