—প্রতীকী চিত্র।
হুগলির মশাট থেকে শিলিগুড়ি!
ভৌগোলিক ম্যাপে দূরত্বটা কয়েকশো মাইলের।
দুই মল্লিক—আজহারউদ্দিন আর সামাদ আলির মধ্যে দূরত্বটা কিন্তু রবিবার হবে মাত্র নব্বই মিনিটের।
অভিন্ন হৃদয় বন্ধু দুই মল্লিক আজ কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে নামবেন একে অন্যেকে হারাতে। ডার্বির মঞ্চে তাঁরা আজ আলাদা শিবিরে। মোহনবাগানের ‘ডার্বি-বয়’ বলা হচ্ছে যাঁকে, সেই আজহার আজ শিলিগুড়ির পয়মন্ত মাঠে ফের নামবেন গোল করার স্বপ্ন নিয়ে। আর চমকপ্রদ ব্যাপার হল আজহার যাতে গোল করতে না পারেন সে জন্য শপথ নিয়ে ফেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের রাইট ব্যাক সামাদ। আজহারকে আটকাতে সামাদই যে খালিদ জামিলের অস্ত্র।
কিন্তু বল পায়ে ছোটবেলা থেকেই মশাট ক্লাবের মাঠেই বেড়ে ওঠা আজহার ও সামাদের। খাওয়া-দাওয়া, ঘুরে-বেড়ানো সব কিছু। কিন্তু দুই প্রধানের বড়দের ভিড়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তারকার আলোয় আসার পর তাদের জীবন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আজহার থাকেন মোহনবাগান মেসে। আর সামাদ ফিরে যান ডানকুনির বাড়িতে। খালিদের টিমের অন্যতম সেরা অস্ত্র সামাদ বলছিলেন, ‘‘এখন রোজ দেখা হয় না। ও তো মেসে থাকে। আবার ওদের মেসে যেতে পারি না বিতর্ক হওয়ার ভয়ে।’’ আর ফিজিও-র কাছে সুস্থ হওয়ার চিকিৎসা নিতে নিতে আজহারের মন্তব্য, ‘‘ছুটি থাকলে দু’জনে একসঙ্গে এখনও অনুশীলন করি মশাটের মাঠে। আমি গ্রামে গেলে ও চলে আসে।’’
কিন্তু রবিবার ডার্বিতে যখন সামাদ ট্যাকল করে আটকাতে চাইবেন আপনাকে? মুখচোরা আজহারের জবাব, ‘‘সেটা তো খেলার ব্যাপার। ওখানে তো জিততেই হবে। বন্ধুত্ব করলে কী চলে।’’ আর সামাদ কয়েকদিন আগেই আনন্দবাজারের তারার খোঁজের সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আজহারকে আমি খেলতে দেব না। ডার্বি জেতা আমার বহুদিনের স্বপ্ন। সেখানে ও আমার শত্রু।’’ এ দিন অবশ্য টিম বাসে ওঠার আগে কোচের চোখ রাঙানি এড়িয়ে বললেন, ‘‘আমি সে দিন ঠিক ওভাবে বলতে চাইনি। উত্তেজনায় বেরিয়ে গিয়েছিল। ওকে দু:খ দিতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছিলাম আজহার খেললেও ম্যাচটা আমরা জিতব।’’
ডার্বি তে নামলেই গোল করছেন আজহার। গত এপ্রিলে শিলিগুড়িতে গোল করে সঞ্জয় সেনের মোহনবাগানকে জিতিয়েছিলেন আই লিগে। কয়েকদিন আগে কলকাতা লিগের মিনি ডার্বিতে মহমেডানের বিরুদ্ধে মোহনবাগান যখন ০-১ পিছিয়ে তখন জোড়া গোল করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন দরিদ্র পরিবারের সোনার ছেলে। সেই থেকেই তিনি ডার্বি-বয়। বিশেষজ্ঞরা যাঁকে বলছেন ঈশ্বরদত্ত প্রতিভা অথবা সহজাত প্রতিভা। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম তাঁর চেনা মাঠ। সাইতে থাকার সময় আড়াই বছর শিলিগুড়িই ছিল তাঁর ঠিকানা। মোহনবাগান কর্তারা তাঁকে আগলে রাখেন সবসময়। বাগানের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি রয়েছে তাঁর। রুম মেট হিসাবে তাঁর সঙ্গে বরাবরই রাখা হতো সনি নর্দেকে। সনি নানাভাবে আজহারকে বোঝাতেন এতদিন। এখন সনি নেই, তাই তাঁকে শিলিগুড়ির হোটেলে বিদেশি স্টপার কিংগসলের সঙ্গে রাখা হয়েছে এক ঘরে। যাতে প্রতিশ্রুতিমান এই অ্যাটাকিং মিডিও তারকাদের পাশে থেকে শেখেন। আজহার এ দিন পর্যন্ত হাইতি থেকে সনির ফোন পাননি। বললেন, ‘‘না, যোগাযোগ হয়নি। সনিদার ফোন নম্বরটা জানি না। আমার ফোন বন্ধ করে রাখি। সামাদের সঙ্গেও কথা হয় নি।’’ সাদামাটা ছেলেমানুষ ভাব এখনও যায়নি। নিপাট একটা বন্ধুত্বের ভালবাসাও বেরিয়ে আসে সামাদের জন্য।
আজহারের মতো সামাদও মাটির কাছাকাছি এখনও। খুব কম টাকা পান ক্লাব থেকে। গাড়ি নেই। ট্রেনেই বাড়ি থেকে যাতায়াত। ডার্বি মিটে গেলে আবার তাঁরা নামবেন মশাটের মাঠে। গ্রামের মাটির গন্ধে জমে উঠবে বন্ধুত্ব। আপাতত ওরা সেবক রোডের দুই হোটেলে একে অন্যের দলকে হারানোর স্বপ্নে বিভোর। বাঙালির আবেগের ডার্বিতে যে বন্ধুত্বের কোনও জায়গা নেই তা অবশ্য বুঝে গিয়েছেন ওঁরা।