দস্তানার দাপট

পরীক্ষার পথে হেঁটেই সিরিজ খোয়াল ভারত

ভারতকে হারিয়ে ও দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতিয়ে দিয়ে গেল ম্যাক্সওয়েলের চওড়া ব্যাট। বিপক্ষের কোনও ব্যাটসম্যান এ রকম বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দিলে কোনও পরিকল্পনাই কাজ করে না।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৫
Share:

টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া।—ছবি এপি।

কে এল রাহুল, বিরাট কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা বেঙ্গালুরুতে এ দিন ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিল। এই ত্রয়ীর সৌজন্যেই এ দিন ২০ ওভারে ১৯০ রান তোলে ভারত। চিন্নাস্বামীর উইকেটে হারার মতো স্কোর এটা ছিল না।

Advertisement

কিন্তু তার পরেও দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দু’বল বাকি থাকতে ভারতের সাত উইকেটে হারের ব্যাখ্যা একটাই। তা হল, ৫৫ বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ১১৩ রান। সঙ্গে ২৮ বলে ডার্সি শর্টের ৪০ রানের যোগ্য সঙ্গত। তা সত্ত্বেও বলব, ভারতকে হারিয়ে ও দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতিয়ে দিয়ে গেল ম্যাক্সওয়েলের চওড়া ব্যাট। বিপক্ষের কোনও ব্যাটসম্যান এ রকম বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দিলে কোনও পরিকল্পনাই কাজ করে না। এ দিনও করেনি। আজ ওর ৫০ বলে শতরানের এই বিধ্বংসী ইনিংসটা ভারতের হাত থেকে ম্যাচ নিয়ে চলে গেল। এ দিন ম্যাক্সওয়েল বিধ্বংসী ইনিংসের ফলে বিরাট কোহালির প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিংকেও পিছনে ফেলল।

খেলার শুরুতে ভারতীয় ইনিংসের সময় বল থমকে আসছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের সময় বল দেখলাম ঠিকঠাক ব্যাটে এল। এতে অনেকটাই সুবিধা হয়ে গিয়েছিল ‘পাওয়ার হিটার’ ম্যাক্সওয়েলের। সঙ্গে যোগ হবে ভারতীয়দের দল নির্বাচনও। সিরিজে পিছিয়ে থেকে বিজয় শঙ্কর ও সিদ্ধার্থ কলকে খেলিয়ে কেন পরীক্ষানিরীক্ষা করার রাস্তায় হেঁটেছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তা বুঝলাম না। বিজয় শঙ্করের বলে সেই জোর নেই। ও কখনও হার্দিক পাণ্ড্যর বিকল্প হতে পারে না। আর সিদ্ধার্থ কল এখনও ভারতীয় দলের হয়ে খেলার উপযুক্ত হয়নি। না হলে মারমুখী ম্যাক্সওয়েলের সামনে কেউ ফুলটস দেয়? ও ঠিক জায়গাতে বল রাখার বদলে ম্যাক্সওয়েলের ‘কমফোর্ট জ়োন’-এ বল করে গেল। ওই সময় সিদ্ধার্থ অফস্টাম্পের বাইরে শর্ট বল করতে পারত। সে ক্ষেত্রে ম্যাক্সওয়েল কাট করার রাস্তায় হাঁটত। এক বা দু’রান আসত তখন। কিন্তু তার বদলে এমন বল করে গেল, যাতে ম্যাক্সওয়েলের বড় শট নিতে আরও সুবিধা হয়। আর সেই পরীক্ষার পথে হেঁটেই সিরিজ হারাল ভারত।

Advertisement

আরও একটা ব্যাপার বুঝলাম না, যশপ্রীত বুমরা (৪ ওভারে ৩০ রান) ১৯তম ওভারে কেন? ওকে শেষ ওভারে কেন আনা হল না? শিশির পড়ায় ভারতের দুই স্পিনার ক্রুণাল পাণ্ড্য (৪ ওভারে ৩৩ রান) ও যুজবেন্দ্র চহালও (৪ ওভারে ৪৭ রান) ছন্দ পায়নি। ম্যাক্সওয়েলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে পারেনি ওরা।

আরও পড়ুন: গ্লেন এবং শিশির হারিয়ে দিল, বলছেন কোহালি

তবে ম্যাক্সওয়েলকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। আত্মবিশ্বাসী মেজাজে যে ভাবে পুল, কাট, স্ট্রেট ড্রাইভ মারছিল ম্যাক্সওয়েল, তা অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে চহালকে যে ভাবে ‘সুইচ হিট’ মেরে মাঠের বাইরে ফেলল তা দেখে ওই শটের আসল মালিক কেভিন পিটারসেনের কথা মনে পড়ছিল। জাস্টিন ল্যাঙ্গার কোচ হিসেবে আরও একটা উৎকর্ষ যোগ করেছে ম্যাক্সওয়েলের খেলায়। আগে ঝোড়ো ৭০-৮০ রান করেই ও আউট হয়ে যেত। এখন হচ্ছে না। বদলে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরছে। এ দিন ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, পুরো ২০ ওভার খেলে ম্যাচ শেষ করে আসতে চায়। আর হলও ঠিক তাই।

আরও পড়ুন: পাঁচশো ছয় মেরে নতুন রেকর্ড ইউনিভার্স বসের

তবে অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ের দিনেও আমাকে মুগ্ধ করল বিরাট কোহালি। অপরাজিত ৭২ রান (৩৮ বলে) করার পথে ও দেখিয়ে দিল ক্রিকেটীয় শট খেলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাক লাগানো যায়। এ দিন যে ছয়টি ছক্কা বিরাট মেরেছে, তার প্রতিটিই ক্রিকেটীয় শট। তাও আবার কোন মুহূর্তে? যখন কি না পাওয়ার প্লে-র পরে পাঁচ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে ম্যাচে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে অস্ট্রেলীয় বোলাররা।

শেষ ছ’ওভারে ৯১ রান তুলে ভারতের স্কোর চার উইকেটে ১৯০-এ পৌঁছে দেওয়ার কারিগর সেই বিরাট কোহালিই। এর সঙ্গে বলতে হবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির (২৩ বলে ৪০ রান) কথাও। ধোনি ও কোহালির ৫০ বলে ১০০ রানের জুটিটাই ১৯০ রানে পৌঁছে দেয় ভারতকে।

এই ম্যাচেও ঋষভ পন্থ কিন্তু ব্যাট হাতে ব্যর্থ। আমার মতে, তিন উইকেটকিপার নিয়ে ম্যাচে নামার এই বিলাসিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় এ বার এসে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement