ঐতিহাসিক: প্রথম বার কোনও ভারতীয় দলের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়। শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে কোহালি, পুজারাদের স্মরণীয় মুহূর্ত। ফাইল চিত্র
অতিমারি নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং আইপিএলের বাজনার মধ্যেই বৎসরান্তের অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। যেমন, কথাবার্তা শুরু হয়েছে, এ বারের অস্ট্রেলিয়া সফরে বড়সড় দল নিয়ে যাওয়া উচিত কি না।
এমনিতে টেস্ট বা ওয়ান ডে-তে বিদেশে গেলে ১৬ সদস্যের দল হয়। এ বারে সংখ্যাটা দ্বিগুণ করা হলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। তার কারণ অতিমারি পরিস্থিতিতে পাল্টে যাওয়া পৃথিবী। কোভিড ধরা পড়লে পরিবর্ত ক্রিকেটার আনা যাবে। সেই কারণে বড় দল নিয়ে যাওয়াটাই নতুন পৃথিবীতে রুটিন হয়ে উঠতে পারে।
এত দিন দেখা গিয়েছে, টেস্ট এবং ওয়ান ডে বা সীমিত ওভারের দল আলাদা-আলাদা সফরে যায়। এখন একই সঙ্গে টেস্ট এবং সীমিত ওভারের দল পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি ইংল্যান্ডে তিনটি সিরিজ হয়েছে। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলে গেল। তার পরে পাকিস্তান খেলেছে। এখন চলছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পাকিস্তান টেস্ট, সীমিত ওভারের ম্যাচ, দু’ধরনের ক্রিকেটই খেলেছে। দেখা গিয়েছে, তাদের দু’টি দল খুব কম দিনের ফারাকে ইংল্যান্ডে উপস্থিত হয়েছে। কোহালিদের অস্ট্রেলিয়া সফরে সেই ফারাকটুকু না রেখে সবশুদ্ধ একটাই ফ্লাইটে চড়ানোর ব্যবস্থা হলে কেমন হয়? এমন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এতে সুবিধা হবে কারণ, সংক্রমণ ঘটলে প্রয়োজনে ওয়ান ডে স্কোয়াড থেকে কাউকে টেস্ট দলে নিয়ে আসা যেতে পারে। দেখা যাচ্ছে, ফুটবল থেকে ক্রিকেট, সর্বত্র করোনার মধ্যে এ ভাবেই এগিয়ে চলছে খেলা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করোনা ধরা পড়েছে। কিন্তু খেলা থামেনি। নেমার, এমবাপেরা করোনা পজ়িটিভ হলেন। তার পরে ফরাসি লিগ শুরু হয়ে গেল। স্পেনীয় লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কারও কারও মনে হচ্ছে, এটাই ‘নিউ নর্মাল’। দীর্ঘ বিমানযাত্রার পরে জেটল্যাগের মতোই জীবনের অঙ্গ হতে চলেছে নিভৃতবাস পর্ব।
করোনা-উত্তর পাল্টে যাওয়া পৃথিবী নিয়ে আলোচনার মধ্যেই যত নজর এখন অ্যাডিলেডের উপরে। যেখানে কোহালিদের সফরে দিনরাতের টেস্ট হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতীয় দল দিনরাতের টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু করতে চায়নি। রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহালিরা চেয়েছিলেন, গোলাপি বলে টেস্ট খেলার আগে প্রস্তুতি ম্যাচও দেওয়া হোক এবং তা হোক সিরিজের মাঝের দিকে। তড়িঘড়ি করে ইডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিনরাতের টেস্ট খেলা আর অ্যাডিলেডে গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে খেলা যে এক নয়, তা বোঝার জন্য শার্লক হোমস হওয়ার দরকার পড়ে না।
এখন শোনা যাচ্ছে, প্রথম টেস্ট ব্রিসবেনে না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সিরিজ শুরু হতে পারে অ্যাডিলেডে। তা হলে কি প্রথম টেস্টই দিনরাতের হবে? ভারতীয় দল রাজি হবে খেলতে? নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এমনিতে করোনা নিয়ে উদ্বেগের পৃথিবীতে ভারতীয় দলের কাছে অতি উত্তম ক্রিকেট কেন্দ্র বলে বিবেচিত হতে পারে ডনের স্মৃতিবিজড়িত অ্যাডিলেড। মাঠের পাশেই হোটেল। হেঁটে ব্রিজ পেরিয়ে ঢুকে পড়া যায়। এই কোভিড পরিস্থিতিতে যা আদর্শ। কিন্তু সব ভাল লাগা পাল্টে যেতে পারে শুরুতেই দিনরাতের টেস্ট খেলার কথা উঠলে। অস্ট্রেলীয় কর্তাদের এমনও বলা হতে পারে যে, দিনরাতের টেস্টের ভাবনা এসেছে মাঠে লোক টানার জন্য। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই যদি খেলা হয়, তা হলে দিনরাতের কী প্রয়োজন?
কোহালিদের জন্য চিন্তার কথা হচ্ছে, আইপিএল শেষ হলেই অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে। ১০ নভেম্বর আইপিএলের ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম টেস্ট শুরু ৩ ডিসেম্বর। মাঝে মাত্র তিন সপ্তাহ সময়। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে দু’সপ্তাহের নিভৃতবাস পর্ব সারতে হলে প্রস্তুতির কোনও সময়ই নেই। মরুদেশের পাটা উইকেট থেকে সোজা গিয়ে পড়তে হবে অস্ট্রেলিয়ার গতি আর বাউন্সের কড়াইয়ে। এর উপরে আবার শুরুতেই দিনরাতের টেস্ট খেলতে কোহালিদের রাজি করানো কঠিন।
চেতেশ্বর পুজারার মতো ক্রিকেটার, যাঁরা আইপিএলে খেলবেন না অথচ অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজে প্রধান স্তম্ভ, তাঁরা কী ভাবে প্রস্তুতি নেবেন? একটা উপায় হতে পারে, কয়েক জনকে আগে থেকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেওয়া। ধরা যাক, মায়াঙ্ক আগরওয়াল বা অজিঙ্ক রাহানেদের দল আইপিএলের প্লে-অফের আগেই ছিটকে গেল। তাঁদের আগেভাগে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো যেতেই পারে।
আইপিএল রক অ্যান্ড রোলের মধ্যে টেস্টের ক্লাসিকাল সঙ্গীতের পরীক্ষার কথা কতটা মাথায় থাকে বোর্ড কর্তাদের, সেটাই এখন দেখার।