বড়রা পারতেন? নিশ্চিত নন বিজয়নরা

ভারতীয় ফুটবলারদের পিছিয়ে থাকার কারণটা কী? বিজয়নের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের দেশের ছেলেরা ফুটবল শিখতে শুরু করে তেরো-চোদ্দো বছর বয়সে।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

একমত: আনচেরি (বাঁ দিকে)ও বিজয়নের মতে অনেক পথ যাওয়া বাকি।

ব্রাজিলের লিঙ্কন ডস স্যান্টোস-কে নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

জাপানের বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলার জন্য জেডন স্যাঞ্চোকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ইংল্যান্ড।

স্পেনকে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বার্সেলোনার আবেল রুইজ।

Advertisement

হ্যাটট্রিক করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলা তিমোথি উইয়াকে আর কয়েক দিন পরেই প্যারিস সঁ জারমঁ-এ নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-এর পাশে খেলতে দেখা যাবে।

অভিজিৎ সরকার, রহিম আলি, ধীরজ সিংহ থেকে আনোয়ার আলি— সকলেরই ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। অথচ লিঙ্কন, স্যাঞ্চো-দের মতো অভিজিৎ, ধীরজরাও বিশ্বকাপার।

কেন এই বৈপরীত্য?

ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন অধিনায়ক আই এম বিজয়ন অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে প্রায় সব খেলাই মাঠে বসে দেখেছেন। বুধবার রাতে ঘানা বনাম নিজার ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজার-কে বললেন, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের অন্যান্য দলগুলোর থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। আসলের ফুটবলের প্রাথমিক জ্ঞানটাই আমাদের দেশের ছেলেদের অনেক কম। এটাই তো পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: গরমে কাহিল দেখালেও মুখে স্বীকার করছে না জার্মানি

ভারতীয় ফুটবলারদের পিছিয়ে থাকার কারণটা কী? বিজয়নের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের দেশের ছেলেরা ফুটবল শিখতে শুরু করে তেরো-চোদ্দো বছর বয়সে। বিদেশে সেটা শুরু হয় সাত-আট বছর বয়সেই। পনেরো-ষোলো বছর বয়সেই ওরা পেশাদার হয়ে যায়। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। আমাদের দেশে সেই পরিকাঠামোই নেই।’’

কেন্দ্রীয় সরকার বিজয়নকে ভারতীয় ফুটবলের পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। তা সত্ত্বেও অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথমবার অংশগ্রহণ নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে নারাজ তিনি। বিজয়ন খোলাখুলি বললেন, ‘‘ভুলে গেলে চলবে না, আয়োজক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ খেলছি। যোগ্যতা অর্জন করিনি। আমার বেশি গৌরবের হচ্ছে, যোগ্যতা অর্জন করেই বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলা। এ ভাবে কখনওই নয়।’’

ভারত কি কোনও দিন পারবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে? বিজয়ন বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে তা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এগোতে হবে।’’ ভারতের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক জো পল আনচেরি-ও একমত প্রাক্তন সতীর্থের সঙ্গে। বললেন, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সব দলগুলোই টুর্নামেন্টের অন্তত পাঁচ-ছয় বছর আগে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। এটাই পদ্ধতি। সাফল্য এক দিনে পাওয়া যায় না। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হয়।’’

ভারতীয় দল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কি তা হলে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি? আনচেরির ব্যাখ্যা, ‘‘পরিকল্পনা মানে কিন্তু শুধু প্র্যাকটিস করা নয়। জাপান দলটাকে দেখুন, অধিকাংশ ফুটবলারের উচ্চতাই পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির উপরে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে শারীরিক শক্তির উপর। জাপানের ফুটবল স্কাউটরা হয়তো এই বিশ্বকাপের জন্য বছর দশেক আগে থেকেই লম্বা ফুটবলার খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিল। আধুনিক ফুটবলে শুধু স্কিল দিয়ে কিছু হয় না। দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামো গড়ে তোলা।’’

কী ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন? ‘‘আমরা কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের এক অথবা দু’মাস আগে প্র্যাকটিস শুরু করতাম। এই ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কখনও সাফল্য পাওয়া যায় না। দূরদর্শিতা দরকার। ২০২৫ সালের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।’’

বিজয়নের মতো আনচেরিও অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলকে নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন। বললেন, ‘‘আমি তখন খুশি হব, যখন দেখব এই দলটা থেকে অন্তত দু’জন ফুটবলার অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement