ইডেনের পিচ প্রস্তুত করা হচ্ছে। ছবি: এক্স।
এক সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০০ রান মানেই ছিল বিরাট ব্যাপার। এ বারের আইপিএল দেখাল ২০ ওভারে ২৫০ রান তোলা যায়, আবার তা তাড়া করে জেতাও যায়। ইডেনের পিচেই ২৬১ রান করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। যা তাড়া করে জিতেছিল পঞ্জাব কিংস। এখনও পর্যন্ত আট বার ২৫০ রান পার করেছে দলগুলি। সেই রান তাড়া করে কাছাকাছি পৌঁছেও যাচ্ছে বিপক্ষ দল। পিচে বোলারদের জন্য প্রায় কিছু থাকছে না। আইপিএলের সেরা পিচ কোনটি?
এ বারের আইপিএল মোট ১৩টি শহরে খেলা হয়েছে। এর মধ্যে অসমের বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখনও খেলা হয়নি। বাকি ১২টিতে ইতিমধ্যেই একাধিক ম্যাচ হয়েছে। সেই মাঠগুলির মধ্যে দিল্লি, বিশাখাপত্তনম, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদে ২০ ওভারে ২৫০ রান পার করতে পেরেছে দলগুলি। আবার আমদাবাদে ১০০ রানের কমেও আউট হয়েছে দল।
লখনউ সুপার জায়ান্টসের ঘরের মাঠ একানা স্টেডিয়াম। সেই মাঠে ২০০ রানের উপরে উঠেছে এক বারই। সেই মাঠে সব থেকে কম রান করেছিল গুজরাত টাইটান্স। লখনউ সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১৬৩ রান করেছিল। কিন্তু তাড়া করতে নেমে গুজরাত ১৩০ রানে শেষ হয়ে যায়। সেই মাঠে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৩৫ রান করে। লখনউ শেষ হয়ে যায় ১৩৭ রানে। লখনউয়ের কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতে একানার স্টেডিয়ামটের পিচই এ বারের আইপিএলের সেরা। তিনি বলেন, “এ বারের আইপিএলের সেরা পিচটা লখনউয়ের। ব্যাটার এবং বোলার সকলের জন্যই পিচে কিছু না কিছু ছিল। অন্য মাঠগুলোর থেকে এখানে লড়াই বেশি হয়েছে। অনেক মাঠেই এ বছর সব কিছু ব্যাটারদের জন্যই ছিল।”
লখনউয়ের একানা স্টেডিয়াম। —ফাইল চিত্র।
লখনউ যেমন সেরা মাঠ হওয়ার লড়াইয়ে থাকবে, তেমনই থাকবে ইডেন। কলকাতার মাঠেও বোলারেরা সুবিধা পেয়েছেন। এই মাঠে যেমন ২৬১ রান তাড়া করে পঞ্জাব জিতেছে, তেমনই সব ম্যাচেই কাঁটায় কাঁটায় লড়াই হয়েছে। প্রথম ম্যাচেই যেমন কলকাতা ২০৮ রান তুলেছিল। সেই রান তাড়া করতে নেমে হায়দরাবাদ শেষ করে ২০৪ রানে। অর্থাৎ প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। নাইটরা ইডেনে দু’টি ম্যাচ হেরেছিল। একটি পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ২৬১ রান তুলে, অন্যটি রাজস্থানের বিরুদ্ধে। সঞ্জু স্যামসনদের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ২২৩ রান করেছিল কলকাতা। জস বাটলারের শতরানে ভর করে শেষ বলে ম্যাচ জিতেছিল রাজস্থান। আবার এই মাঠেই দিল্লি ক্যাপিটালস শেষ হয়ে যায় ১৫৩ রানে। মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার পিচ প্রস্তুতকারক নাদিম মেমন আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “এ বারের আইপিএলে আমার মতে সেরা ইডেন। সেখানে ব্যাটারেরা যেমন রান করতে পেরেছে, তেমনই বোলারেরা উইকেট পেয়েছে। কোনও পিচে যদি বোলারদের জন্য কিছু না থাকে তাহলে খুব মুশকিল। এ বারের আইপিএলে যে ভাবে রান হয়েছে বিভিন্ন পিচে, তা বোলারদের জন্য খুব একটা ভাল খবর নয়।”
ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে যদিও এ বারের আইপিএলের সেরা মাঠ জয়পুরের। রাজস্থান রয়্যালসের ঘরের মাঠ সেটি। সেই মাঠে কোনও দলই ২০০ রান পার করতে পারেনি। আবার কোনও ম্যাচেই ১৭০ রানের কম হয়নি। সেই মাঠে সব থেকে কম রান উঠেছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচে। রাজস্থান প্রথমে ব্যাট করে ১৮৫ রান করেছিল। কিন্তু ২০ ওভার ব্যাট করেও দিল্লি ১৭৩ রানের বেশি করতে পারেনি। আবার এই মাঠে রাজস্থানের ১৯৬ রানের লক্ষ্য মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে গুজরাত ম্যাচ জিতে নেয়। ১৯৯ রান করেছিলেন শুভমন গিলেরা। মেমনের সঙ্গে একটা বিষয়ে একমত সুজন। তিনি বললেন, “জয়পুরের মাঠটা বেশ ভাল। ওখানে বোলারেরা সুবিধা পেয়েছে। এখন তো বেশির ভাগ মাঠেই সব কিছু ব্যাটারদের জন্য থাকে। জয়পুর ব্যতিক্রম। তাই খেলা দেখতে ভাল লেগেছে ওখানে।”
লড়াইয়ে থাকবে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েও। সেই মাঠে ২০০ রান পার হয়েছে তিন বার। কিন্তু কখনও ২৫০ রান হয়েনি। মুম্বই যথেষ্ট ছোট মাঠ। তার পরেও যে সেখানে ২৫০ রান ওঠেনি, সেটার কারণ পিচ। শুরুতে বোলারেরা সাহায্য পাচ্ছেন। পেসারে শুরুতে উইকেট নিতে পারছেন। আবার ব্যাটারদের জন্য একেবারে কিছু নেই এমন নয়। কারণ এই মাঠে ১৫০ থেকে ১৯৯ রান উঠেছে ছ’বার। মেমন বললেন, “ওয়াংখেড়ে ছোট মাঠ। সেখানে বোলারেরা সাহায্য না পেলে খেলা দেখতে মজা আসবে না। শুধু ব্যাটারেরা রান করে গেলে খেলায় আনন্দ থাকে না। ব্যাটে, বলে লড়াই হলে তবেই মজা। ওয়াংখেড়েতে সেটা দেখা গিয়েছে।”
বাকি মাঠগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি রান উঠেছে বেঙ্গালুরুর মাঠে। ২৮৭ রান উঠেছিল সেখানে। বেঙ্গালুরুর মাঠ ছোট এখানে সব সময়ই বড় রান ওঠে। এ বারেও ব্যতিক্রম নয়। দু’বার ২৫০ রানের বেশি উঠেছে। ১৭০ থেকে ২০০ রানের মধ্যে রয়েছে ছ’টি ইনিংস। ব্যাটারদের কাছে স্বর্গ হয়ে উঠেছিল বেঙ্গালুরু। এখনও ম্যাচ বাকি রয়েছে সেই মাঠে।
আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। —ফাইল চিত্র।
অতীতে বোলারেরা সুবিধা পেতেন চেন্নাইয়ের মাঠে। কিন্তু এ বারে দেখা গেল সেই মাঠে ২০০ রান উঠেছে চার বার। ১৭০ থেকে ১৯৯ রান উঠেছে দু’বার। ১৫০ রানের কমে থামতে হয়েছে ছ’বার। সুজন বললেন, “ওরা নতুন করে পিচ তৈরি করেছে। সেই কারণেই পিচের চরিত্র কিছুটা বদল হয়েছে।”
তবে প্রশ্ন উঠেছে আমদাবাদের পিচ নিয়ে। সেই মাঠে কখনও একটি দল শেষ হয়ে গিয়েছে ৮৯ রানে। আবার কখনও সেই মাঠেই উঠেছে ২৩১ রান। বৃষ্টির কারণে একটি ম্যাচ খেলা হয়নি। তবে সেই মাঠের নিকাশি ব্যবস্থা খুব ভাল নয়। গত বারের আইপিএল ফাইনাল আয়োজন করতে গিয়ে মুখ পুড়েছিল আমদাবাদের। বৃষ্টি থামার পরেও খেলা শুরু করা যায়নি। এ বারের আইপিএলেও তেমন পরিস্থিতি হতে পারত। সুজন বললেন, “ওদের মাঠকর্মীরা তেমন অভিজ্ঞ নন। সেই কারণেই এমন হচ্ছে বলে মনে হয়।”
এ বারের আইপিএলে সেরা মাঠ হওয়ার লড়াইয়ে রয়েছে ১৩টি শহর। ১০ দলের লড়াই যে মঞ্চগুলিতে হয়েছে, তাদের মধ্যে কে সেরা হবে তা সময় বলবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লখনউ, জয়পুর, মুম্বই এবং কলকাতার মাঠে খেলা দেখে আনন্দ পাওয়া গিয়েছে। এঁদের মধ্যে কোনও মাঠ সেরা হয় কি না সেই দিকে নজর থাকবে।