প্রতিজ্ঞ: বুধবার ইডেনে প্রস্তুতি শার্দূলের। ছবি:সুদীপ্ত ভৌমিক।
ভারতীয় ক্রিকেটের ‘লর্ড’ তিনি। জুটি ভাঙতে হলেই তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় বল। ব্যাট হাতেও যে ম্যাচ জেতাতে পারেন, তার সাক্ষী রয়েছে ইডেন। আরসিবির বিরুদ্ধে ২৯ বলে ৬৮ রান করে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের কাণ্ডারি হয়ে উঠেছিলেন। তিনি শার্দূল ঠাকুর। শুক্রবার ঘরের মাঠে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। শুধুমাত্র পেসার নয়, অলরাউন্ডার শার্দূল হয়ে ওঠার কাহিনিও তুলে ধরলেন তিনি।
প্রশ্ন: পেসার হিসেবেই আপনি পরিচিত। ফিনিশার শার্দূল হয়ে ওঠার চেষ্টা কবে থেকে শুরু হল?
শার্দূল: ব্যাটসম্যান হিসেবে ছোটবেলা থেকে একাধিক ইনিংস খেলেছি। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ক্রিকেটে এত দিন নিজের এই প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাইনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা এবং এত দিন ধরে আইপিএল খেলার সুবাদে সকলকে বোঝাতে পেরেছি, ব্যাটসম্যান হিসেবেও আমি সফল হতে পারি। ধন্যবাদ দেব কেকেআর-কে। আমার উপরে তারা আস্থা রেখেছে। বিশ্বাস করেছে, আমি ব্যাট হাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারি।
প্র: নিজেকে পেসার শার্দূল হিসেবে পরিচয় দিতে চাইবেন না কি অলরাউন্ডার শার্দূল হিসেবে?
শার্দূল: অবশ্যই অলরাউন্ডার শার্দূল হিসেবে। কারণ, ব্যাটিংকে উন্নত করতে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি।
প্র: আরসিবির বিরুদ্ধে ২৯ বলে ৬৮ রানের ইনিংস কি ক্রিকেট জীবনের শ্রেষ্ঠ ইনিংস?
শার্দূল: এখনও পর্যন্ত আরসিবির বিরুদ্ধে ইনিংসই ক্রিকেট জীবনের শ্রেষ্ঠ। তবে এখনও সেরা ব্যাটিং উপহার দেওয়া বাকি রয়েছে। ভবিষ্যতে দেখুন কী হয়।
প্র: সিএসকে-র হয়ে দীর্ঘ দিন খেলেছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কোনও পরামর্শের কথা মনে পড়ে, যা আপনাকে উন্নত হতে সাহায্য করেছে?
শার্দূল: মাহি ভাই প্রত্যেক ক্রিকেটারকে নিজের সেরাটা তুলে ধরার স্বাধীনতা দেয়। পরিস্থিতি যে রকমই হোক, কখনও বলে না কোন জায়গায় বল করা উচিত, অথবা কী ভাবে ইনিংস সাজানো দরকার। সকলকে বলে দিত, নিজেদের মতো করে ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনা করো। ফল আসবেই। তার পরেও যদি কেউ ভুল করে, তখন মতামত দেয়। একজন ক্রিকেটারের উন্নতি তখনই হয়, যখন সে স্বাধীন ভাবে চিন্তাভাবনা করে। মাহি ভাইয়ের থেকে শিখেছি, দায়িত্ব কী ভাবে নিতে হয়। তাই মাহি ভাইয়ের নেতৃত্বে অনেক অজানা ক্রিকেটারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্র: লর্ড শার্দূল হিসেবে আপনি এখন বেশি পরিচিত। জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণই কি এই নামকরণ?
শার্দূল: নিজের বিষয়ে ভাল কিছু শুনতে কার না ভাল লাগে। সমাজমাধ্যমে আগে এই নাম নিয়ে বহু ‘মিম’ তৈরি হয়েছে। এখন উপাধি হয়ে গিয়েছে। আমার ভালই লাগে। তবে জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ অবশ্যই আমার পারফরম্যান্স।
প্র: রাসেলের মতো অলরাউন্ডার কেকেআর শিবিরে রয়েছেন। তাঁর কোনও পরামর্শ কি আপনাকে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে?
শার্দূল: রাসেলের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কোনও কথাই হয় না। মাঠের বাইরে আমরা সকলে বন্ধু। আপনারাও নিশ্চয়ই কর্মক্ষেত্রের বাইরে কাজ নিয়ে কথা বলেন না। রাসেলের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর মজাই অন্য রকম।
প্র: রিঙ্কুর ইনিংস দেখে ক্রিকেটবিশ্ব মুগ্ধ। ডাগ-আউটে বসে আপনাদের অবস্থা কী রকম হয়েছিল?
শার্দূল: বিশ্বাস করুন, আমি এখনও ভাবতে পারছি না, কী দেখলাম। অবিশ্বাস্য! এটাই আইপিএল। অকল্পনীয় সব ইনিংস এখানে দেখা যায়। যাকে কেউ চেনে না, তাকে জনপ্রিয় করে তোলে আইপিএল। ওটা ক্রিকেট ছিল না, ছিল ম্যাজিক। ক্রিকেটপ্রেমীরা এ বার বিশ্বাস করবেন, শেষ ওভারে ২৯ রান বাকি থাকলেও তা তুলে দেওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র রিঙ্কুর পুনর্জন্ম হয়নি, ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায় তৈরি হয়েছে।
প্র: আরসিবি ম্যাচ শেষে শাহরুখ খান আপনার সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে কোনও বিশেষ মুহূর্ত কি বলতে চাইবেন?
শার্দূল: এসআরকের সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটি সেকেন্ড আমার মনে থাকবে। আমার ইনিংসের প্রশংসা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও এমন অনেক প্রশ্ন করেছেন, যা বলতে চাই না (হাসি)। এমনও অনেক ক্রিকেটার আছে যারা এখনও খেলেনি। তাদের সঙ্গেও একই ভাবে হেসে কথা বলেছেন। ওঁর মতো মেগাস্টার নাম ধরে কথা বললে গায়ে কাঁটা দেয়।
প্র: কেকেআর কি আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে?
শার্দূল: একশো শতাংশ নিশ্চিত। দল কোনও একজনের উপরে নির্ভর করে না। এটাই ভাল দলের উদাহরণ। কেকেআর চমক দেবেই।