নজরে: পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন রাসেল। কেকেআর টুইটার
ঢাকে পড়েছে কাঠি, আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে মণ্ডপ, মা এসেছেন ঘরে। কলকাতা জুড়ে এখন উৎসবের মেজাজ। প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন পূজা পরিক্রমায়। তারই মধ্যে কেউ চোখ রাখছেন মোবাইলে, কেউ আবার টিভির দোকানের সামনে উঁকি মেরে দেখে নিচ্ছেন স্কোর কত!
দুর্গাপুজোর মাঝেও আইপিএল নিয়ে উন্মাদনা থামছে না বাঙালির। থামবেই বা কী করে? কলকাতা নাইট রাইডার্স যে এ বার প্লে-অফে। আজ, সোমবার এলিমিনেটরে তাঁদের প্রতিপক্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে অধিকাংশই নাইটদের সমর্থক। অনেকে আবার আরসিবি-র জার্সিতে অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহালির শেষ মুরসুমে তাঁর হাতে ট্রফি দেখতে চান। দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন ঠাকুর আনতে যাওয়ার মাঝেই পাড়ার কাকুদের মধ্যে তর্ক তুঙ্গে। কেউ বলছেন, ‘‘আন্দ্রে রাসেল ফিরলে বিরাটকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’ কারও মত, ‘‘রাখো রাসেল। ম্যাক্সওয়েল আর ডিভিলিয়ার্স মিলিয়ে প্রথম দফায় কেমন চমক দিয়েছিল?’’ কেউ আবার বলে উঠলেন, ‘‘এত আগের কথা শুনিয়ে লাভ কী? শেষ বারের সাক্ষাতের স্কোরটা মনে আছে তো?’’ এ ধরনের আলোচনাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে, আরসিবি-কেকেআর ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে।
সমর্থকদের উন্মাদনাই অনুপ্রেরণা সি ভি বরুণ, সুনীল নারাইনদের। ম্যাচের আগের দিন বোলিং কোচ কাইল মিলসের সঙ্গে বিশেষ ক্লাসে মগ্ন ছিলেন নাইটদের স্পিনাররা। শারজায় শুকনো পিচে কী ভাবে বিরাট-বাহিনীকে বিপাকে ফেলা যায়, তার ছক তৈরি করা হয়েছে দু’দিন ধরে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের রিভার্স স্লগ সুইপ, এবি ডিভিলিয়ার্সের রিভার্স স্কুপ, স্লগ সুইপ আটকানোর অঙ্কও কষে ফেলেছেন নারাইন-বরুণরা। ছোট মাঠে যতটা সম্ভব ফ্লাইট কম দিয়ে বল করার প্রস্তুতি চলেছে। বল অতিরিক্ত ঘোরানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। জোরের উপরে স্পিন করার চেষ্টা করলেই যে পিচ থেকে সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, সেই অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে ফেলেছেন তাঁরা। রান আটকানোই মূল লক্ষ্য। ব্যাটাররা ভুল শট খেললে উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। বরুণ ও নারাইনের খেলা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তবে শাকিব আল হাসানকে প্রথম একাদশে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আন্দ্রে রাসেল পুরোপুরি ফিট হয়ে গেলে শাকিবকে বাইরে বসতে হতে পারে। রবিবার কেকেআর ওয়েবসাইটে অধিনায়ক অইন মর্গ্যান বলেছেন, “রাসেল প্রত্যেক দিন উন্নতি করছে। ওর প্রতি আমাদের নজর রয়েছে। তবে রাসেল কতটা ম্যাচ খেলার জন্য সুস্থ, সেটা নিয়ে কথা বলতে হবে চিকিৎসকদের সঙ্গে। সোমবার ওকে দেখে নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
তবে ম্যাচের আগের দিন নাইট শিবিরে শাকিবের থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শাকিবকে নির্দেশ দিয়েছিল রবিবারই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার। তবে বাংলাদেশ দলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এখনও পর্যন্ত শাকিব যোগ দেননি। মর্গ্যান বলেছেন, “শাকিবও দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমি তো মনে করি, বিশ্বকাপের আগে ভাল প্রস্তুতি হয়ে যাচ্ছে ওর।”
শারজার মাঠ ছোট হলেও সব চেয়ে বড় পরীক্ষা ব্যাটারদের। মন্থর পিচের সঙ্গে কেকেআর ব্যাটাররা সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। শেষ ম্যাচে শুভমন গিল ও বেঙ্কটেশ আয়ার প্রমাণ করেছেন মন্থর পিচেও তাঁরা কতটা সাবলীল। আরসিবির বিরুদ্ধেই দ্বিতীয় দফার প্রথম ম্যাচে নাইটদের নতুন ওপেনিং জুটি বিস্মিত করে ক্রিকেটবিশ্বকে। এলিমিনেটরের আগেও তাঁরাই ব্যাটিং বিভাগের মূল স্তম্ভ। তিন ও চার নম্বরে আসা রাহুল ত্রিপাঠী ও নীতীশ রানার উপরেও নির্ভর করছে দল। এলিমিনেটরে নামার আগে তাই ব্যাটারদের নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি সারল কেকেআর। প্র্যাক্টিস পিচে তিন দিন জল না দিয়ে একেবারে শুষ্ক করে দেওয়া হয়। তাতেই চলে ব্যাটারদের মহড়া।
মর্গ্যানের বলতে দ্বিধা নেই, ‘‘উপরের সারির ব্যাটাররাই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে। অবশ্যই চাইব, এই ছন্দ যেন চলতে থাকে।’’ মহাষষ্টীর রাতে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর পরীক্ষা এ বার মর্গ্যানদের।