অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’ বলা হচ্ছে এই তরুণ ক্রিকেটারকে।
চলতি বছরে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে চমৎকার খেলছেন পৃথ্বী শ নামের এই তারকা। স্কোয়ার অব দ্য উইকেট কিংবা ব্যাকফুটে তিনি রাজা হয়ে উঠতে পারেন, বলছেন বিরাট কোহালি, সচিন থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অলরাউন্ডার কার্ল হুপারও।
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ওপেনার হিসেবে টেস্ট অভিষেক হয় পৃথ্বী শয়ের। ১৮ বছর ৩২৯ দিনে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রাজকোটে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্রুততম শতকের দিক থেকে এটি তৃতীয়। শিখর ধওয়ন ও ডোয়েন স্মিথ রয়েছেন তাঁর আগে।
মুম্বইয়ে জন্ম হলেও বিহারের গয়ার মানপুরের শিবচরণ লেনের বাসিন্দা সাউ পরিবারের সন্তান পৃথ্বী। সেখানেই কাপড়ের দোকান রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকার দাদু অশোক শ-র।
পঙ্কজ শ-ও কাপড়ের ব্যবসা করতে নব্বইয়ের দশকে গয়া ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন। মুম্বইয়ের বিরার এলাকায় তাঁর ব্যবসা। সেখানেই ১৯৯৯ সালে জন্ম পৃথ্বীর। চার বছর বয়সে মা মারা যায় তাঁর।
ছেলেকে একাই মানুষ করেছেন পঙ্কজ। বছরে এক বার ছেলেকে নিয়ে গয়াতে মা-বাবার কাছে আসেন তিনি। পঙ্কজের বাবা অশোকবাবু এবং মা রামদুলারিদেবী এখনও গয়াতেই থাকেন।
মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সফর করে বাবার সঙ্গে বান্দ্রায় অনুশীলনে যাওয়া ও ফেরা ছিল পৃথ্বীর বাবার রুটিন। ছেলের সঙ্গে থেকে যাতে তাকে সারা দিন ক্রিকেটের মধ্যে রাখতে পারেন, সে জন্য নিজের চলতি ব্যবসাটাও বন্ধ করে দেন পৃথ্বীর বাবা।
প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটেয় যাকে উঠতে হত ঘুম থেকে। ধরতে হত সকাল ৬টার ট্রেন, তাঁর কাছে এ কোনও ব্যাপারই না।বান্দ্রার এমআইজি মাঠে স্কুলের ব্যাগ ও ক্রিকেট ব্যাগ নিয়ে অনুশীলনে পৌঁছতেন পৃথ্বী।
পৃথ্বীর অধিনায়কত্বেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে ফিরেছিল ভারত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাঁচ ইনিংসে ৬৫.২৫ গড়ে ২৬১ রান করেন। এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে যা সর্বাধিক রান। পৃথ্বীর পিছনে রয়েছেন উন্মুক্ত চাঁদ, বিরাট কোহালি ও পার্থিব প্যাটেল।
২০১০ সালে প্রাক্তন জাতীয় স্পিনার নীলেশ কুলকার্নি প্রথম পৃথ্বীর মধ্যে আবিষ্কার করেন প্রতিভা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১। নীলেশের স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি তাঁকে বার্ষিক তিন লক্ষ টাকার স্টাইপেন্ড দিতে শুরু করে। পরে সান্তাক্রুজে বাবা-ছেলেকে ফ্ল্যাট দেন একজন। যাতায়াতের সময় ও ধকল বাঁচে।
২০১৩ সালে হ্যারিস শিল্ডে রিজভি স্প্রিংফিল্ড স্কুলের হয়ে ১৪ বছর বয়সে ৩৩০ বলে ৫৪৬ রানের ইনিংস খেলেন পৃথ্বী। যা স্কুল ক্রিকেটে কোনও ভারতীয়ের সর্বাধিক রান ছিল। এটা যে কোনও পর্যায়ের সংগঠিত ম্যাচে চতুর্থ-সর্বাধিক রান ছিল। ২০১৬ সালে প্রণব ধানাওয়াড়ে ভেঙে দেন সেই রেকর্ড।
২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। রঞ্জি সেমিফাইনালে বিপক্ষে ছিল তামিলনাড়ু। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে শতরান করেন তিনি। জেতান মুম্বইকে।
দলীপ ট্রফিতেও অভিষেকে করেন শতরান। স্পর্শ করেন সচিনের রেকর্ড। সচিনও রঞ্জি ও দলীপের অভিষেকে করেছিলেন শতরান। ১৭ বছর বয়সে দলীপে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই শতরানের রেকর্ডও গড়েন। এই রেকর্ডে ছাপিয়ে যান সচিনকে।
২০১৮ সালের আইপিএলে সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে যুগ্মভাবে আইপিএলে কনিষ্ঠতম হিসেব পঞ্চাশ করেন তিনি। সে বছর ১.২ কোটি টাকায় কেনা হয়েছিল তাঁকে। চলতি বছরে মেন্টর দাদার দল দিল্লি ক্যাপিটালসে খেলছেন তিনি।
ক্রিকেট ছাড়াও স্নুকার খেলতে ভালবাসেন পৃথ্বী। ‘বিয়ন্ড অল বাউন্ডারিজ’ নামে একটি তথ্যচিত্রেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।