ক্রিকেট দুনিয়ায় ভারত বনাম পাকিস্তানের সম্মুখসমর সব চেয়ে বড় ম্যাচ। আমার কাছে এটি নিছকই একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়। একটা যুদ্ধও বটে। এর চেয়ে বড় ম্যাচ হতে পারে না। অদ্ভুত ব্যাপার এটাই যে এ রকম একটা হাইভোল্টেজ ম্যাচের প্রিভিউ লিখতে বসার আগে আগামী চব্বিশ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চোখ বোলাতে হচ্ছে।
সুপার সানডে-তে ক্রিকেটের এই মহারণের দিনে ঠান্ডার পাশাপাশি বিকেলের দিকে বৃষ্টি এসে ম্যাচে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। দু’দলের বোলিং মিলিয়ে পুরো একশো ওভার খেলা হওয়ার সম্ভাবনা সে ক্ষেত্রে কমবে। এই প্রতিবেদন লিখতে বসা পর্যন্ত এটাই আবহাওয়ার পূর্বাভাস। ভাবতে পারেন, এ রকম উত্তেজক একটা ক্রিকেট ম্যাচের আগে বিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা খুঁটিয়ে বিশ্লেষণের পাশাপাশি দু’দলের থিঙ্কট্যাঙ্ককে মাথায় রাখতে হচ্ছে, বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ভেস্তে গেলে কোন দল লাভবান হবে বা কোন দলের ক্ষতি।
একে তো ভারত বা পাকিস্তান এই মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে বেশি ম্যাচ খেলে না। তাই শুধু এই দুই দেশের সমর্থকরাই শুধু নন, গোটা ক্রিকেট বিশ্বই মুখিয়ে রয়েছে রবিবারের এই ম্যাচটা দেখতে। কিন্তু এই আবহেও সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল আবহাওয়া। যা অবাক হওয়ার মতোই ঘটনা। তার চেয়েও খারাপ লাগে এটা ভেবে যে, ক্রীড়াসূচিতে কোনও রিজার্ভ ডে নেই। যাতে বৃষ্টি হয়ে ম্যাচ ভেস্তে গেলে পরিবর্তিত সূচিতে ফের মুখোমুখি হতে পারে এই দুই দল। এটা সত্যিই ভাল হয়নি। যাই হোক, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ঐতিহ্যের মধ্যে একটা বড় বিষয় হল, এখানে আবহাওয়া কখন কী রকম আচরণ করতে শুরু করবে তা বোঝা যায় না। বিশ্বের অন্য মাঠের তুলনায় এই মাঠের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাও বেশ ভাল। তাই আশার বিষয় এটাই যে বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটালেও, এক বার তা থামলে খেলা শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য কমতে পারে ওভার।
আর ক্রিকেটের দিক দিয়ে দেখলে এই ম্যাচে কিন্তু ফেভারিট ভারতই। আর সেটা আমি বলছি পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রেখেই। গত দশ বছর বা তার বেশি সময় ধরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬৩ শতাংশ ম্যাচেই জিতেছে ভারত। আশা করা যায়, এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না। উল্টো দিকে, পাকিস্তান এই ম্যাচে নির্ভর করে থাকবে তাদের সিমারদের উপর। যাতে ভারতকে শুরুতেই ধাক্কা দেওয়া যায়। আর সে কাজে পাকিস্তানের সব চেয়ে কার্যকরী ক্রিকেটারটি হল মহম্মদ আমির। বাঁ হাতি সিম বোলার হওয়ায় আমির ও শাহিন দু’জনেই ভারতের দুই ওপেনার কে এল রাহুল ও রোহিত শর্মার বিরুদ্ধে কোণাকুণি বল রেখে বিব্রত করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে এই দুই বোলারকে খেলার সবচেয়ে বড় দাওয়াই শুরুর দিকে ব্যাট সোজা রেখে খেলা। আর বল দেখে ছাড়া। আর রোহিত, রাহুল, বিরাটদের জন্য আমার পরামর্শ পাকিস্তানের পেসারদের ওরা বাধ্য করুক নিজেদের স্কোরিং জ়োনে বল রাখতে। আর বাঁ হাতি পেসাররা কোণাকুণি বল করার সময় ভারতীয়রাও স্টান্স নিক একটু তেরছা ভাবে। এতে কাজ হবে। কারণ শাহিন সাড়ে ছয় ফুটের বেশি লম্বা। ফলে পিচ থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে জানে। শুরুর দিকে এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে ভারতীয়দের। কারণ চকিতে ধেয়ে আসা এই বাউন্সারগুলো খেলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আর পিচে যেহেতু গতি রয়েছে। তার ফলে পিচ থেকে বাড়তি সাহায্য পাবে বোলাররা। আর ভিজে স্যাঁতসেঁতে পিচ তো পেসারদের স্বর্গই বলা যায়।
ভারত হয়তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন পেসার মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরাকে খেলিয়ে দিতে পারে। যারা শর্ট বল দিয়ে বিব্রত করবে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু আমার মতে ভারতীয় বোলাররা যদি ঠিক লাইনে বল করে যায়, তা হলে উইকেট আসতে বাধ্য। এই ধরনের পরিবেশে টসে যে দল জিতবে তারাই বল করতে চাইবে। তাই রবিবার টস জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ভারত ও পাকিস্তান দুই দলের কাছেই। কারণ, এতে যে দল ফিল্ডিং করবে তারা নিশ্চিত থাকতে পারবে কত রান তাড়া করতে হবে সে ব্যাপারে। কারণ, বৃষ্টির কারণে ম্যাচের মেয়াদ কমলে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে চলে আসবে। এ ছাড়াও, কোহালি ও তার থিঙ্কট্যাঙ্ক বিজয় শঙ্করকে দলে রাখতে চাইবে। এতে একজন অতিরিক্ত সিমারকে পাওয়ার পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে একজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে পারবে ভারত। শুরুতে রোহিত, রাহুল ও বিরাট। মাঝখানে ধোনি, হার্দিক, কেদার, বিজয়। তিন সিমার শামি, ভুবি, বুমরা আর স্পিনার চহাল। আমার মতে, এই দল নিয়েই আজ হয়তো নামবে বিরাট কোহালির ভারত।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড হল সেই মাঠ যেখানে শেন ওয়ার্ন শতাব্দীর সেরা বলটা করেছিল। যা লেগ স্টাম্পে পড়ে ১২০ ডিগ্রি ঘুরে বেল তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল। কেন ওয়ার্নের এই বলটার কথা ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের আগের দিনে টেনে আনলাম তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইকেট গতি সহায়ক। পাশাপাশি, স্পিনারদেরও সাহায্য করে। খেলা গড়ানোর পড়ে পিচ থেকে সাহায্য পেতে পারে স্পিনাররাও। উইকেটে যেহেতু বাউন্স থাকবে তাই একজন লেগস্পিনার উইকেটে তৈরি হওয়া ক্ষতগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিপাকে ফেলতে পারে প্রতিপক্ষকে। মনে রাখবেন যুজবেন্দ্র চহাল কিন্তু বেশ ভাল মানের লেগস্পিনার। উইকেট থেকে পাওয়া বাউন্স ও ভালই কাজে লাগাতে জানে। কাজেই এই ম্যাচে চহাল একটা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং এ রকম একটা অদ্ভুত আবহাওয়ায় উইকেটের বৈচিত্রও একটা বিশেষ বিষয়। সব মিলিয়ে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং মিলিয়ে ভারতের যে শক্তি তাতে ম্যাচটা জেতা উচিত কোহালিদেরই।