গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ে ফেডেরার, জোকোভিচকে টপকে গিয়েছেন নাদাল।
প্যাট্রিক ম্যাকেনরো নিজেই নিজের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। আমেরিকার এই প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় বেশ গুছিয়ে বসেওছিলেন। প্রশ্ন ছিল, চার ধরনের কোর্টে আপনি কী ভাবে রাফায়েল নাদালকে বর্ণনা করবেন? ম্যাকেনরোর উত্তরপত্রটা ছিল এরকম— ইন্ডোর হার্ড: সত্যিই ভাল (রিয়েলি গুড) ঘাস: বিরাট (গ্রেট)। আউটডোর হার্ড: বিস্ময়কর (ফেনোমেনাল)। ক্লে: ???
শেষে গিয়ে আর জবাব দিতে পারেননি আমেরিকার ডেভিস কাপ দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। না, নম্বর কাটা যাবে না তাঁর। ১৪ বার ফরাসি ওপেন জিতে নিয়ে ক্লে কোর্টের নাদাল যাবতীয় বিশেষণের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছেন। সেখানে তাঁকে বর্ণনা করতে যাওয়ার ধৃষ্টতা দেখালেই বরং নম্বর কাটা যাবে। কোনওটাই যথোপযুক্ত হবে না।
ক্রোয়েশিয়ার ইভান লুবিসিচ রবিবারের পর একটা দাবি রেখে ফেলেছেন ফরাসি ওপেন কর্তৃপক্ষের কাছে। বলেছেন, ‘‘১৪টা ফরাসি ওপেন খেলেছে, খুঁজলে এরকম লোক খুব বেশি পাওয়া যাবে না। সেখানে এক জন ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওই লাল মাটির কোর্টটা রাফার নামে করলে স্বর্গ থেকে বুড়ো ফিলিপ (যাঁর নামে ফিলিপ শাঁতিয়ে কোর্ট) নিশ্চয়ই কিছু মনে করবেন না। আসলে শুধু একটা মূর্তি এখন আর যথেষ্ট নয়।’’
গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
এক জোকোভিচ ভক্ত বলেছেন, ‘‘আজ আমার স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই, নাদালই সর্বকালের সেরা। কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে যাওয়া আমার নায়কের থেকে ওর এখন দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম আর একটা অলিম্পিক পদক বেশি। টিকাও নেওয়া আছে।’’
আর জোকোভিচ নিজে? কোয়ার্টার ফাইনালে রাফার বিরুদ্ধে নামার আগে তিন মূর্তিমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি স্যাক্সোফোন হই, ফেডেরার বেহালা আর নাদাল ইলেকট্রিক গিটার।’’
গিটারের সুর এখন যেখানে কোমলে সেখানে বেহালা আর স্যাক্সোফোন কড়িতে। গিটারিস্ট নাদালের ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের পাশে বেহালাবাদক ফেডেরার আর স্যাক্সোফোনিস্ট জোকোভিচের গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সংখ্যা ২০।
২০০৩ সালে ফেডেরারের হাত ধরে বিশ্ব টেনিসে বেহালার সুর শুরু। আটটি উইম্বলডন খেতাবের প্রথমটি সেই বছর জেতেন। ২০০৫ সালে নাদাল যখন গিটার হাতে প্রথম ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন, তত দিনে বেহেলাবাদকের নামের পাশে ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। পরের দু’টি বছরে (ফেডেরার ৯, নাদাল ২ এবং ফেডেরার ১২, নাদাল ৩) ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০০৮ সালে গ্র্যান্ড স্ল্যামের গ্রহে প্রথম স্যাক্সোফোনের আবির্ভাব। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে নেন জোকোভিচ। সংখ্যার ফারাকটা এক লাফে প্রথম কমে ২০১০ সালে। তখন থেকেই বেহালা খানিকটা বেসুরো। ২০১৬ সালে রজার, রাফা, জোকারের গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৭, ১৪, ১২।
২০২০ সালে বেহালা আর গিটারের ফারাক শূন্যতে গিয়ে ঠেকে। গত বছর এক পংক্তিতে চলে আসে স্যাক্সোফোনও । তিন জনেরই গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফির সংখ্যা হয় ২০।
এই বছর এখনও পর্যন্ত হওয়া দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নাদাল ২২-২০-২০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছেন। জিমি হেনড্রিক্স-এরিক ক্ল্যাপটন-নাদালের গিটার ছাপিয়ে গিয়েছে ইজহাক পার্লম্যান-হিলারি হান-ফেডেরারের ভায়োলিন এবং চার্লি পার্কার-ক্রিস পটার-জোকোভিচের স্যাক্সোফোনকে।