পরীক্ষা: প্রণতি, প্রতিষ্ঠা ও সত্যজিৎ। কমনওয়েলথ গেমসে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলার যে তিন জিমন্যাস্ট। টুইটার
শুধু একটা দেশ, একটা রাজ্যের স্বপ্নের বাহক হয়ে বার্মিংহামে নামছেন না তাঁরা। নামছেন তাঁদের পরিবারের আত্মত্যাগ, লড়াই এবং স্বপ্নের মর্য়াদা দিতেও।
আসন্ন কমনওয়েলথ গেমসে বাংলার সবথেকে বেশি প্রতিনিধি আছে এমন একটা খেলায়, যেখানে এক চুলের ভুলও পদক থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারে প্রতিযোগীদের। জিমন্যাস্টিক্স। আর সেই তিন প্রতিনিধি হলেন— প্রণতি নায়েক, প্রতিষ্ঠা সামন্ত এবং সত্যজিৎ মণ্ডল।
এদের মধ্যে অভিজ্ঞ অবশ্যই প্রণতি। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। গত বছর অলিম্পিক্সে চোট এবং প্রস্তুতির অভাব ভুগিয়েছিল মেদিনীপুরের পিংলা গ্রামের এই মেয়েটিকে। এ বার প্রস্তুতি কেমন হয়েছে? প্রণতি বলছেন, ‘‘আগের বারের থেকে এ বার প্রস্তুতি অনেক ভাল হয়েছে। গত বার চোটের থেকেও আমার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় না পাওয়া। এ বার কিন্তু আমি পুরোপুরি তৈরি। বার্মিংহামে নিজের সেরাটাই দেব।’’
বছর আঠারোর তরুণী প্রতিষ্ঠার সামনে বার্মিংহামই হতে চলেছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। তিন বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে হাওড়ার ব্যাতর ব্যায়াম সমিতিতে পা রাখা। তার পরে সাইয়ে জয়প্রকাশ চক্রবর্তীর কাছে ট্রেনিং শুরু। এর পরে বাংলা থেকে প্রতিষ্ঠা চলে যান ত্রিপুরায়। আর সেখানেই শুরু দীপা কর্মকারের কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর কাছে ট্রেনিং পর্ব।
কী ভাবে বিশ্বেশ্বরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ হল? আগরতলা থেকে প্রতিষ্ঠার মা শুভ্রা সামন্ত বলছিলেন, ‘‘জয়প্রকাশ স্যর অবসর নেওয়ার পরে আমরা মেয়ের জন্য এক জন ভাল কোচের সন্ধানে ছিলাম। তখন জয়প্রকাশ স্যরই নন্দী স্যরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ২০১৯ সাল থেকে নন্দী স্যরের কাছে ট্রেনিং করছে প্রতিষ্ঠা।’’ বাড়ি ভাড়া নিয়ে মা-মেয়ে থাকছেন আগরতলাতেই।
২০১৪ সালের পরে আবার বাংলার কোনও পুরুষ জিমন্যাস্ট কমনওয়েলথ গেমসে নামছেন। সত্যজিৎ যাঁর হাত ধরে জিমন্যাস্টিক্সে প্রথম এসেছিলেন, সেই পার্থ মণ্ডল ছিলেন বাংলার শেষ প্রতিনিধি। যিনি সম্পর্কে আবার সত্যজিতের কাকা।
২০১০ এবং ২০১৪ সালের কমনওয়েলথে অংশ নেওয়া পার্থ প্রথম বারই পদক জয়ের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। কিন্তু ফাইনালে চোট পাওয়ায় তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়নি। যে স্বপ্ন এখন তিনি ভাইপো সত্যজিতের মধ্যে দিয়ে পূরণ করতে চাইছেন। পার্থ বলছিলেন, ‘‘জয়নগরে বাড়ির বাগানে সত্যজিৎকে প্রথম জিমন্যাস্টিক্সের পাঠ দিয়েছিলাম। তার পরে ও এত দূর এসেছে।’’ পার্থ ছিলেন রোমান রিংয়ে পারদর্শী আর সত্যজিতের অস্ত্র ভল্ট। পার্থর কথায়, ‘‘গোটা দেশে সত্যজিতের মতো ভল্ট আর কেউ দেয় না। আমরা একটা পদক ওর থেকে আশা করতেই পারি। সবচেয়ে ভাল লাগছে, ও আমাদের পরম্পরাটা বহন করে চলেছে।’’ একই কথা শোনা যাচ্ছে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের সঙ্গে বহু বছর জড়িয়ে থাকা কোচ ও কর্তা দিলীপ দাসের মুখেও।
প্রণতির তুলনায় কিছুটা অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠা এবং সত্যজিৎ নিজেরা কিন্তু ভাল করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। প্রতিষ্ঠার কথায়, ‘‘নিজের সেরাটা দিতে আমি তৈরি। স্যর যে ভাবে বলেছেন, সে ভাবেই আমি নিজেকে তৈরি করছি।’’ বার্মিংহামের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট সত্যজিতও। তাঁর মতে, ‘‘সব কিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছে। জানি লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে। তবে আমি তৈরি।’’ পার্থ বলছিলেন, ‘‘অশোক মিশ্রের কোচিংয়ে খুব ভাল জায়গায় আছে ও।’’
প্রতিষ্ঠাকে সাহস জোগাবে আরও একটা ব্যাপার। যাঁর কাছে বছর চারেক ধরে তিনি তৈরি হয়েছেন, সেই বিশ্বেশ্বরবাবুকে বার্মিংহামে পাবেন প্রতিষ্ঠা। প্রথমে কোচ হিসেবে বিশ্বেশ্বরবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু গেমস শুরুর দিন পাঁচেক আগে তাঁর নাম জানিয়ে দেওয়া হয়। দিল্লি শিবিরে থাকা বিশ্বেশ্বরবাবু বলছিলেন, ‘‘ভিসা হাতে পেলেই রওনা দেব। খুব সম্ভবত বুধবারই।’’ দ্রোণাচার্য কোচ আশাবাদী ভাল ফল করার ব্যাপারে। বলছিলেন, ‘‘প্রতিষ্ঠাদের নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছি। আমাদের লক্ষ্য আগে ফাইনালে ওঠা।’’
কী হয়, তা দেখার জন্যই ২৯ জুলাই থেকে বার্মিংহামে নজর রাখবে গোটা দেশ।