ক্লাস: রাঁচীর মাঠে অনুশীলনে অশ্বিনকে পরামর্শ গুরু কুম্বলের। পিটিআই
ভারতীয় দলের নেটে এমন দৃশ্য বড় একটা দেখা যায় না। টকটকে লাল চেরির মতো দেখতে একটা নতুন বল হাতে তুলে নিলেন রবীন্দ্র জাডেজা। বোলিং শুরু করে দিলেন সেটা দিয়েই।
শুরুতেই পাশাপাশি নেটে ব্যাট করতে ঢুকলেন মুরলী বিজয়, কে এল রাহুল ও চেতেশ্বর পূজারা। নেট বোলারদের মধ্যে থেকে তাঁরা আগে ডেকে নিলেন স্পিনারদের। অনেকক্ষণ পরে ডাক পেলেন দু’জন পেস বোলার।
রাঁচীতে কেমন উইকেট অপেক্ষা করে রয়েছে, তার ইঙ্গিত এই দুই দৃশ্যেই কি পাওয়া যাচ্ছে না?
জাডেজার নতুন বল নিয়ে বোলিং শুরু করা বা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নেটে স্পিনারদের বেশি খেলা তো যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। এই দু’টো ছবিতেই বোধহয় আন্দাজ করা যায়, কেমন উইকেটে বৃহস্পতিবার থেকে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ অংশুমান গায়কোয়াড় এই খবর শুনে বডোদরা থেকে ফোনে বললেন, ‘‘আমি তো ওখানে নেই, তাই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কেন রবীন্দ্র জাডেজাকে নতুন বলে বল করানো হচ্ছে। কারণটা নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে আন্দাজ করতে পারছি, সত্যিই হয়তো জাডেজাকে নতুন বলে বল করতে হবে। না হলে আর নেটে একজন স্পিনার শুধু শুধু কেন নতুন বলে বল করতে যাবে?’’
রাঁচীর জেএসসিএ স্টেডিয়ামের বাইশ গজ নিয়ে গত কয়েক দিন সংবাদমাধ্যমে যে ভাবে চর্চা হয়েছে, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল গায়কোয়াড়। বলছেন, ‘‘সকালে কাগজ খুললেই তো পিচ নিয়ে খবর দেখতে পাচ্ছি। পিচ বড় জটিল জিনিস। পিচ নিয়ে আন্দাজ করা যায়, নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।’’ কোহালিও সাংবাদিকদের প্রায় একই কথা বলে গেলেন। বললেন, ‘‘আমি এমন কোনও ক্রিকেটার দেখিনি যে পিচ পরীক্ষা করে ঠিকঠাক বলে দিতে পারবে উইকেট কী রকম আচরণ করবে।’’ কিন্তু ঘটনা হল, অনুশীলন দেখে মনে হচ্ছে, ভারতীয় টিম নিশ্চিত না হলেও মোটামুটি ধরে নিয়েছে পিচ কী রকম ব্যবহার করতে যাচ্ছে। যার জন্যই নেটে স্পিন অস্ত্র ঝালিয়ে নেওয়া। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে জয়ন্ত যাদবকেও তৈরি রাখা হচ্ছে। আবার এও শোনা যাচ্ছে, মুরলী বিজয় অনেকটাই ফিট হয়ে গিয়েছেন। বিজয় সুস্থ হয়ে গেলে তাঁরই ওপেন করার কথা। সেক্ষেত্রে বাদ যেতে পারেন বেঙ্গালুরু টেস্ট খেলা অভিনব মুকুন্দ।
আরও পড়ুন: শান্তি-বৈঠকে গরহাজির স্মিথ, অশান্তির নিষ্পত্তি হল না
অস্ট্রেলিয়ানরাও সে রকমই ভেবে রেখেছেন। বুধবার অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ অনেকক্ষণ উইকেট দেখার পরে সাংবাদিকদের বলেও দিলেন, ‘‘দেখে মনে হল কাদায় কেউ রোল করে দিয়েছে। এত কালো উইকেট কখনও দেখিনি।’’ পাশাপাশি অবশ্য বলতে ছাড়ছেন না, যে কোনও পরিস্থিতিতে খেলার জন্য তাঁর দল তৈরি। বলেন, ‘‘আমরা তো ভারতীয় স্পিনের বিরুদ্ধে খুব একটা খারাপ খেলছি না। আমাদের স্পিনাররাও ভাল বল করেছে। তাই এ রকম উইকেট দেখে খুব একটা চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ ইঙ্গিতটা কি এমনই যে ফের ঘূর্ণি উইকেট ভারতীয় দলের কাছে বুমেরাং হয়ে ফিরে যেতে পারে? সে রকম ঘটনা ঘটানোর জন্য অস্ট্রেলিয়া তাকিয়ে সেই দুই স্পিনার ও’কিফ ও লায়নের দিকেই। স্পিনিং ফিঙ্গারে চোট থাকা লায়ন অবশেষে বুধবার নেটে বলও করলেন।
অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়াতে অবশ্য এ দিনও রাঁচীর উইকেট নিয়ে চলল হইচই। দুপুরে আবার সাংবাদিক সম্মেলনে স্মিথ উইকেট নিয়ে ‘‘কালকের চেয়েও শুকনো’’ বলার পরে অল্প জলও দেওয়া হল পিচে। পুণের পিচকে ‘পুওর’ ও বেঙ্গালুরুর উইকেটকে ম্যাচ রেফারি ‘বিলো অ্যাভারেজ’ বলেছেন বলেই হয়তো এই সতর্কতা।
ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাঁচীর এই পিচের মাটির সঙ্গে ‘ক্যাওলিনাইট’ নামের এক রকম খনিজ মেশানো রয়েছে, যা নাকি পিচকে ভাঙতে দেয় না। উইকেট তৈরিতে জড়িত এক কর্তা বললেন, ‘‘এই পিচ শুকিয়ে গেলে ফাটল দেখা দিতে পারে, কিন্তু সহজে ভেঙে যাবে না। তাই অনেকে যা ভাবছে, তা নাও হতে পারে।’’ তবে এই উইকেটে যে বাউন্স তেমন নেই, বল মাঝে মাঝেই নিচু হয়ে যেতে পারে, তা অস্বীকার করছেন না তিনি।
মোদ্দা কথা, আগামী পাঁচ দিন রাঁচীর এই বাইশ গজেই থাকবে ক্রিকেট বিশ্বের ফোকাস।