রোমিতা জিন্দল, মেহুলি ঘোষ এবং আশি চোক্সী। ছবি: পিটিআই।
এশিয়ান গেমসের পদকের প্রথম দিনে সোনা এল না ঠিকই। কিন্তু পাঁচটি পদক পেয়ে ভারতের শুরুটা খারাপ হল না। রবিবার ছুটির দিনে ঘুম থেকে তখনও অনেকেই ওঠেনি। তার মধ্যেই ভারতের ঘরে ঢুকে যায় দু’টি পদক। সেই তালিকায় ছিলেন বাঙালি মেহুলি ঘোষও। ধীরে ধীরে ঢোকে আরও তিনটি। দিনের শেষে ভারতের ঘরে তিনটি রুপো এবং দু’টি ব্রোঞ্জ। কিন্তু সোনার জন্যে অপেক্ষা রয়েছে এখনও। হয়তো সোমবারই তা পূরণ হয়ে যেতে পারে। কী কী হল রবিবার এশিয়াডের প্রথম দিনে?
ক্রিকেট
এশিয়ান গেমসে পদক নিশ্চিত করেছেন হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মন্ধনারা। মহিলাদের ক্রিকেটের সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে চলে গিয়েছে ভারত। রবিবার ভারত ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় মাত্র ৫১ রানে। ভারতের বোলিং আক্রমণের সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না বাংলাদেশের ব্যাটারেরা। সর্বোচ্চ রান অধিনায়ক নিগার সুলতানার ১২। বাংলাদেশের পাঁচ ব্যাটার আউট হয়েছেন শূন্য রানে। দুই ওপেনার সাথী রানি এবং শামিমা সুলতানা কোনও রান করতে পারেননি। ১ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ১৭.৫ ওভারেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ভারতের সফলতম বোলার পূজা বস্ত্রকর ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন তিতাস সাধু, আমনজ্যোৎ কৌর, রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় এবং দেবিকা বৈদ্য। জবাবে মাত্র ৮.২ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫২ রান তুলে নেয় ভারতীয় দল। তবে একটা উদ্বেগও থাকল। অল্প লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েও ২ উইকেট হারিয়েছে ভারত। রান পাননি এ দিনের অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানা (৭)। ওপেনার শেফালি বর্মাও ২১ বলে ১৭ রান করে আউট হয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ২২ গজে থেকে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন জেমাইমা রডরিগেজ় (অপরাজিত ২০) এবং কণিকা আহুজা (অপরাজিত ১)। ৭০ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় ভারতীয় দল। এই জয়ের ফলে মহিলাদের ক্রিকেটে ভারতের রুপোর পদক নিশ্চিত হল।
শুটিং
প্রত্যাশা মতোই শুটিংয়ের প্রথম ইভেন্ট থেকেই পদক জয় শুরু করেন ভারতীয়েরা। যে জয়ে আবদান থাকল বাংলার মেহুলি ঘোষের। মহিলাদের দলগত ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রুপো জিতলেন ভারতীয়েরা। দলে বাংলার মেহুলি ছাড়াও ছিলেন রমিতা জিন্দল এবং আশি চৌকশে। এই ইভেন্টে সোনা জিতেছে চিন। তাদের পয়েন্ট ১৮৯৬.৬। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করা ভারতীয় দলের পয়েন্ট ১৮৮৬। ব্রোঞ্জ পেয়েছে মঙ্গোলিয়া। তাদের পয়েন্ট ১৮৮০। এশিয়ান গেমসে পদক জয়ের জন্য মেহুল-সহ ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলগত ইভেন্টের পর ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ব্যক্তিগত ইভেন্টেও ব্রোঞ্জ জিতেছেন রমিতা। অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছে মেহুলির। তিনি শেষ করেছেন চতুর্থ স্থানে।
রোয়িং
শুটিংয়ের আগেই গেমসের আসর থেকে দেশকে প্রথম পদক দেন রোয়ারেরা। পুরুষদের লাইট ওয়েট ডাবলস স্কালসে রুপো জেতেন অর্জুন জাঠ লাল এবং অরবিন্দ সিংহ জুটি। পুরুষদের পেয়ার ইভেন্টে রোয়িংয়ের দ্বিতীয় পদক জেতেন বাবু লাল যাদব এবং লেখা রাম। রোয়িংয়ের পুরুষদের আট জনের দলীয় ইভেন্টেও রুপো জিতেছে ভারত।
হকি
বড় জয় দিয়ে এশিয়ান গেমসের হকি অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় পুরুষ দল। রবিবার গ্রুপের প্রথম ম্যাচে উজ়বেকিস্তানকে দাঁড়াতেই দেননি হরমনপ্রীত সিংহেরা। এশিয়া চ্যাম্পিয়নেরা জেতেন ১৬-০ গোলে। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল ভারতীয় দলের। শুরুতে প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা মেপে নেওয়ার পর আক্রমণের ঝড় তুলতে শুরু করে ভারত। ৭ মিনিট থেকে শুরু হয় গোল। ৭ এবং ২৪ মিনিটে গোল করেন ললিত কুমার উপাধ্যায়। ১২ মিনিটে গোল করেন বরুণ কুমার। ১৭ মিনিটে গোল আসে অভিষেকের স্টিক থেকে। মনদীপ সিংহ গোল করেন ১৮, ২৭ এবং ২৮ মিনিটে। প্রথমার্ধেই ৭-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভারতীয় দল। দ্বিতীয়ার্ধে ৩৮ মিনিটে অষ্টম গোল করেন বরুণ। কয়েক সেকেন্ড পরেই ৯-০ করেন সুখজিৎ সিংহ। ৩৮ মিনিটে ১০-০ করেন অমিত রুইদাস। ৪০ মিনিটের মাথায় গুরজিৎ সিংহ লাল কার্ড দেখায় ৫ মিনিটের জন্য ১০ জনে খেলতে হয় ভারতকে। তাতেও অবশ্য আক্রমণের ধার কমেনি। ৪২ মিনিটে ১১-০ করেন অভিষেক। ২ মিনিট পরেই ১২-০ করেন সমশের সিং। ম্যাচের চতুর্থ কোয়ার্টারে আরও ৪টি গোল করে ভারতীয় দল। ৫১ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে দলের ১৩তম গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন বরুণ। পরের মিনিটেই চতুর্থ গোল করে ভারতকে ১৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তিনি। ১ মিনিট পর নিজের চতুর্থ গোল করেন ললিত। ৫৭ মিনিটে ১৬তম গোলটি আসে সঞ্জয়েয় স্টিক থেকে। ভারতের মোট আট জন খেলোয়াড় গোল করেছেন। হ্যাটট্রিক করেছেন তিন জন।
ফুটবল
ছেলেদের ফুটবলে মায়ানমারের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করল ভারত। কিন্তু শেষ ষোলোয় পৌঁছতে অসুবিধা হল না তাঁদের। গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে ভারত প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল। পেনাল্টি থেকে ভারতের গোল সুনীল ছেত্রীর। শেষ ষোলোয় ভারতের সামনে সৌদি আরব। ম্যাচের শুরুতেই একটি দারুণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ভারত। নিজেদের বক্স থেকে একটি লম্বা ক্রস রহিম আলির উদ্দেশে পাঠিয়েছিলেন নরেন্দ্র গহলৌত। কিন্তু সেই বিপদ বাঁচিয়ে দেয় মায়ানমার। এর পর তারা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আস্তে আস্তে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে থাকে। বেশ কিছু প্রতি আক্রমণে ভারতকে চমকে দেয় তারা। কিন্তু ইগর স্তিমাচের ছেলেরা হাল ছাড়েননি। প্রতি আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেই গোলের মুখ খুঁজে পায় ভারত। বক্সের মধ্যে রহিমকে ফেলে দেন মায়ানমারের আউং। তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। একই সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন সুনীল ছেত্রী। এর পরেও একাধিক বার আক্রমণ করে দুই দল। কিন্তু প্রথমার্ধে গোলের মুখ খোলেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সুযোগ পেয়েছিল ভারত। গুরকিরত ঢুকে পড়েন মায়ানমারের বক্সে। সামনে শুধু গোলকিপার ছিলেন। কিন্তু সরাসরি তাঁর শট গোলকিপারের হাতে পৌঁছয়। দু’মিনিট পরে আবার দারুণ একটি শট বাঁচান তিনি। এ বার রহিমের বাঁকানো শট বাঁচিয়ে দেন মায়ানমারের গোলকিপার। ৬০ মিনিটের মাথায় ভারতকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচান ধীরজ সিংহ। দূর থেকে শট মেরেছিলেন মিন। সেই শট ভারতের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলালেও ঝাঁপিয়ে পড়ে ধীরজ বাঁচিয়ে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোল খাওয়া আটকাতে পারেননি। ৭৪ মিনিটে সমতা ফেরায় মায়ানমার। পরিবর্ত হিসাবে নামা কিয়াও হিতোয়ে গোল করেন।
তবে এশিয়ান গেমসে মেয়েদের ফুটবলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল ভারত। রবিবার তাইল্যান্ডের কাছে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে গেল তারা। ফলে ‘বি’ গ্রুপে কোনও পয়েন্ট না নিয়ে সবার নীচে শেষ করল ভারত। প্রথম ম্যাচে চীনা তাইপেইয়ের কাছে ১-২ গোলে হেরেছিল ভারত। খেলার শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিল তাইল্যান্ডের কাছেই। ১০ মিনিটের মাথায় ডালিমা ছিব্বার বল বাড়িয়েছিলেন অঞ্জু তামাংকে। তিনি পাস বাড়িয়েছিলেন বালা দেবীকে। কিন্তু সেই প্রয়াস ব্যর্থ হয়। ভারতকে তখন মোটেই আত্মবিশ্বাসী দেখায়নি। মাঝেমাঝেই তাঁদের পা থেকে বল কেড়ে নিচ্ছিল তাইল্যান্ড। ১৬ মিনিটে তাইল্যান্ডের ভুলে বল পেয়েছিলেন মণীষা কল্যাণ। কিন্তু তাঁর শট তাইল্যান্ডের এক ফুটবলারের গায়ে লেগে কর্নার হয়ে যায়। প্রথমার্ধে কোনও গোল হয়নি। কিন্তু ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাইল্যান্ডেরই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় তাইল্যান্ড। গোল করেন পারিচাত। আক্রমণ শুরু হয়েছিল নিপাওয়ানের পা থেকে। নিজেদের অর্ধে ডান দিকে বল পেয়েছিলেন তিনি। একটু এগিয়ে পাস দেন পারিচাতকে। তিনি ভারতের গোলকিপার শ্রেয়াকে পরাস্ত করে গোল করেন। দু’মিনিট পরেই সুযোগ পেয়েছিলেন বাবা দেবী। তাঁর পাস থেকে মণীষার শট সরাসরি গোলকিপারের কাছে যায়। তাইল্যান্ডের কাছে গোল খাওয়ার পর থেকেই ভারতের আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছিল। তাঁরা নিজেদের দখলে বল রাখতে পারছিল না। ফলে সমতা ফেরাতেও পারেনি।
বক্সিং
দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিখাত জ়ারিন ৫০ কেজি বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছে। ৫-০ হারিয়ছেন ভিয়েতনামের থি তাম নগুয়েনকে। ৫৪ বিভাগে প্রীতি পওয়ারও কোয়ার্টারে উঠেছেন। তিনি জর্ডনের সিলিনা আলহাসানাতকে হারিয়েছেন।
ফেন্সিং
অল্পের জন্যে পদক পেল না ভারত। তানিশা খাতরি হেরে ৭-১৫ হেরে গেলেন বিশ্বের দু’নম্বর মান ওয়াই ভিভিয়ান কংয়ের কাছে। পুলের তিনটি ম্যাচে জিতে নকআউটে উঠেছিলেন তানিশা। কোয়ার্টারে জিতলে একটি পদক নিশ্চিত হত।
রাগবি
মেয়েদের রাগবি সেভেন্স দল প্রথম দুটি ম্যাচেই হেরে গেল। প্রথম ম্যাচে ০-৩৮ হারে হংকংয়ের কাছে। তার পরে গত বারের সোনাজয়ী জাপানের কাছে হারে ০-৪৫ পয়েন্টে।
ভলিবল
পুরুষ দলের পদক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারা জাপানের কাছে ০-৩ গেমে হেরেছে। ভারতের এরিন ভার্গিজ় আট পয়েন্ট পেয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার।
টেবিল টেনিস
দলগত বিভাগে পুরুষ দল জিতলেও হেরে গেল মহিলা দল। কাজাখস্তানের বিরুদ্ধে ৩-২ জিতল পুরুষ। এক সময় ম্যাচে ২-২ ড্র চলছিল। শেষ ম্যাচে অচন্তা শরথ কমল জিতে দলকে চাপমুক্ত করেন। কিন্তু মেয়েরা তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২-৩ হেরে যান। মেয়েদের দলে রয়েছেন বাংলার দুই খেলোয়াড় ঐহিকা মুখোপাধ্যায় এবং সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়। ঐহিকা নিজের প্রথম ম্যাচ জিতলেও পরেরটিতে হেরে যান। সুতীর্থা একটি ম্যাচ খেলে জিতেছেন।
টেনিস
প্রি-কোয়ার্টারে উঠেছেন সুমিত নাগাল ও ডাবলস জুটি সাকেথ মাইনেনি-রামকুমার রামনাথন। নাগাল ৪৫ মিনিটে ৬-০, ৬-০ হারান ম্যাকাউয়ের হো তিন মার্কোকে। মাইনেনি-রামকুমর ৬-২, ৬-৩ জেতেন নেপালের অভিষেক বাস্তোলা-প্রদীপ খাড়কার বিরুদ্ধে।
সেলিং
ভারতীয় জুটি কেসি গণপতি এবং বরুণ ঠাক্কর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। আরও চারটি রেস বাকি। প্রথম তিনে থাকলে পদক নিশ্চিত।
দাবা
দ্বিতীয় রাউন্ডে হারলেন পুরুষ দলের বিদিত গুজরাতি। কাজাখস্তানের আইএম কাজিবেকের কাছে হারেন। মহিলারা প্রথম দুটি রাউন্ডে সহজেই জিতেছেন।