ঘাতক: ২০ রানে তিন উইকেট নিলেন হরভজন সিংহ। এপি
এই হচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি! আইপিএলে ও যে কখন কী চমক দেবে তা কেউ জানে না! যেমন শনিবার দেখাল এ বারের আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে।
ধোনির প্রথম চমকটা ছিল—চার জনের বদলে তিন জন বিদেশিকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়া। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মাঠের বাইরে রেখেছিল স্যাম বিলিংস, ফ্যাফ ডুপ্লেসি, মিচেল স্যান্টনার ও ডেভিড উইলিকে। দ্বিতীয় চমকটা সাড়ে তিন জন স্পিনার—হরভজন সিংহ, রবীন্দ্র জাডেজা, ইমরান তাহির। সঙ্গে সুরেশ রায়নাকে নিয়ে মাঠে নামা।
এ রকম শান্ত ও ধুরন্ধর ক্রিকেট মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়েই আরসিবি-কে সাত উইকেটে হারিয়ে এ বারের আইপিএলে প্রথম ম্যাচ জিতে নিল চেন্নাই সুপার কিংস। তাও আবার ১৪ বল বাকি থাকতে।
স্লো-টার্নার পিচ হওয়ায় ধোনির দলে সাড়ে তিন জন স্পিনার রাখার বিষয় বোঝা গিয়েছিল। আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কেন যুজবেন্দ্র চহাল, মইন আলির সঙ্গে ওয়াশিংটন সুন্দরকে ব্যবহার করল না সেটা বুঝতে পারলাম না।
ধোনি তৃতীয় চমকটা দিয়েছিল, দ্বিতীয় ওভারে হরভজনকে বল করতে ডেকে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্পিনার দিয়ে শুরু করতে গেলে যে কোনও অধিনায়ক তার দলের প্রধান স্পিনারকে দিয়েই শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে ইমরান তাহিরকেই ডাকার কথা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ধোনি বল দিল হরভজন সিংহকে (৩-২০)। তার পরে পাওয়ার প্লে শেষ হতেই জাডেজা ও ইমরান তাহিরকে নিয়ে এসে আরসিবিকে ১৭.১ ওভারে ৭০ রানে অলআউট করে দিল। আর ওখানেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচটা। কারণ, ২০ ওভারের ম্যাচে যদি বিপক্ষ নির্ধারিত ওভারের পুরোটা না খেলে ৭০ রানে আউট হয়ে যায়, তা হলে সেখানেই প্রতিপক্ষ মানসিক ভাবে ম্যাচটা আগেই জিতে নেয়। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।
স্কোরকার্ড
আরসিবি ৭০ (১৭.১)
সিএসকে ৭১-৩ (১৭.৪)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর
কোহালি ক জাডেজা বো হরভজন ৬ ১২
পার্থিব ক কেদার বো ব্র্যাভো ২৯ ৩৫
মইন ক ও বো হরভজন ৯ ৮
এ বি ক জাডেজা বো হরভজন ৯ ১০
হেটমায়ার রান আউট ০ ২
শিবম ক ওয়াটসন বো তাহির ২ ৫
গ্র্যান্ডহোম ক ধোনি বো জাডেজা ৪ ৬
সাইনি ক ওয়াটসন বো তাহির ২ ৩
চহাল ক হরভজন বো তাহির ৪ ১২
উমেশ বো জাডেজা ১ ১০
সিরাজ ন. আ. ০ ১
অতিরিক্ত ৪
মোট ৭০ (১৭.১)
পতন: ১-১৬ (কোহালি, ৩.৩), ২-২৮ (মইন, ৫.২), ৩-৩৮ (এ বি, ৭.২), ৪-৩৯ (হেটমায়ার, ৭.৬), ৫-৪৫ (শিবম, ৯.২), ৬-৫০ (গ্র্যান্ডহোম, ১০.৩), ৭-৫৩ (সাইনি, ১১.১), ৮-৫৯ (চহাল, ১৩.৪), ৯-৭০ (উমেশ, ১৬.৫), ১০-৭০ (পার্থিব, ১৭.১)।
বোলিং: দীপক চাহার ৪-০-১৭-০, হরভজন সিংহ ৪-০-২০-৩, সুরেশ রায়না ১-০-৬-০, ইমরান তাহির ৪-১-৯-৩, রবীন্দ্র জাডেজা ৪-১-১৫-২, ব্র্যাভো ০.১-০-০-১।
চেন্নাই সুপার কিংস
ওয়াটসন বো চহাল ০ ১০
রায়ডু বো সিরাজ ২৮ ৪২
রায়না ক শিবম বো মইন ১৯ ২১
কেদার ন. আ. ১৩ ১৯
জাডেজা ন. আ. ৬ ১৫
অতিরিক্ত ৫
মোট ৭১-৩(১৭.৪)
পতন: ১-৮ (ওয়াটসন, ২.১), ২-৪০ (রায়না, ৯.২), ৩-৫৯ (রায়ডু, ১৪.২)।
বোলিং: যুজবেন্দ্র চহাল ৪-১-৬-১, নবনীত সাইনি ৪-০-২৪-০, মইন আলি ৪-০-১৯-১, উমেশ যাদব ৩-০-১৩-০ , মহম্মদ সিরাজ ২-১-৫-১, শিবম দুবে ০.৪-০-৩-০।
হরভজনের সঙ্গে কয়েক দিন আগেই মুম্বইয়ে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে দেখা হয়েছিল। তখনই ওর ফিটনেস ঝালিয়ে নেওয়ার আভাস পেয়েছিলাম। এ দিন ধোনি ওকে প্রথমে এনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল। কারণ, মাঝের ওভারে ওকে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা পাল্টা আক্রমণ করতে পারত। অধিনায়কের সেই আস্থার মর্যাদা ভাজ্জি দিয়েছে। তবে এই পিচেও ধৈর্য ধরে খেললে রানটা ১৪০ থেকে ১৪৫ হতে পারত। কিন্তু সেখানে আরসিবি বড্ড তাড়াহুড়ো করল। একে পিচে বল থমকে আসছে। সঙ্গে ঘূর্ণির প্রকোপ। সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে ভাজ্জি দ্রুত বিরাট কোহালি (৬), মইন আলি (৯), এ বি ডি ভিলিয়ার্সকে (৯) ফিরিয়ে দিল।
মার্চের শেষে গোটা ভারতে পিচ শুষ্ক। সঙ্গে আর্দ্রতা থাকবে। ফলে আমার মতে, এ বারের আইপিএলে বিদেশি ব্যাটসম্যানেরা হয়তো সুবিধা করতে পারবে না। কামাল করবে হয়তো স্পিনাররাই। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চেন্নাইয়ের এই পিচ কাম্য নয়।