সঙ্কল্প: প্রথম ম্যাচ থেকেই উইকেট তুলতে চান কুলদীপ। ফাইল চিত্র
ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের জার্সিটা টেনে ধরে একটু আফসোসের সুরেই বলে উঠলেন, ‘‘দেখেছেন, কতটা ঢিলে হয়ে গিয়েছে এ বার।’’
কেন? কেকেআরের নতুন জার্সি বানানোর আগে কি সাইজটা মাপা হয়নি? এক বছর আগে তাঁর জন্য বরাদ্দ ছিল ‘এল’ সাইজ। এ বার এসেছে ‘এম’। কিন্তু তাতেও ফিট করেনি ঠিক মতো।
আসলে কুলদীপ যাদব এখন ওজন কমিয়ে অনেক ছিপছিপে, অনেক ধারালো। কুলদীপ যাদব এখন টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়া এক বিরল প্রকৃতির বোলার, যিনি আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছেন। চাবুকের মতো চেহারাই হোক বা হাঁটা-চলা, সব কিছুতেই ধরা পড়ছে সেই আত্মবিশ্বাসী মনোভাব।
সেটা ফুটে বেরোচ্ছে তাঁর কথাতেও। বৃহস্পতিবার রাজকোটে টিম হোটেলের দোতলায় বসে যখন আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলছেন, পাশের বন্ধ দরজার ও-পাশে গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে আলাদা করে টিম মিটিংয়ে বসেছেন জাক কালিস। আর বাইরে বসে তাঁদের অন্যতম সেরা অস্ত্র বলছেন, ‘‘জানি, টেস্ট ক্রিকেট আর আইপিএল দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা। জানি, লাল বল আর সাদা বলে তফাত আছে। কিন্তু এটাও জানি যে, আমার মানিয়ে নিতে কোনও সমস্যা হবে না। যে ভাবে টেস্টে বল করে এসেছি, সে ভাবেই এখানে বল করব।’’
বলেন কী, তার মানে তো ফ্লাইটেড ডেলিভারি! আপনি যতই চায়নাম্যান বোলার হোন, ব্যাটসম্যানদের যতই সমস্যা হোক আপনাকে বুঝতে, টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত ফ্লাইট করানো মানে তো স্ট্রোক খেলারও বড় সুযোগ করে দেওয়া। কুলদীপ যেন সত্যিই ‘কুল’। বলে উঠলেন, ‘‘ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আমি ভাবি না। আমি ভাবি, নিজের শক্তি নিয়ে। ঠিক জায়গায় ফ্লাইটেড বল রাখতে পারলে উইকেট আসবেই। তা উল্টো দিকে যে-ই থাকুক না কেন।’’
আইপিএলের দশ নম্বর বছরে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অভিযান শুরু হচ্ছে যে টিমটার বিরুদ্ধে, তাদের শুরুতেই রয়েছেন প্রাক্তন এক নাইট। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম উল্টো দিকে থাকলেও আপনি ফ্লাইট করাবেন? ভয় পাবেন না? দেখা গেল, ভারতের নতুন ক্রিকেট প্রতিভা শুধু ‘কুল’ই নন, রীতিমতো ডাকাবুকোও। বলে দিলেন, ‘‘বল ফ্লাইট করানোটা আমার একটা শক্তি। ফ্লাইট করালে টার্ন পাব, ব্যাটসম্যানকে বোকা বানানো যাবে। উল্টো দিকে ম্যাকালাম থাকলেও তাই নিজের স্ট্র্যাটেজি বদলানোর কোনও প্রয়োজন দেখছি না।’’
ম্যাকালামকে ভয় না পেলেও ঘনঘন একান্ত সাক্ষাৎকারের যে সব অনুরোধ আসছে, তাতে রীতিমতো বিপর্যস্ত এই চায়নাম্যান বোলার। কোথাও কোথাও অনুরোধের সঙ্গে আগাম প্রশ্নপত্রও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন, টেস্ট দলে আপনি সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু কেকেআরের প্রথম এগারোয় থাকবেন? গৌতম গম্ভীর রাখবেন আপনাকে? প্রশ্ন পড়ে আঁতকে উঠলেন কুলদীপ, ‘‘মারোগে কেয়া? আমাকে টিকতে দেবে না দেখছি।’’
কুলদীপকে ‘মারতে’ পারে আরও একটা ব্যাপার। আইপিএলের পিচ। সাধারণত একেবারে পাটা হয়। কিন্তু এ বার কিছু কিছু কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে, পিচের চরিত্র বদলাচ্ছে। ইডেনের উইকেটই হয়তো আর স্লো টার্নার হবে না। গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে যে পিচে খেলা হবে, সেখানেও ঘাসের আভা। উইকেটে ঘাস থাকলে সমস্যায় পড়বেন না?
কুলদীপ একটু হাসলেন। ‘‘ছোটবেলায় আমি কোন উইকেটে খেলে বড় হয়েছি জানেন? সিমেন্টের উইকেট। বুঝে দেখুন তা হলে। সেখানেও আমি টার্ন পেয়েছি, উইকেট পেয়েছি। তা হলে এখন উইকেট নিয়ে মাথা ঘামাব কেন? আমি দেখেছি, উইকেট নিয়ে বেশি ভাবলে নিজের বোলিং থেকে ফোকাসটা সরে যায়। সেটা আমি হতে দিতে চাই না। আমি আমার শক্তি অনুযায়ী বল করব।’’
তবে একটা জিনিস চান কুলদীপ। ভিআইপি স্ট্যান্ডে শাহরুখ খান বসে আর তিনি একটার পর একটা উইকেট পাচ্ছেন। কিংগ খানের সামনে টিমের ‘বাজিগর’ হয়ে উঠতে। ‘‘শাহরুখ ভাইয়ের মতো মোটিভেটর হয় না। আমি যখনই সফল হয়েছি, আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। টুইট করেছেন, টেক্সট করেছেন, ফোন করেছেন। তাই ওঁর সামনে পারফর্ম করার মজাই আলাদা।’’
সেই সুযোগটা কিন্তু শুক্রবারই পেয়ে যেতে পারেন কূলদীপ যাদব।