সরকারি ভাবে স্বীকৃত টুনার্মেন্ট হয়ে গিয়েছে আইএসএল।
দুই প্রধান আই লিগ খেলতে চাইছে। কী ভাবে দুটো লিগের খেলা এক মাঠে হবে তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এটিকে মাঠ চেয়ে চিঠি দিলেও রাজ্য সরকার এখনও ঘোষণা করেনি যুব বিশ্বকাপের পর যুবভারতী কার দখলে যাবে!
এই অবস্থায় যুবভারতীতেই ইন্ডিয়ান সুপার লিগের চতুর্থ সংস্করণের উদ্বোধন হবে তার ঘোষণা হয়ে গেল মুম্বইতে। এটিকে কর্তাদের সঙ্গে উদ্বোধন নিয়ে কলকাতায় এসে বার কয়েক আলোচনা করে গিয়েছেন আইএমজি-আরের কর্তারা। কিন্ত সেটা একেবারে গোপনে। দু’পক্ষই ব্যাপারটা চেপে রেখেছেন মাঠ নিয়ে সমস্যা থাকায়। কিন্তু সেটা ফাঁস হয়ে গেল রবিবাসরীয় বিকেলে। নীতা অম্বানীর উপস্থিতিতে নিলাম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঘোষিকা বলে দিলেন, ‘‘আবার মিলিত হব কলকাতায়। ১৭ নভেম্বর উদ্বোধনের দিন। আরও একটা গালা ইভেন্টের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’’ পরে এক আইএমজি-আর কর্তা বললেন, ‘‘কলকাতাতে অনুষ্ঠানটা করতেই হবে। এ বারের আইএসএল শুরুর আগে নতুন টিম নিয়ে সবথেকে বেশি বিতর্ক হয়েছিল ওখানে। আমরা এমন একটা অনুষ্ঠান করব যাতে সব সমালোচনা, বিতর্ক থেমে যায়। ফুটবলপ্রেমীরা মাঠে আসে। তা ছাড়া যুবভারতীর এখন দেশের সেরা স্টেডিয়াম। মাঠ পেতে কোনও সমস্যা হবে না।’’ শোনা যাচ্ছে মাঠ নিয়ে সমস্যা হলে, নীতা অম্বানী নিজেই না কি কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
নিলাম শেষ হওয়ার পর এখন বিভিন্ন স্টেডিয়াম ও উদ্বোধন নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইছেন আইএসএল কর্তারা। নতুন যোগ দেওয়া টাটা গোষ্ঠী এবং বেঙ্গালুরু এফসি-র মালিক জিন্দালদের নিলামের আগে নিজের বক্তৃতায় প্রশংসা করেছেন মুকেশ জায়া। তাতে পরিষ্কার লিগকে আরও আকর্ষণীয় করতে আরও কর্পোরেট সংস্থাকে লিগে সামিল করতে চায় আইএসএল। ঐতিহ্যের ক্লাবের চেয়েও তাদের পছন্দ টাটা-জিন্দালরা। যা ফেডারেশন করতে পারেনি। দেশের ৯৯ শতাংশ ফুটবলারদের নিলাম হচ্ছে চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান করে অথচ সেখানে দেখা যায়নি কোনও ফেডারেশন কর্তাকেই। অম্বানী-ময় অনুষ্ঠানে পাত্তা পাবেন না এই ভয়ে সম্ভবত কেউই পা রাখেননি লোয়ার প্যারেলের পাঁচ তারা হোটেলে। অথচ এ বার থেকে সরকারি ভাবে স্বীকৃত টুনার্মেন্ট হয়ে গিয়েছে আইএসএল। এএফসি কাপে খেলবে এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নরা। এবং সেটা কুয়ালা লামপুরে গিয়ে করে এনেছে ফেডারেশনই। সেই তাদের-ই ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল নিলামের দিন। প্রফুল্ল-কুশলদের একটা ধন্যবাদও দেওয়া হয়নি অনুষ্ঠানে। ভারতীয় ফুটবলের ব্যাটন যে এখন নীতা অম্বানীরই হাতে সেটা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এতে।
নিলামের পর দেখা যাচ্ছে দেশের সব তারকা ফুটবলারই নাম লিখিয়েছেন আইএসএলে। পুরনো চুক্তি থাকায় যেতে পারেননি অর্ণব মণ্ডল, মহম্মদ রফিকের মতো দু’চারজন। নিলাম শেষে সংগঠকদের তরফে অ্যান্ডি নি বলছিলেন, ‘‘জাতীয় দলের ২৮ জন ফুটবলারের মধ্যে ২৫ জন খেলবেন আইএসএলে। সবাই বুঝে গিয়েছে কোথায় খেলতে হবে। যে ৭১ জন পড়ে রইল তাদের জন্য অন্য লিগের রাস্তা খোলা।’’
কেন সুনীল থেকে জেজে, দেবজিৎ থেকে প্রীতম—সবাই আইএসএলের দিকে ঝুঁকছেন? শুধু কী টাকার জন্য? একেবারেই না। নিলামে উপস্থিত দেশের সেরা ২০ ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, বেশি টাকা দিলেও তাঁরা আই লিগে কোনও ক্লাবের হয়ে খেলবেন না। আড়ম্বর, পাঁচ তারা হোটেলে থাকা এবং সুসংগঠিত পেশাদার টুনার্মেন্টে খেলার জন্য শুধু নয়, বিদেশে প্রাক-মরসুম অনুশীলন তাদের কাছে সবথেকে আগে। এবং সেটা বিদেশি পরিকাঠামোয়।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান যা কখনও দিতে পারেনি। মরসুম শুরুর আগে দুই প্রধানের দৌড় ছিল বড়জোর কল্যাণী, দিঘা, দুর্গাপুর বা পুরী। এ বার তো তা-ও হচ্ছে না। সেখানে বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী বলছিলেন, ‘‘আমরা এএফসি কাপের প্রস্তুতির জন্য যাচ্ছি স্পেনে।’’ আর জামশেদপুরের ব্রিটিশ কোচ স্টিভ কপেল বলে দিলেন, ‘‘স্পেনই আমাদের প্রথম পছন্দ।’’ এটিকে কোচ টেডি শেরিংহ্যাম ঠিক করেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনও বড় ক্লাবের পরিকাঠামো ব্যবহার করে ৪০ দিনের প্রাক মরসুম অনুশীলন করবেন। দিল্লি ডায়নামোজ দোহার একটি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করেছে অনুশীলনের জন্য। গোয়া যাচ্ছে পর্তুগালে।
তা হলে কেন সুনীল, মেহতাব, সুব্রত, শৌভিকরা দুই লিগের মধ্যে বাছবেন না আইএসএলকে? ওঁদের নামে ফেসবুকে গালাগাল দিয়ে বা ছড়া লিখে কোনও লাভ নেই। ক্লাব কর্তাদের এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকারই সময়। ঐতিহ্য এবং জার্সি পেশাদার ফুটবলারদের আর টানে না এখন। সেটা ওঁরা বুঝবেন কবে?