লুইস সুয়ারেজ যাঁর কাঁধে কামড়ে দিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন। সেই জর্জে কিয়েল্লিনি গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন। তবু শেষ রক্ষা হল না ইতালির। তুরিনে ম্যাসিডোনিয়ার সঙ্গে ১-১ ড্র করে রাশিয়া বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন সেই কঠিনই করে তুলল ইতালি।
গ্রুপ ‘জি’ থেকে এক নম্বর দল হিসেবে রাশিয়ার টিকিট অর্জন করে ফেলেছে স্পেন। কিন্তু আজ্জুরিরা পড়ে রইল দু’নম্বরে। রানার্স হতে পারলে প্লে-অফ খেলে আসতে হবে তাদের। তবে তুরিনে দুর্বল ম্যাসিডোনিয়াকেও হারাতে না পারা খুব একটা ভাল বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল না। মাঠ ছাড়ার সময় ইতালির ফুটবলারদের বিদ্রুপও সহ্য করতে হল। কিয়েল্লিনির গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে গিয়েছিল ইতালি। ৭৭ মিনিটে গোল করে ম্যাসিডোনিয়াকে সমতায় ফেরান প্যালেরমো স্ট্রাইকার আলেকজান্ডার ট্রাজকভস্কি।
স্পেনের বিরুদ্ধে লজ্জাজনক ০-৩ গোলে হারার পরে এই ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করতে নেমেছিল জামপিয়েরো ভেঞ্চুরার দল। প্রথমার্ধে ভাল শুরু করেও রক্ষণ সামলানোর কাজটা ঠিক করতে পারেনি ইতালি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে কিয়েল্লিনি বলেন, ‘‘দলের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং বিপক্ষকে দূর্বল ভাবে দেখাই আমাদের বোকামো। গোল করে এগিয়ে যাওয়ার পরে আমাদের বল পজেশন ধরে রেখে ম্যাচটাকে আরও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিল। ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ওরা কিছুই করতে পারেনি। ভক্তদের কথা ভেবে খুবই বিষণ্ণ লাগছে।’’
ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে পয়েন্ট নষ্ট করে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে শেষ করায় নভেম্বরের দ্বিতীয় পর্বের প্লে-অফে বড় টিমের সামনে পড়তে হতে পারে ইতালিকে। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগেই লরেঞ্জো ইনসিগনের কর্নার থেকে সিরো ইম্মোবিলের পাস ট্যাপ করে গোল করেন কিয়েল্লিনি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাসেডোনিয়ার অধিনাযক গোরান পান্ডেভের ক্রস থেকে জোরাল শটে চমকপ্রদ গোল করলেন পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা ট্রাজকভস্কি। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারলেন না য়ুভেন্তাসের শেষ স্তম্ভ গিয়ানলুইগি বুফন।
ম্যাসিডোনিয়ার অধিনায়ক পান্ডেভ বললেন, ‘‘ইতালি এখনও যে কোন দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। তবে ওরা জানত, এই ম্যাচে জিতেও তাদের দ্বিতীয় স্থানেই থাকতে হবে। তাই ওরা হয়তো একশো শতাংশ উজাড় করে খেলেনি।’’ গ্রুপে তিন নম্বর স্থানে থাকা আলবানিয়ার বিরুদ্ধে সোমবার লিগের শেষ ম্যাচ ইতালির। এই গ্রুপের চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইজরায়েল, ম্যাসিডোনিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে।
নতুন ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভাব এবং পাঁচ জন প্রথম টিমের মিডফিল্ডারের চোট ভোগাচ্ছে আজ্জুরিদের। মার্কো ভেরাত্তি, দানিয়েলে দে রোসি, লরেঞ্জো পেল্লেগ্রিনি, ক্লদিও মার্কিসিও এবং রিকার্ডো মনতোলিভোর অভাবটা বেশ ভালই চোখে পড়ল। এঁরা ছারাও দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার আন্দ্রে বেলোত্তিকে প্লে-অফেও পাচ্ছেন না কোচ ভেঞ্চুরা। ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে ড্রয়ের পরে কোচ বলেন, ‘‘প্লে-অফে খেলার সময় আশা করছি পুরো দলকে ফেরত পাব এবং গোল খরা কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা।’’
ওয়েলসের গুরুত্বপূর্ণ জয়: জর্জিয়ায় জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করে ওয়েলসকে জেতালেন টম লরেন্স। তাঁর একমাত্র গোলের সুবাদে রাশিয়া বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করার দৌড়ে টিকে থাকল গ্যারেথ বেল-দের ওয়েলস। দ্বিতীয়ার্ধের চার মিনিটের মাথায় গোল করেন লরেন্স। ‘‘আমাদের জন্য এটা একটা দুর্দান্ত জয়। আমি খুব খুশি গোল করতে পেরে,’’ বলেন লরেন্স। আরও বলেন যে, এটা তাঁর কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। গত ইউরো কাপে দুর্দান্ত খেলা ওয়েলস ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছে। সোমবার আয়ার্ল্যান্ডের সঙ্গে তাদের যোগ্যতা অর্জন পর্বের শেষ ম্যাচ। আয়ার্ল্যান্ড এ বারের চমক হিসেবে এখনও সরাসরি রাশিয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জনের রাস্তায় টিকে রয়েছে। ডারিল মারফির জোড়া গোলে তারা হারিয়েছে মলডোভাকে।
আইভরি কোস্ট এগোচ্ছে: বিশ্বকাপে তাদের টানা চতুর্থ বার উপস্থিতি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে কোস্টা রিকা। মালির সঙ্গে ০-০ ড্র করে তারা আরও ভাল জায়গায় চলে এল। তবে ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছে দিদিয়ের দ্রোগবার দেশ। মালি অনেক সুযোগ তৈরি করেছিল, গোল করার কাছাকাছিও এসেছিল কয়েক বার কিন্তু গোল করতে পারেনি। আইভরি কোস্টের অনেক খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেন ফাউল করার জন্য। অনেককে সময় নষ্ট করতেও দেখা যায়। আফ্রিকার গ্রুপ ‘সি’-তে আইভরি কোস্ট এখন শীর্ষে রয়েছে। পাঁচ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। মরক্কো ২ পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পরের ম্যাচে গ্যাবনকে হারাতে পারলে মরক্কো উপরে চলে আসতে পারে। আফ্রিকা থেকে শুধু গ্রুপ চ্যাম্পিয়নরাই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা পাবে।