আমি কোহলি হলে ম্যানেজারকে বলতাম, আমার এই গার্লফ্রেন্ড বুঝি যথেষ্ট রূপসী নয়

বার্মিংহাম পৌঁছেছেন ঘণ্টাখানেক আগে। হোটেলে চেক-ইন করেই আবার রেডি হয়ে যেতে হচ্ছে টিমের সঙ্গে ডিনারে যাওয়ার জন্য। সেই নৈশভোজে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতেরও থাকার কথা। তারই ফাঁকে ভারতের চূড়ান্ত সফল টিম ডিরেক্টর সময় দিলেন আনন্দবাজারকে। সিরিজ শেষ। রবি শাস্ত্রী মন উজাড় করে শনিবার রাতে ফোনে কথা বললেন গৌতম ভট্টাচার্য-র সঙ্গে।বার্মিংহাম পৌঁছেছেন ঘণ্টাখানেক আগে। হোটেলে চেক-ইন করেই আবার রেডি হয়ে যেতে হচ্ছে টিমের সঙ্গে ডিনারে যাওয়ার জন্য। সেই নৈশভোজে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতেরও থাকার কথা। তারই ফাঁকে ভারতের চূড়ান্ত সফল টিম ডিরেক্টর সময় দিলেন আনন্দবাজারকে। সিরিজ শেষ। রবি শাস্ত্রী মন উজাড় করে শনিবার রাতে ফোনে কথা বললেন গৌতম ভট্টাচার্য-র সঙ্গে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
Share:

Advertisement

প্রশ্ন: রায়না বলছেন, সাফল্যের পিছনে আপনি। ধবন বলছেন। জাডেজা একটা ওয়েবসাইটকে বলেছেন। তা হলে ফ্লেচার কোথায়?

শাস্ত্রী: ফ্লেচার আছে তো। ভালই কাজ করেছে। আমি তো বলব, ভারতীয় বোলিং ফিল্ডিং কোচেরা এসে যাওয়ায় ফ্লেচারের আরও সুবিধেই হয়েছে।

প্র: আগের সাপোর্ট স্টাফ তো ফ্লেচারের বাছা ছিল। তা হলে অসুবিধে হচ্ছিল কেন?
শাস্ত্রী: আমি যেটা বললাম, তার মধ্যেই আমাকে রাখুন। এই সাপোর্ট স্টাফ আসায় ফ্লেচারের সুবিধে হয়েছে।

প্র: ফ্লেচার কি ভাল কোচ?
শাস্ত্রী: নিশ্চয়ই।

প্র: তা হলে এটা হল কেন যে আপনি আসা মাত্র সবাই লাইন দিয়ে বলতে শুরু করল, রবির প্রেরণাটা কাজ করেছে। এর তো পরিষ্কার অর্থ দাঁড়ায় ফ্লেচারের প্রেরণা কাজ করেনি।
শাস্ত্রী: না, না ওভাবে দেখলে ভুল করা হবে। ফ্লেচার এখন অনেক মন দিয়ে নিজের কাজটা করতে পারছে।

Advertisement

কোচ ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী।

প্র: বিশ্বকাপেও কি তা হলে এই কম্বিনেশনটা থাকবে? ফ্লেচার-ধোনি-শাস্ত্রী?
শাস্ত্রী: বিশ্বকাপের কথা অনেক পরে। এখনকার মতো আমার চাকরির মেয়াদ শেষ। এখন পায়ের ওপর পা তুলে রিল্যাক্স করব। বহু বছর বাদে আমাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল! সেঞ্চুরি করেছি! এখন আমি একটু রিল্যাক্স করতেই পারি।

প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করা প্লেয়ার তো আর বাদ পড়ে না। সে টিমে থেকেই যায়। তো আপনিও তার মানে থেকে যাবেন।
শাস্ত্রী: বললাম তো, একটা একটা করে হোক। এটা একটা ভয়ঙ্কর কঠিন দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সেটা শেষ হল।

প্র: ৪-০ হল না কেন? আত্মতুষ্টি?
শাস্ত্রী: কিছুটা আত্মতুষ্টি তো বটেই। আসলে টেস্ট সিরিজে ও রকম দুরমুশ হয়ে যাওয়ার পর যদি একটা টিম ৩-০ এগিয়ে যায়, তা হলে ভেতরে ভেতরে আত্মতুষ্টি আসতে বাধ্য। গত কাল ওদের সেটাই হয়েছিল। শেষ পনেরো ওভারে আমাদের অনেক ভাল বল করা উচিত ছিল। ব্যাটসম্যানরা যে সব শটে আউট হয়েছে, সব ক’টা মোটেও আউটের বল ছিল না।

প্র: তা হলে তো জয়ে কিছুটা চোনা পড়ে গেল।
শাস্ত্রী: একেবারেই না। আমি তো হারার পরেও কাল ছেলেদের বলেছি, যাও গিয়ে সেলিব্রেট করো। চব্বিশ বছর পর ইংল্যান্ডের মাঠে প্রথম ওদের আমরা ওয়ান ডে সিরিজে হারালাম। এই সময়ের মধ্যে অনেক গ্রেট ওয়ান ডে প্লেয়ার খেলে গিয়েছে। তারা যেটা করতে পারেনি, তোমরা করে দেখিয়েছ। আর কোথাও যদি শোনো, তোমরা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছ, তা হলে প্রতিবাদ করবে। বলবে, আমরা হারাইনি। পুরো ধ্বংস করে জিতেছি!

প্র: বিশ্বকাপের জন্য ভারতকে কি ফেভারিটদের মধ্যে ধরা যায়?
শাস্ত্রী: অবশ্যই ধরা যায়। তবে কতগুলো জায়গা ঠিক করতে হবে। যেমন ডেথ বোলিং। যেমন বাছতে হবে কোন পেসারদের নিয়ে আমরা খেলব। তাদের আইডেন্টিফাই এখনই করতে হবে।

প্র: রায়ডু রান পেয়ে গেলেন। জাডেজাও সফল। এর পর যুবরাজ সিংহ-র জন্য কী পড়ে থাকল?
শাস্ত্রী: সিলেকশনের কথা আমি কিছু বলতে পারব না। তবে রায়ডুকে আমার দারুণ লাগল। জাডেজাও খুব ভাল। এদের সরিয়ে টিমে আসতে গেলে অসম্ভব ভাল ফর্ম দেখাতে হবে।

প্র: ফিটনেসও?
শাস্ত্রী: ফিটনেস থাকলে তবেই না ফর্মটা আসবে।

প্র: ধোনিকে কমেন্ট্রিবক্স থেকে এক রকম দেখতেন। ড্রেসিংরুমের ভেতর থেকে কি আর এক রকম লাগল?
শাস্ত্রী: একদমই না। বলা যায়, নিজের বিশ্বাসটা আরও কনফার্ম করে নিতে পারলাম যে, ও একজন অসাধারণ ক্যাপ্টেন। যেমন শান্ত ভাবে ও টিমটাকে চালায়। যে ভাবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে প্ল্যানিংটা তৈরি করে, সেটা অন্তত ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টিতে দেখার মতো।

প্র: টেস্ট সিরিজে এমন বিপর্যয় ঘটেছিল কেন?
শাস্ত্রী: এটার উত্তর দেওয়ার আগে বলি, লর্ডসের জয়টা এখনও আমার কাছে বিদেশের মাঠে ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট জয়। পুরু ঘাসের উইকেটটা মাথায় রাখতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, অ্যান্ডারসন আর ব্রড মিলে ছ’শো টেস্ট উইকেট নিয়েছে। মাথায় রাখতে হবে, আমরা টস হেরে বিপণ্ণ অবস্থার মধ্যে ছিলাম। ওই টেস্টের পর টিমটা বিপরীত মেরুতে চলে যায় ঠিকই। কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে হবে এরা নিতান্তই অনভিজ্ঞ। এদের দিকে আঙুল তোলার আগে ভাবা উচিত, বিদেশে রিয়েল টাফ ট্যুরে আমরা কি এমন সোনার ইতিহাস তৈরি করেছি? উপমহাদেশের বাইরে সেই ছিয়াশিতে জিতেছিলাম আমরা। তার একুশ বছর বাদে দ্রাবিড়ের টিম জেতে। এত যে লম্বা-চওড়া কথা হয়েছে, কে কোথায় সাউথ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় জিতেছে আমাকে দেখাবেন? আমি তাই গঠনমূলক সমালোচনায় বিশ্বাসী। ইংল্যান্ডে টিভি বক্স থেকেও তাই করেছি। আর ইন্ডিয়ান ড্রেসিংরুমে ঢুকে আরওই নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, এরা সমালোচিত হওয়ার জায়গায় নেই। বরং দু’বছরের মধ্যে এই টিমটাই দুর্দান্ত টেস্ট টিম হতে যাচ্ছে।

প্র: ছবিতে দেখা গেল আপনি অনুশীলনের সময় ইন্ডিয়া জার্সি পরা, অথচ নীচে জিনস।
শাস্ত্রী: মনে রাখবেন আমি কোচ নই। সাপোর্ট স্টাফও নই। টিম ডিরেক্টর। ডিরেক্টর কি ইউনিফর্ম পরে থাকে নাকি?

প্র: বিরাট কোহলির এমন হাল হল কেন?
শাস্ত্রী: এটা সাময়িক। খুব শিগগিরই ও ফর্মে ফিরবে। আমি কাছ থেকে যা দেখলাম সেটা শেয়ার করতে পারি যে, টিমে ওর চেয়ে বেশি পরিশ্রম কেউ করে না। ফর্ম ফেরানোর জন্য এই রকম তাগিদও আর কারও মধ্যে দেখিনি। আমি নিশ্চিত কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও ওর এই অফ ফর্মের মূল্য দেবে। কাউকে না কাউকে সুদ সমেত ওর এই ধার চুকোতে হবে।

প্র: ডিরেক্টর হয়ে ছেলেদের কী শেখালেন জীবন উপভোগ করা নিয়ে?
শাস্ত্রী: শেখালাম, যে যে ভাবে জীবনটা উপভোগ করতে চায়, তার সে ভাবেই করা উচিত। ক্রিকেটে মন থাকলে তার বাইরে কী করছ না করছ কারও-র দেখার দরকার নেই।

প্র: সে কী! টেস্টে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক ম্যানেজার তো দেশে ফিরে পরিষ্কার বলেছেন, বান্ধবীদের ঘরে থাকতে দেওয়ার জন্য পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে। সরাসরি আঙুল তুলেছেন কোহলির ঘরে অনুষ্কার থাকা নিয়ে। টিম ডিরেক্টর হিসেবে আপনার কী মত?
শাস্ত্রী: যখন খেলতাম, তখনও এ সব প্রশানিক ম্যানেজারদের পাত্তা দিইনি। তখন আমি হলে যা উত্তর দিতাম, সেটাই বিরাটের উত্তর হওয়ার উচিত।

প্র: উত্তরটা কি?
শাস্ত্রী: কেন আপনার কি আমার এই গার্লফ্রেন্ডকে যথেষ্ট রূপসী মনে হচ্ছে না? তা হলে আমি কি দ্বিতীয় কাউকে দেখব? অন্য কোনও গার্লফ্রেন্ড আনব? কী বলেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement