হাসিব হামেদ। ছবি: সংগৃহিত।
ভারত ক্রিকেট পাগল দেশ, শুনেছিলেন হাসিব হামেদ। টিভিতে দেখেওছেন কীভাবে ক্রিকেট মাঠ ভরিয়ে তোলেন সমর্থকরা। আইপিএল খেলতে মরিয়া থাকে বিশ্ব ক্রিকেটের বড়় বড়় নাম। এতটাই চাহিদা ভারতে ক্রিকেটের। তিনিও খেলতে পারতেন ভারতের জার্সি পরে। তিনিও তো হতে পারতেন সচিন তেন্ডুলকর বা বিরাট কোহালি। কিন্তু বুধবার থেকে ভারতীয় সমর্থকরা তাঁর বিরুদ্ধে গলা ফাঁটাবে যখন তিনি কুকের সঙ্গে ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেন করতে নামবেন। ভারতের বিরুদ্ধে। বয়স মাত্র ১৯। অভিষেকেই সামনে ভারত। কিছুটা কাকতালীয় হলেও সত্যি।
অনেক বছর আগে গুজরাতের ভারুচ গ্রাম ছেড়়ে ইংল্যান্ডে ঘাঁটি গেড়়েছিল হামেদের পরিবার। সেই গুজরাতেরই রাজকোটে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হতে চলেছে তাঁর। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোট্ট সংসারে বেড়়ে উঠছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের এই ওপেনার। ছোটবেলা থেকেই শুরু ক্রিকেটপ্রেম। আর রাত পোহালেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পালা। কিন্তু বড়় হওয়ার সেই দিলগুলোর কথা বলতে ভোলেন না হামেদ। বাবা-মায়ের অদম্য সমর্থনের সেই দিনগুলোই যে এই স্বপ্নের জগতে পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে। হামেদ বলেন, ‘‘আমি এখনও চোখ বুজলে দেখতে পাই আমাদের ড্রইংরুমের সোফায় বল হাতে বসে রয়েছেন বাবা। সামনে আমি ব্যাট হাতে। বাবা বল ছুড়়ে দিচ্ছেন আমি ব্যাট করছি।’’ এই খেলা শেষ হত কিন্তু অদ্ভুতভাবে। সে কথাও বলতে ভোলেননি তিনি। ‘‘এরকমই চলত, যতক্ষণ না ঘরের কিছু ভেঙে যেত। কিন্তু আমার মা কখনও খেলা থামাতে বলেননি। আমার জীবনের সেরা স্মৃতি এটা। বসার ঘর থেকেই শুরু আমার ক্রিকেট প্যাসন।’’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে জাতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের ছবি এ ভাবেই টুইট করেছিলেন উচ্ছ্বসিত হামেদ।
ম্যানচেস্টারের ছোট্ট সাজানো বাড়়িটা ক্রমশ ক্রিকেটময় হয়ে উঠছিল হামেদ বড়় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। বাড়়ির ড্রয়িংরুম ক্রমশ হয়ে উঠছিল ক্রিকেট গ্রাউন্ড। আর বাবা শিক্ষক। আর আজ ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হতে চলেছে হামেদের। তাও আবার ভারতেরই বিরুদ্ধে। আসল গল্পটা এখানেই। ভারত সম্পর্কে কিন্তু কোনও ধারণা নেই তাঁর। তবুও এই দেশের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে ১৯ বছরের হাসিব হামেদের। অনেক গল্প শুনেছেন। কিন্তু ভারত দেখা এই প্রথম। তাও আবার ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার প্রস্তুতি। অভিজ্ঞতা একদমই অন্যরকম। ইংল্যান্ড হলে কী হবে হামেদের স্বপ্নের নায়ক সচিন তেন্ডুলকর। বলেন, ‘‘সচিনকে দেখে বড়় হয়ে ওঠা। এই মুহূর্তে আমার হিরো বিরাট কোহালি ও জো রুট।’’ সেই বিরাট কোহালির দলের বিরুদ্ধেই হয়তো ব্যাট হাতে ওপেন করতে দেখা যাবে হামেদকে।
ইংল্যান্ডে এমন উদাহরণ একাধিক রয়েছে। তিনিই প্রথম এমনটা নয়। ভারত, পাকিস্তানের অনেকেই খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ওয়েস শাহ, মঈন আলি, আদিল রশিদ, সমিত পটেল, রবি বোপারা, মন্টি পানেসাররা খেলেছেন দীর্ঘদিন। সেই তালিকায় নতুন নাম হামেদ। কিন্তু ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৪৯ এর পর সব থেকে কনিষ্ঠ কোনও প্লেয়ারের অভিষেক হল। এখনই তাঁকে ডাকা হচ্ছে ‘বেবি বয়কট’ বলে। বয়কটের মতো নাকি ডিফেন্স ক্ষমতা তাঁর। ইংল্যান্ডের এই ওয়ান্ডারবয়কে নিয়ে টানাটানি চলছেই কাউন্টি ক্রিকেটে। তবে তিনি থাকতে চান ল্যাঙ্কাশায়ারেই। চালিয়ে যেতে চান পড়়াশোনাও। সঙ্গে নতুন সংযোজন, জাতীয় দলে টিকে থাকার লড়়াই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে সুযোগ পেলেও ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক হওয়ার স্বপ্ন এখন হামেদের।
আরও খবর
বিরাট সেরা টিম ম্যান: রাহানে