অশ্বিন-দাপটের দিনে পূজারা-মুরলীর লড়াই। শুক্রবার মুম্বইয়ে। -পিটিআই
৯ ডিসেম্বর: মার্চ, ২০০৬। ওয়াংখেড়ে।
ডিসেম্বর, ২০১৬। ওয়াংখেড়ে।
মুম্বই প্রেসবক্সে দুপুর-দুপুর দু’টো তারিখ নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছিল। কারণ প্রথম ইনিংস ইংল্যান্ড যে রানে ছেড়েছে, সেটা। ঠিক চারশো। এক রান বেশি নয়, কমও নয়। ওয়াংখেড়েতে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের পুরনো নথি ঘেঁটে বের হল যে, দশ বছর আগে মার্চে ঠিক এই স্কোরেই প্রথম ইনিংস শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। অ্যান্ড্রু স্ট্রস সেঞ্চুরি করেছিলেন। যিনি এ বারের কিটন জেনিংসের মতোই দক্ষিণ আফ্রিকা-জাত। সে বারও ভারত ব্যাট করেছিল পরে। কুৎসিত ভাবে রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত টেস্ট ম্যাচটা হেরেছিল।
নিছকই খুঁজে খুঁজে মিল বের করা। এটা ঘটনা যে, চলতি সিরিজে ওয়াংখেড়ে যুদ্ধের প্রথম দেড়টা দিন, দশ বছর আগেকার প্রথম দেড় দিনের মতোই দেখিয়েছে। যেখানে ইংল্যান্ড ভারতের উপর কিছুটা কর্তৃত্ব করে গিয়েছে। কিন্তু কাকতালীয় ঘটনারও একটা সমাপ্তি থাকে। দশ বছর পরের ওয়াংখেড়েতে ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় দিনের পরের ভাগ থেকে খেলাটা তাই ঘুরতে শুরু করল। ভারত দিনের শেষে ১৪৬-১। মুরলী বিজয়-চেতেশ্বর পূজারা জুটি ফের দাঁড়িয়ে গিয়েছে। খেলা প্রচুর বাকি। কিন্তু এটুকু লিখে ফেলা যায় যে, ভারত অন্তত প্রথম ইনিংসে ২৭৯ অলআউট হয়তো হবে না। দশ বছর আগে দ্রাবিড়ের ভারত যা করেছিল।
যদিও একটা খচখচানি থাকছে। ওয়াংখেড়ে পিচে যে টার্ন-বাউন্স দ্বিতীয় দিন থেকে দেখা গেল, সেটা নিয়ে। বল ভাল ঘুরছে, লাফাচ্ছে। অশ্বিন ছ’টা নিলেন, রবীন্দ্র জাডেজা চারটে। ইংল্যান্ড একমাত্র যে উইকেট ফেলেছে, সেটাও তুলেছেন একজন স্পিনার। মইন আলি। অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত পড়া এগারোটা উইকেটের সব ক’টাই স্পিনারের তোলা। পেসারদের কপালে একটাও জোটেনি। ভারতকে কিন্তু এই পিচে চতুর্থ ইনিংস খেলতে হবে।
পিচ সূচক হলে আসন্ন তিন দিনের যুদ্ধের নির্যাসটা পরিষ্কার। আমাদের স্পিনার বনাম ওদের স্পিনার। অশ্বিন-জাডেজা-জয়ন্ত বনাম মইন-রশিদ।
এ দিন খেলা শেষে পার্থিব পটেল উপরের যুদ্ধটার জয়ীর নামও ঘোষণা করে গেলেন। বললেন, যুদ্ধে জিতবেন অশ্বিনরাই। ‘‘আমাদের স্পিনাররা ওদের স্পিনারদের চেয়ে বেশি টার্ন করাতে পারে। গতিও বেশি। আমরাই এগিয়ে।’’ পার্থিব যেটা বললেন না, কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে সেটাই আসল হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের ‘থ্রি’ বনাম ওদের ‘টু’। একজন স্পিনার কম! অ্যালিস্টার কুক আশ্চর্যজনক ভাবে এই টেস্টে একজন স্পিনার কম খেলাচ্ছেন, পেসার বাড়িয়ে। যে কারণে জো রুটকে দিয়ে অফস্পিন বোলিং করাতে হল এ দিন।
এমনিতে মুম্বই টেস্টের প্রথম দিন অশ্বিনের দাপট দেখে থাকলে দ্বিতীয় দিন জাডেজার ব্যাটসম্যানদের উপর ‘অসিচালনা’ দেখল। জস বাটলার কিন্তু দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। জাডেজা ফেরালেন। ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ—জাডেজারই ‘খাদ্য’। অশ্বিন? যত দিন যাচ্ছে, তাঁর সাফল্য না পাওয়াটাই খবর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত কালের চারটের পর এ দিন পেলেন আরও দু’টো। পরিসংখ্যানবিদের তথ্য অনুযায়ী, ৪৩ টেস্টে মোট শিকারের দিক থেকে তিনিই (২৪১) সেরা। যে রেকর্ড এত দিন ছিল ডেনিস লিলি, ওয়াকার ইউনিসদের দখলে।
অশ্বিনদের স্পিন-প্রত্যুত্তর দেওয়া শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। লোকেশ রাহুলের স্টাম্প ছিটকে দিয়েছিলেন মইন। কিন্তু তার পর স্পিন খেলার অন্য স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ফেলেছে ভারত। পাল্টা মারের স্ট্র্যাটেজি। রশিদকে এক ওভারে একটা চার, একটা ছয় মেরে যা শুরু করেন মুরলী বিজয়। লক্ষ্যটা পরিষ্কার, পিচ তোমাদের বন্ধু হতে পারে। কিন্তু আমরা তোমাদের মাথায় চড়তে দেব না।
বিজয়রা আজ দেননি। কিন্তু শনিবার একই কাজ করে যেতে হবে। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, শনিবার সকালটা টেস্টের প্রেক্ষিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।