প্রস্তুতি: বেঙ্গালুরুতে অনুশীলনে উথাপ্পা, কার্তিকেরা। টুইটার
বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের দল। কে জানত, তাঁরাই টানা চার ম্যাচ হেরে আতঙ্কিত হয়ে থাকবে।
আইপিএলের সব চেয়ে কম তারকা থাকা একটি দল। কে জানত, তাঁরাই সফলতম দলগুলির একটি হয়ে থাকবে।
প্রথমটা যে বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, তা বলে দেওয়ার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। দ্বিতীয়টা কলকাতা নাইট রাইডার্স। আজ, শুক্রবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে এই দুই দল মুখোমুখি। চুম্বকে এই লড়াই আরসিবি ব্যাটিং বনাম কেকেআরের স্পিনারদের বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে কোহালি, ডিভিলিয়ার্সরা যে ভাবে লেগব্রেক ও গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে আউট হয়েছেন, তা দেখে নাইটদের খুশি হওয়ার কথা।
তাদের দলে তিন জন ভাল স্পিনার আছেন। সুনীল নারাইন, পীযূষ চাওলা এবং কুলদীপ যাদব। যদিও কোহালি ছন্দে থাকলে স্পিন দিয়ে তাঁকে কাবু করা যাবে কি না, নিশ্চিত নয়। অতীতে কুলদীপকে আক্রমণ করে দিশেহারা করেছেন ডিভিলিয়ার্স। কিন্তু এ বছরে তিনি ফর্মে নেই। তাই কুলদীপের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ হলে কে জেতেন, সেটাও দেখার। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী কোহালি এবং ডিভিলিয়ার্সের জন্য অস্ত্র হতে পারেন পীযূষ। কারণ, দুই ব্যাটিং তারকাকেই গুগলির বিরুদ্ধে দুর্বল দেখাচ্ছে। নারাইন-চাওলা-কুলদীপ ত্রয়ীকে নিয়ে নাইট রাইডার্স কুড়ি ওভারের মধ্যে বারো ওভারই করবেন স্পিনাররা।
আরসিবি চারে চারটিই হেরেছে। নাইটরা তিনটি ম্যাচের দু’টিতে জিতেছে। যে ম্যাচটি হেরেছে, তা-ও গিয়েছিল সুপার ওভারে। কোহালিরা যে প্রবল চাপে, তা জানার জন্য গোয়েন্দা হওয়ার দরকার নেই। তবে আইপিএলে শুরুতে এমন হারের ধাক্কা সামলে ফিরে আসার উদাহরণ আছে। এমনকি, টানা পাঁচটি ম্যাচ হারার পরেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৃষ্টান্তও আছে। কোহালির দল এখান থেকে উপরের দিকে উঠতে পারবে না কি তলিয়ে যাবে, তা সময় বলবে। আপাতত এটুকু বলে দেওয়া যেতেই পারে যে, কোনও কিছুই ঠিক হচ্ছে না তাঁদের। আরসিবি ব্যাটিং চিরকালই বড্ড বেশি কোহালি ও ডিভিলিয়ার্স নির্ভর। এ বারে দুই মহাতারকার ব্যাটেও অন্ধকার। তাঁদের বোলিং বিভাগকেও বেশ দুর্বল দেখাচ্ছে। একমাত্র লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল ছাড়া কেউ তেমন সমীহ আদায় করতে পারছেন কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ নিশ্চয়ই ছেলেদের নিয়ে মন দিয়ে দেখেছেন জাক কালিস। সে দিন ডেভিড ওয়ার্নার এবং জনি বেয়ারস্টোর মতো দুই আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটসম্যানের সামনে পড়ে আরওই নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল আরসিবি বোলিংয়ের। কেকেআর সেই সুবিধে তুলতে সুনীল নারাইন এবং ক্রিস লিনকে দিয়ে ওপেন করিয়ে আক্রমণ করতে পারে। গত বার দু’টো ম্যাচেই এই ওপেনিং জুটি সফল হয়েছিল আরসিবি-র বিরুদ্ধে। নারাইনের চোট থাকায় দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে খেলতে পারেননি। তবে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
তবে এ বারের আইপিএলে কেকেআরের চিন্তার কারণ হচ্ছে, ক্রিস লিনের ছন্দে না থাকা। এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু করতে পারেননি অস্ট্রেলীয় লিন। স্ট্রাইক রেটও পড়ে গিয়েছে মাত্র ৯৪.৯০-তে। নাইটদের স্ট্রাইক রেট সামলানোর জন্য অবস্য থাকছেন আন্দ্রে রাসেল। এ বারের প্রতিযোগিতায় এই মুহূর্তে স্ট্রাইক রেটে শীর্ষে তিনি— ২৪৮.৪৩। অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়েও রাসেল আছেন। রানসংগ্রহকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার (৪ ম্যাচে ২৫৪ রান)। দ্বিতীয় স্থানে হায়দরাবাদেরই জনি বেয়ারস্টো (৪ ম্যাচে ১৯৮)। তিন নম্বরে রয়েছেন রাসেল (৩ ম্যাচে ১৫৯ রান)। শুধু তা-তা-ই নয়, চলতি প্রতিযোগিতায় সব চেয়ে বেশি ছক্কা মারার তালিকাতেও এক নম্বরে রাসেল। তিনি মাত্র তিনটি ম্যাচে মেরেছেন ১৫টি ছক্কা। ছক্কার রাজা বলে খ্যাত ক্রিস গেল মেরেছেন তিন ম্যাচে ১০টি ওভার বাউন্ডারি।
আরসিবি যে সঠিক দলই গড়তে পারছে না, সে কথাও অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন। যেমন নিলাম থেকে ভাল অলরাউন্ডারই তোলেনি তারা। শিমরন হেটমায়ারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকাকে কিনলেও এখনও পর্যন্ত তিনি নিষ্প্রভই। ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও কোহালিকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। তাঁর হাতে থাকা বিদেশিদেরও খুব একটা পোক্ত দেখাচ্ছে না। মইন আলি, হেটমায়ার, কলিন ডি’গ্র্যান্ডহোমেরা একেবারেই ভরসা দেওয়ার মতো খেলতে পারছেন না। অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোইনিস দলের সঙ্গে যোগ দিলেও পেসার নেথান কুল্টার-নাইল এখনও আসেননি। নাইট রাইডার্স ম্যাচের আগে তিনি এসে পৌঁছবেন বলে নিশ্চিত করে খবর নেই।
সব মিলিয়ে শুক্রবার চিন্নাস্বামীতে নাইট রাইডার্স নিঃসন্দেহে ফেভারিট। কিন্তু যে দলের অধিনায়কের নাম বিরাট কোহালি, তারা সহজে লড়াই ছেড়ে দেবে ভাবলেও ভুল হবে।