FIFA

ঘটি-বাঙাল গুলিয়ে যুবভারতীতে শুরু ব্রাজিল-জার্মানি উত্সব

আবহটা তৈরি হচ্ছিল ক’দিন আগে থেকেই। একে তো যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, তার উপর ব্রাজিল বনাম জার্মানি। যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। ফুটবলের পারদ যে এক লাফে অনেকটা উচ্চতা পেড়িয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ১৯:৫৩
Share:

মহারণের আগে যুবভারতী।—নিজস্ব চিত্র।

আবহটা তৈরি হচ্ছিল ক’দিন আগে থেকেই। একে তো যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, তার উপর ব্রাজিল বনাম জার্মানি। যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। ফুটবলের পারদ যে এক লাফে অনেকটা উচ্চতা পেড়িয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। টিকিটের হাহাকার, সঙ্গে যুবক থেকে বৃদ্ধ, কলেজ ছাত্রী থেকে সিরিয়ালে মুখ গুঁজে থাকা গৃহবধু সবাই যেন একসুরে গাইতে শুরু করেছে বিশ্বকাপের মন্ত্র। ফুটবলের কলকাতা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান থেকে বেরিয়ে অন্য স্বরলিপি লিখছে শুধুমাত্র এই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই। বিশ্বকাপের ছোঁওয়া পাওয়া কলকাতা প্রথম থেকেই পাশে থেকেছে বিশ্ব ফুটবলের। গ্যালারি ভরিয়েছেন প্রচুর মানুষ। রবিবারের যুবভারতী তাই বিশ্ব ফুটবলের মন্ত্র নিয়ে তৈরি। টিকিট শেষ অনেক আগেই। দুপুর থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে দীর্ঘ লাইন। যত আগে ঢুকে পড়া যায় আর কী। বেলেঘাটা মোড় থেকে পিল পিল করে লোক চলেছে স্টেডিয়ামের পথে। বেলেঘাটা মোড় থেকে ডানদিকে ঘুরে সাই পেরিয়ে কিছুটা গেলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়ামে ঢোকার গেট। তার সামনে লম্বা লাইন। স্বপরিবারে ফুটবল দেখতে হাজির উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমের অনেকেই। সঙ্গে পুলিশের কড়া নজর। গাড়ি থেকে তিন নম্বর গেটের সামনে নামতেই দেখা হয়ে গেল ব্রাজিলের পতাকার রঙে ফেট্টি বিক্রেতার সঙ্গে। কিনে সঙ্গে সঙ্গে মাথায় বেঁধে নিল গড়িয়ার মুখোপাধ্যায় পরিবার। পরিবারের কর্তা, গিন্নি, সঙ্গে দুই ছেলে-মেয়ে। সকলেই ব্রাজিল সমর্থক। বলে দিলেন, ‘‘আজ আমরা ব্রাজিলের জন্যই গলা ফাটাব। এত দিন টিভির সামনে বসে চিৎকার করেছি। আজকে মাঠে সুযোগ পাচ্ছি, কেউ ছাড়ে?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: অতীতকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটা আসলে ভবিষ্যতের

আরও পড়ুন: ম্যাচ জিতে ছেলে মাতেওর গানের ভিডিও পোস্ট করলেন মেসি

Advertisement

এক নম্বর গেটের সামনের লাইন ঘুরে গিয়েছে হায়াতের দিকে। টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখে যেন উচ্ছ্বাস দ্বিগুণ হল। কত ক্ষণ দাঁড়িয়ে লাইনে? উত্তর এল, ‘‘দু’ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে। এখনও দরজা খোলেনি।’’ সবার হাতেই ব্রাজিলের পতাকা, ব্যান্ড। ‘‘গত কালই ভাইফোঁটা গিয়েছে, এটা বোনদের জন্য ভাইদের গিফট।’’ বলছিলেন, হাওড়ার সায়ন ঘোষ। ভাই-বোনরা মিলে খেলা দেখতে এসেছেন। সেই লাইনেই ছোট্ট মেয়েটা বাবা-মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক মতো কথাও ফোটেনি। কিন্তু ফুটবলের জন্য সে নাকি আজকাল পাগল। বাড়িতে সুযোগে পেলেই নাকি ফুটবল পায়ে নেমে পড়ছে। বাবাকে বাধ্য হয়ে কিনেও দিতে হয়েছে ফুটবল। সল্টলেকের অঞ্জন দাসের বাড়ি এখন নাকি ফুটবলময়। একটা পতাকা গায়েও জড়িয়ে নিয়েছে ওই ছোট্ট মেয়ে। পুলিশকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষের আবেগ সামলাতে। তবে এই ফুটবল আবেগ সামলে অভ্যস্ত কলকাতা তথা সল্টলেকের পুলিশ। এদের যে সামলাতে হয় ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের আবেগ। সেটা নেহাৎ কম নয়। বরং অনেক বেশি কঠিন।

ভিআইপি গেটের সামনে অপেক্ষা করছিল অন্য চমক। বৃদ্ধ দম্পতি একে অপরের হাত ধরে মন্থর গতিতে ঢুকছেন স্টেডিয়ামের ভিতরে। কত বছর ফুটবল মাঠে আসছেন? প্রশ্ন শুনে একগাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন দু’জনেই। ‘‘একটা সময় নিয়মিত যেতাম। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলা দেখতে। এখন কেমন যেন পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে। আর যাওয়া হয় না। তবে শহরে বিশ্বকাপ, না এসে পারা যায়? তাই কষ্ট করে চলে এলাম।’’ কার সমর্থক? ‘‘জার্মানি। আবার সাত গোল দেখতে চাই।’’ যাক এত ক্ষণে তাহলে জার্মানির সমর্থক পাওয়া গেল। সব থেকে দামী সমর্থক। স্বামীর বয়স প্রায় ৮০ ছুঁই ছুঁই। স্ত্রী ৭০এর গণ্ডি পেড়িয়েছেন। স্ত্রী বলছিলেন, ‘‘বাড়িয়ে ঘটি বাঙালের লড়াই লেগেই থাকে। উনি মোহনবাগান, আমি কিন্তু ইস্টবেঙ্গল। খাঁটি বাঙাল। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলে আমরা দু’জনেই এক।’’ এত আবেগ ফুটবলকে ঘিরে এই বয়সেও? মনের মধ্যে প্রশ্নটা কেমন যেন তোলপাড় করছিল। ফুটবল হয়তো এমনই। এ ভাবেই সব প্রজন্মকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসে। যে ভালবাসার ভাগ হয় না, যে প্রেমের বদল হয় না। ফুটবল আবেগ হয়ত একেই বলে। সেই আবেগে ভাসতে ভাসতে বৃদ্ধ দম্পতির আর নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। আসলে সবাই তো ফুটবলপ্রেমী। আইপিএল, ক্রিকেট থেকে আইএসএল, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান সবাইকে মিলিয়ে দিল ব্রাজিল-জার্মানি কলকাতার মাঠে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement