আগ্রাসী: ইডেনে ক্রিস ওক্সদের দুরন্ত বোলিংয়ে জয় নাইটদের। ফাইল চিত্র
রবিবার রাতে বিরাট কোহালির উত্তেজিত মুখটা দেখতে দেখতে এক জনের কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছিল। তার নাম সচিন তেন্ডুলকর। ইডেনের সাইটস্ক্রিনটা নিয়ে সচিনের খুব সমস্যা হতো। আসলে এখানকার সাইটস্ক্রিনটা উচ্চতায় একটু ছোট। তাই অনেক ব্যাটসম্যানই সমস্যায় পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই সমস্যা মেটানোর জন্য সিএবি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের সময় সাইটস্ক্রিনের ঠিক ওপরে লোয়ার টিয়ারের কয়েকটা রো-এর টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়। তাই সাইটস্ক্রিনের ঠিক ওপরটা ফাঁকাই থাকত।
কিন্তু আইপিএলে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। রবিবারের ম্যাচটায় তো ইডেন পুরোপুরি ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। ফলে সমস্যাটা হচ্ছে। স্ট্রাইক নেওয়ার সময় নড়াচড়ায় বিরাটের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। না হলে বিরাটের কোনও প্রয়োজন পড়েনি আউট হয়ে এ সব অভিযোগ করার। তবে আমি একটা কথা বলতে চাই। যে সমস্যাটা বিরাটের হয়েছে, সেটা কেকেআরের কোনও ব্যাটসম্যানেরও হতে পারে। ক্রিকেট এক বলের খেলা। একটা বল ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। টিকিট বিক্রি করার সময় কেকেআর কর্তৃপক্ষ যেন ব্যাপারটা মাথায় রাখে।
কিন্তু বিরাটের আউটই কি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর-কে হারিয়ে দিয়ে গেল? একদমই না। কেকেআর-কে জেতাল ওদের পেস আক্রমণ। কেকেআরের তিন বিদেশি ফাস্ট বোলারের উচ্চতাই খুব ভাল। ফলে বাউন্সটা পাচ্ছিল। গতিও আছে। সব মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলে দিতে পেরেছিল। আর একটা ব্যাপার বলতেই হবে। বিরাটকে কিন্তু অনেক হোমওয়ার্ক করে আউট করেছে কেকেআর। ওরা জানত, বিরাটের প্রথম দিকে শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করার প্রবণতা আছে। সেই মতো মণীশ পাণ্ডে-কে একটু ওয়াইডিশ সেকেন্ড স্লিপে রেখেছিল। ক্যাচটাও ঠিক ওখানে গেল।
আরও পড়ুন: ইডেন পিচের গতিই চমকে দিয়েছিল ডিভিলিয়ার্সদের
আমাকে অবাক করেছে, ক্রিস গেলের ব্যাটিং। দেখে মনে হচ্ছিল টেস্ট খেলছে। আসলে গেলের বয়সটা হচ্ছে। রিফ্লেক্সও কমেছে। ভাল গতির সামনে পড়লে ও আর সে রকম স্বচ্ছন্দে থাকবে না। ইডেনে যেটা দেখা গেল।
কেকেআর পেস আক্রমণের মধ্যে তিন বিদেশিই তিনটে করে উইকেট তুলল। উমেশ যাদব একটা পেয়েছে। কিন্তু আমি বলব, বোলিং স্কিলের দিক দিয়ে সেরা উমেশই। বোলিং স্কিল বলতে আমি বোঝাচ্ছি, গতি, সুইং, বাউন্সার, স্লোয়ার, স্লোয়ার বাউন্সার— এ সব কিছুই ঠিক মতো করার ক্ষমতা। যেটা উমেশের মধ্যে আছে।
চোট সারিয়ে ফিরে এসে নেথান কুল্টার নাইল তিনটে ম্যাচের দু’টোতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হল। ছেলেটার গতি আছে, সুইং করাতে পারে। নতুন বলে বেশ ভাল। তবে ক্রিস ওক্স ইংল্যান্ডের পরিবেশে যতটা বিপজ্জনক, ভারতীয় পরিবেশে এখনও ততটা নয়।
এ বারের আইপিএলে তিনটে টিমের পেস বোলিং খুব ভাল। কেকেআর, দিল্লি এবং মুম্বই। কিন্তু দিল্লিতে মহম্মদ শামি এখনও ফিট হয়ে উঠতে পেরেছে বলে মনে হয় না। মুম্বইয়ের লাসিথ মালিঙ্গারও প্রায় একই অবস্থা। মিচেল জনসন এখন আর চার বছর আগের সেই ভয়ঙ্কর জনসন নেই। সোমবারই তো মনোজ তিওয়ারি প্রথম দু’বলেই জনসন-কে হেলায় বাউন্ডারি মেরে দিল।
কিন্তু কেকেআর টিমটাকে দেখুন। ফাস্ট বোলাররা জাতীয় দলের প্লেয়ার। নিউজিল্যান্ডের কলিন গ্র্যান্ডহোমও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে আছে। কুল্টার নাইল চোটের জন্য হয়তো অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পাচ্ছে না, কিন্তু এখন ও ভাল ফর্মে। এর ওপর রিজার্ভ বেঞ্চে বসে আছে ট্রেন্ট বোল্টের মতো ফাস্ট বোলার। সব মিলিয়ে ফাস্ট বোলিংয়ে কলকাতাকে টেক্কা দেওয়ার মতো দল পাচ্ছি না।