ফিটনেস, ফিল্ডিংয়ের মাপকাঠি এখন বিরাট

ভারত হালফিলে এত সফল কেন? আমি সবচেয়ে বেশি নম্বর দেব দলটার ফিটনেসকে। এই দলটা প্র্যাক্টিসে যে ভাবে পরিশ্রম করে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

Advertisement

জন্টি রোডস

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০৪:২৮
Share:

দুরন্ত: অনুশীলনেও একই রকম ক্ষিপ্র অধিনায়ক বিরাট। ফাইল চিত্র

খুব মজার একটা পরিসংখ্যানে চোখ পড়ল। আপনাদেরও বলতে ইচ্ছে করছে। বিশ্বকাপে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ১৬টা ক্যাচ ফেলেছে! তার পরেই ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা। পয়েন্ট টেবলে তাকান। এই যে ভারত এত ভাল জায়গায়, তার কারণ থ্রি-মাস্কেটিয়ার্স। রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহালি আর শ্রীধর। রবি সবাইকে বলে দিয়েছে, দলে থাকতে সবার আগে একশো ভাগ ফিট হওয়া চাই। বিরাটকে দেখুন। ও রকম ফিটনেস কম ক্রিকেটারের আছে। পুরো দলটাই তরতাজা। চাহিদা এক রকম হতেই পারে। কিন্তু সেটা কাজে করে দেখানো দরকার। যেটা শ্রীধর করে দেখিয়েছে।

Advertisement

ভারত হালফিলে এত সফল কেন? আমি সবচেয়ে বেশি নম্বর দেব দলটার ফিটনেসকে। এই দলটা প্র্যাক্টিসে যে ভাবে পরিশ্রম করে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এখানেই ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরের নামটা এসে যাচ্ছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি কী ভাবে ও শর্ট লেগ, কভার ফিল্ডার আর ক্যাচিং নিয়ে পাগলের মতো লেগে থাকে। আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন স্কোয়ার লেগ, ফাইন লেগে বুমরা, চহালরা বাউন্ডারি আটকাতে ঝাঁপ দেয়। দুঃখের ব্যাপার, একটা টিম জিতলে অনেকে এই দিকটা মাথাতেই রাখে না।

শ্রীধর ফিল্ডিংয়ের দক্ষতা বিচার করে একটা র‌্যাঙ্কিংও বানিয়ে ফেলেছে। তাতে ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা আকচা-আকচিও তৈরি হয়। আমি বলব, এটা রীতিমতো স্বাস্থ্যকর। আর একটা কথা। জানেন কি এই র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে কে? চমকে যাবেন না। ক্রিকেটারটির নাম রোহিত শর্মা। আমি নিজেও প্রথমে শুনে অবাক হয়েছিলাম। পরে দেখলাম ঠিকই আছে। ও নিজের জায়গায় কার্যত একটা বলও গলায় না। আমাদের সময়ও ভাল ভাল ফিল্ডার এসেছে। ভারতেই যেমন কাইফ, আজহারউদ্দিন, যুবরাজদের কথা মনে পড়ছে। একইসঙ্গে অনেককে আবার লুকিয়েও রাখতে হত। এখন কিন্তু ছবিটা পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। এখনকার ভারতীয় দলের দিকে তাকালে সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।

Advertisement

এখানে অবশ্য ক্যাচ ফেলা নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। অনেকে কঠিন ক্যাচ ধরার জন্য ঝাঁপায়। যাকে বলে হাফচান্স। তবু সেটা পড়ে গেলেও ক্যাচ ফেলাই বলতে হবে। ইংল্যান্ড, নিউজ়িল্যান্ডের ক্ষেত্রে এটা খুব সত্যি। পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের পেসারদের মুখ চেয়ে থাকে। সেখানে ক্যাচ পড়তে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ডের পিচে সব সময় পেসারদের সাহায্য করছে না। আর এ রকম অবস্থায় দরকার সেরা ফিল্ডিংটা। হ্যাঁ অসম্ভব ক্যাচও ধরতে হবে। আর একটা সমস্যার কথাও মাথায় আসছে। টি-টোয়েন্টি খেলতে খেলতে ক্রিকেটারদের ওয়ান ডে-তে সব সময় মনঃসংযোগ থাকছে না। তাই ক্যাচও পড়ছে। এবং অবশ্যই ভারত এখানেও ব্যতিক্রম। আমার বিচারে এখনকার ভারতীয় দলের সেরা ফিল্ডার জাডেজা। তার কারণ অনেকটা জায়গা ও অত্যন্ত দ্রুত কভার করতে পারে। ওকে তো ডাইভও দিতে হয় না। আর সাংঘাতিক জোরে আর তাড়াতাড়ি বল ছুড়তে পারে। বিরাটও দারুণ ফিল্ডার। তবে ক্যাপ্টেন বলে ওকে নানা কাজ করতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়াতে হয়। এটা একটা সমস্যা। আরও দু’জনের নাম আলাদা করে বলব। রাহুল আর হার্দিক। অন্য দলগুলোর মধ্যে গাপ্টিলের ফিল্ডিংয়ের আমি বিরাট ভক্ত। কম যায় না স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর ডেভিড মিলার।

আমার নিজের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যর্থ হওয়ায় বেশ খারাপ লাগছে। লাগারই কথা কারণ দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপে আমি খেলেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে, সেরা দলটাই বাছা যাচ্ছে না। আর কারা প্রথম এগারোর জন্য যোগ্য, সেটাই বোঝার উপায় নেই। আসলে এক একটা দলের এক এক রকমের সমস্যা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যেমন সবই ভাল কিন্তু ওদের আক্রমণে কোনও বৈচিত্র নেই। আমার মনে হয় ভারতের বিরুদ্ধে ক্যারিবিয়ানরা এই জায়গায় মার খাবে। আর ভারত এগিয়ে থাকবে মূলত তাদের রিস্টস্পিনারদের জন্য। ভারতের একমাত্র উদ্বেগের জায়গা বোধহয় চার নম্বরটা। অনেকেই বলছে ঋষভ পন্থের কথা। ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য অন্য কিছু ভাবছে। নিশ্চয়ই ওদেরও নির্দিষ্ট একটা পরিকল্পনা আছে। সেই অনুযায়ী কাজ করছে। উন্মুখ হয়ে আছি কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চার নম্বরের জায়গাটা নিয়ে ভারত কী করে দেখতে। সঙ্গে এটাও বলব যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো মুখের কথা নয়। রাসেল না থাকলেও কটরেলও বল ভাল সুইং করায়। তা ছাড়া ওদের এখন হারানোর কিছু নেই। খোলা মনে খেলবে। অঘটন ঘটাতে ঝাঁপাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement