পিয়ারলেসের কোচ জহর দাস। —নিজস্ব চিত্র।
লিগে বড় দলগুলির আধিপত্যের মধ্যে পিয়ারলেসের মতো একটি ছোট দলের উঠে আসা। এই জার্নিটা কেমন ছিল?
বাংলার ফুটবল কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছেমোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় দলে ক'টা বাঙালি ছেলে খেলে? বাংলার ফুটবলকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। শুধু মুখে বললে হবে না কাজে করে তা দেখাতে হবে। শুধুমাত্র আমাদের দল নয় ভবানীপুর বা জর্জ টেলিগ্রাফের মতো দলও কিন্তু এ বছর এগিয়ে এসেছে। বিদেশি ফুটবলার কম নিয়ে শুধুমাত্র বাঙালি ফুটবলার নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা কিন্তু এই তিনটে দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই যে আমরা বলছি কিছু হচ্ছে না। তার জন্য দায়ী কিন্তু বড় দলগুলি। বড় দলগুলিতে এই বছর যে সব বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে আসা হয়েছে, তা যে কত বড় ভুল তার প্রমাণ বোধহয় আমরা দিতে পেরেছি।
মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় দলে বাঙালি খেলোয়াড় কম, এই জন্যই কি তারা পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে হয়?
মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল তিন বিদেশি নিয়ে মাঠে নামছে। আমরাও কিন্তু তিন বিদেশি নিয়ে নামছি। তবুও ওরা পারছে না কেন? এটা কিন্তু ভাবা দরকার। আমার মনে হয় বড় দলগুলির বিদেশি খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে ছোট দলগুলি কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে যে কীভাবে ফুটবলার তুলতে হয় বা বড় দলের তথাকথিত বাতিল ফুটবলাদের কীভাবে খেলাতে হয়।
আরও পড়ুন: রাবাডা-কুইন্টনদের দাপটে সিরিজ অমীমাংসিত
ক্রোমা বা কামোর মতো বড় দলের বাতিল ফুটবলারদের তাহলে ছোট দলগুলিই শেখাচ্ছে কীভাবে খেলাতে হয়?
একদম তাই। ক্রোমা এ বছর লিগে ১১টা গোল করেছে। কামো মোট ৯টা গোল করেছে। তুলনায় মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি ফুটবলাররা কিন্তু সর্বাধিক পাঁচটির বেশি গোলও করতে পারেনি।
ছোট দলগুলোর ক্ষেত্রে মাঠের সমস্যাও দেখতে পাওয়া যায়। এই নিয়ে কী বলতে চান?
আমাদের প্র্যাকটিসের জন্য সেই মকড়দহ যেতে হয়। তবুও কিন্তু আমরা ভাল খেলছি। জর্জ, ভবানীপুর, কাস্টমস এই দলগুলিও কিন্তু এই প্রতিকূলতা নিয়েই এগিয়ে চলেছে। তাই এই বছরের লিগকে নিঃসন্দেহে স্মরনীয় লিগ বলা যেতে পারে। তিনজন বিদেশি ছাড়া ভাল ফুটবলার বাছার ক্ষমতা এই মুহূর্তে বড় দলের নেই। ওদের টাকা-পয়সা আছে, পরিকাঠামো আছে, কিন্তু ভাল ফুটবলার বাছার ক্ষমতা নেই।
আরও পড়ুন: মূল পর্বে ভারত, সতীর্থদের সঙ্গে ওড়িশি নাচ স্রিদার্থের
বড় দলগুলিতে বাঙালি কোচ থাকলে কি ভাল হত বলে আপনার মনে হয়?
বিদেশি কোচেদের কিন্তু ভারত সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। তাঁদের প্রথম কাজ হল বিদেশি খেলোয়াড়দের দিকে বেশি করে নজর দেওয়া। ভারতীয় ফুটবলারদের বা বাঙালি ফুটবলারদের তাঁরা তুলনায় কম দেখাশোনা করেন। জিতেন মুর্মু, অভিনব বাগ, দীপঙ্কর দাস এরা কিন্তু কোথাও খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু আমরা এই ফুটবলারদের দলে নিয়ে খেলিয়েছি। এর ফল আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। বড় দলগুলি কিন্তু এদের সামলাতে গিয়েই নাজেহাল হয়ে পড়ছে।
পিয়ারলেসের ক্রোমা দাপট দেখাচ্ছেন কলকাতা লিগে।
আইজলের ইউথ ডেভেলপমেন্টের জন্য আপনি কাজ করেছেন। আপনার কি মনে হয় বড় দলগুলিও এই ইউথ ডেভেলপমেন্টের কাজ ভাল করে চালিয়ে যেতে পারলে আগামিদিনে বাঙালি খেলোয়াড় উঠে আসবে?
আইজল কিন্তু ভাল খেলোয়াড়দের পরিশ্রমকে মান্যতা দিতে জানে। ওখানে কোচেরাও কিন্তু ভাল ফুটবলারদের পরিচর্যা করে। আমরা যে ভাল খেলছি তা কিন্তু একধরনের প্রতিবাদ যাতে আগামী দিনে বাঙালি খেলোয়াড়দের বেশি করে খেলতে দেখা যায়। তাদের যাতে বড় দলগুলি নিতে অস্বীকার না করে। এইভাবেই আমরা লড়াই করে যাচ্ছি।
কলকাতা লিগ জয়ের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রয়েছে আপনার দল। লিগ জিতলে কীভাবে সেলিব্রেট করবেন?ভেবেছেন?
প্রেম করার আগে আমি বিয়ের স্বপ্ন দেখব, এটা হতে পারে না। এই কথা এখন ভাবা অন্যায়। এখন যতদূর সম্ভব ফোকাস ঠিক রেখে প্রতিটি ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চাই।
কলকাতা লিগের পরে বড় দলগুলি থেকে যদি কোচ হওয়ার প্রস্তাব আসে কী করবেন?
সেই ভাবনা পরে ভেবে দেখব। এই সময় একমাত্র ভাবনা হচ্ছে পিয়ারলেসকে কী করে লিগে এক নম্বরে রেখে চ্যাম্পিয়ন করা যায়।