বছরটা অ্যাঞ্জেলিক কের্বারের। তবে শনিবার মাঝরাতে যে মেয়েটাকে ৬-৩, ৪-৬, ৬-৪ হারিয়ে কের্বার চ্যাম্পিয়ন হল যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে, সেই ক্যারোলিনা প্লিসকোভা আমার মতে ভবিষ্যতের টেনিস-রানি।
কের্বার এ মরসুমে চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামের তিনটের ফাইনালিস্ট। দু’টোয় চ্যাম্পিয়ন। মেজরে ওর এই চূড়ান্ত যুদ্ধের অভি়জ্ঞতাটা ফ্লাশিং মেডোজে ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্লিসকোভার সঙ্গে আসল পার্থক্য ঘটিয়ে দিয়েছিল। নইলে তিন সেটের ম্যারাথন লড়াই আগাগোড়া সমানে-সমানে হয়েছে। কিন্তু প্লিসকোভা শনিবারের আগে গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা ফাইনাল খেলা তো দূরের কথা, কোনও দিন কোনও মেজরে তৃতীয় রাউন্ডের বেশি ওঠেনি। হয়তো সেই ব্যাপারটা ওকে চাপে ফেলে দিয়েছিল এত বড় ম্যাচে। নইলে শেষ সেটেও একটা সার্ভিস ব্রেকে এগিয়ে থেকেও শেষমেশ ম্যাচটা হেরে বসবে কেন? বাইরে বোঝা না গেলেও ওই চূড়ান্ত সময় প্লিসকোভা মনে মনে ‘চোক’ করে থাকলে আমি অবাক হব না।
তবে চেক মেয়েটির বয়স কম। চব্বিশে পা দিয়েছে। ছ’ফুটের বেশি লম্বা। দারুণ বিগ সার্ভ-ভলি। পাওয়ারফুল গ্রাউন্ডস্ট্রোক। শটে বৈচিত্র আছে। যদি না বড় কোনও চোট বা অস্ত্রোপচারের কবলে পড়ে, কিংবা চোটপ্রবণ প্লেয়ার না হয়ে ওঠে, তা হলে ভবিষ্যতে প্লিসকোভা-ই মেয়েদের টেনিস শাসন করবে বলে আমার বিশ্বাস। একই গ্র্যান্ড স্ল্যামে সেরিনা-ভিনাস বোনেদের সিঙ্গলসে হারানোর দম খুব প্লেয়ারই দেখাতে পেরেছে। যা এ বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে করেছে প্লিসকোভা। তার আগের টুর্নামেন্টের ফাইনালেই কের্বারকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিয়েছে। শনিবার হারলেও তাই প্লিসকোভার উপরে কিছুতেই বিশ্বাস হারাচ্ছি না।
কের্বার সম্পর্কে বরং একটু সাহস দেখিয়ে বলব, সেরিনাকে সাড়ে তিন বছরেরও পরে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের আসন থেকে সরালেও ও নিজে কত দিন ওই আসনে থাকবে তা নিয়ে কিন্তু সন্দেহ আছে। বয়স এখনই আঠাশ। প্লিসকোভার বয়সে কের্বারের র্যাঙ্কিং ছিল ৯৮। বছর পাঁচেক আগে উইম্বলডনে যখন ওকে দেখেছিলাম, এখনকার চেয়ে বেশ ভারী চেহারা ছিল। কোর্টে নড়াচড়ায় স্লো লেগেছিল আমার। তবে জার্মান তো! স্বভাবতই প্রচণ্ড জেদি আর একগুঁয়ে। যেটা করবে ভাববে সেটা করেই তবে ছাড়বে। কের্বারও প্রচণ্ড পরিশ্রম করে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। তবে ওর বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে সবার উপরে উঠতে। তাই কের্বার-যুগ বেশি দিন না চললে অবাক হওয়ার নেই। আর যা-ই হোক, স্টেফি বা সেরিনার ক্লাস তো নয়!
শনিবারই যেমন ফাইনাল খুব ভাল শুরু করে, প্রথম সেট জিতেও দ্বিতীয় সেটে আচমকা ছন্দ হারাল কের্বার। প্লিসকোভা দ্বিতীয় সেট একতরফা ১-১ করার পর চূড়ান্ত সেটে যখন একটা সার্ভিস ব্রেক এগিয়ে, সত্যি ভাবিনি ম্যাচটা কের্বার জিতবে। হয়তো পরিস্থিতি আর প্রত্যাশার চাপে ভেসে গিয়ে প্লিসকোভা ট্রফিটা তুলে দিল।
শুনলাম, ফাইনালের আগে স্টেফি গ্রাফ শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছে কের্বারকে। তবে কের্বারের ‘গুড-লাক’ কত দিন স্থায়ী হবে জানি না। নতুন বছর ওর জন্য আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে হয়তো।