আটলেটিকোর নায়ক। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
ম্যাচের সেরার পুরস্কারের ট্রফিটা যখন নিতে যাচ্ছেন মুখে সেই চেনা হাসি। অনেক, অনেক দিন পর! ভারতীয় ক্রিকেটের ধাত্রীগৃহে রবি-রাতের আগে আইএসএল টু-তে যে কোনও গোলই ছিল না ইয়ান হিউমের! সেখানে মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভাণ্ডারের মতো একটা ম্যাচেই তিন-তিনটে গোল।
ষোলো বছর পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত আটলেটিকো কলকাতার এই কানাডিয়ান ফরোয়ার্ড। কিন্তু এ দিনের আগে কোনও দিন ম্যাচ-বল নিয়ে মাঠ ছাড়ার সুযোগ পাননি। এ দিনের আগে কখনও হ্যাটট্রিক করেননি যে তিনি!
কিন্তু কলকাতা-মুম্বই মহারণে সেই ধারা আমূল পাল্টে দিলেন। তিনে তিন। পেশাদার কেরিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ম্যাচের নায়ক খেলার শেষে বললেন, ‘‘দারুণ লাগছে। এই প্রথম হ্যাটট্রিক করলাম। অনেক বছর ফুটবল খেলছি। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা কোনও দিন হয়নি। আজকের দিনটা তাই কখনও ভুলব না।’’ এত দিন চেষ্টা করেও গোল আসছিল না। আজ সেই চাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি। কিন্তু হিউমের সতর্ক প্রতিক্রিয়া, ‘‘এত দিন গোল পাচ্ছিলাম না। আজ তিনটে পেয়ে কিছুটা অন্তত স্বস্তি পাচ্ছি।’’
দুরন্ত ফর্মে থাকা মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয়। কেরিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। আটলেটিকোকে খাদের কিনারা থেকে বাঁচানো। রাতে তা হলে কি পার্টি? মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে হিউমের সাফ জবাব, ‘‘পার্টি আবার কীসের? একটা ম্যাচ জিতেই অত বেশি আত্মতুষ্ট হয়ে পড়লে চলবে না আমাদের। পরের ম্যাচগুলোও এ ভাবেই জেতার জন্য মনোযোগ দিতে হবে।’’ তবে স্মরণীয় এই মুহূর্ত সতীর্থদের উত্সর্গ করছেন কানাডিয়ান হিটম্যান। ‘‘অবশ্যই এই হ্যাটট্রিক আমার সতীর্থ ফুটবলার আর প্রিয়জনদের জন্য।’’
অতীতেও নিজের কেরিয়ারে এ রকম তীব্র প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েও সোনালি প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। বার্নসলিতে খেলার সময় শেফিল্ড ইউনাইটেড ম্যাচে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, তাঁর আর ভবিষ্যতে মাঠে ফেরা সম্ভব হবে না। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই শুধু মাঠেই নয়, টিমের প্রথম একাদশে ফেরেন হিউম। এতটাই তাঁর মানসিক জেদ। যেটা এ দিনও আটলেটিকো জার্সিতে ধরা পড়ল। হিউম বললেন, ‘‘মুম্বই খুব কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। আবার ওদের বিরুদ্ধে জেতাটাও খুব জরুরি ছিল আমাদের। সেটা করেছি। আর সেই কাজে যে আমি দলকে সাহায্য করতে পেরেছি সেটা দারুণ লাগছে।’’
মুম্বইকে উড়িয়েও আত্মতুষ্ট হয়ে না পড়া হিউমের পরের টার্গেট, ‘‘কলকাতায় নর্থইস্টের বিরুদ্ধে জিততে হবে। আজ জিতে আমরা কিন্তু আবার সঠিক মেজাজে ফিরে এলাম।’’ এমনকী আগের তিন ম্যাচ এটিকে হারলেও হিউমের মতে, সেই ম্যাচগুলোতেও দল ভালই খেলেছিল। ‘‘আমার তো মনে হয় দিল্লির বিরুদ্ধে ভালই খেলেছিলাম। ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল না।’’ হ্যাটট্রিক করা হিউম আপাতত দলের জন্য প্রার্থনায় মগ্ন। কী সেই প্রার্থনা? ‘‘দলে যাতে কোনও চোট আর না আসে। আমি সেটাই চাই। চোট সারিয়ে অনেকে ফিরছে, সেটা দারুণ ব্যাপার। শুনছি তো পস্টিগাও ফিরছে!’’