যন্তর মন্তরে ধর্নামঞ্চে কুস্তিগির বিনেশ ফোগট (বাঁ দিকে) ও বজরং পুুনিয়া। —ফাইল চিত্র
২৩ এপ্রিল থেকে যন্তর মন্তরে ধর্না চালাচ্ছিলেন কুস্তিগিরেরা। দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপে অবশেষে ২৮ মে সেখান থেকে উঠতে বাধ্য হয়েছেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটরা। এই ৩৫ দিনের ধর্নায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। সেই টাকা কোথা থেকে এসেছিল? কুস্তিগিরেরা নিজেরাই কি সব খরচ করেছিলেন? নাকি অন্য কোথাও থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন তাঁরা।
ধর্নায় বিনেশের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী সোমবীর রাঠি। তিনি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে খরচের বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন। সোমবীর জানিয়েছিলেন, প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের। সোমবীর বলেছিলেন, ‘‘ধর্না শুরু করার পরে পাঁচ দিনেই আমাদের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, গদি, বিছানার চাদর, স্পিকার, মাইক কিনতে হয়েছিল। তা ছাড়া খাবার, জলের খরচ আছে।’’
শুরুতে কুস্তিগিরেরা গদি, মাইক, স্পিকার সব ভাড়ায় নিয়েছিলেন। তার জন্য প্রতি দিন ২৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা বুঝতে পারেন যে ধর্না অনেক দিন চলবে। তাই সব কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নেন। সোমবীর বলেন, ‘‘আমি ৫০ হাজার টাকায় আমার গ্রাম থেকে ৮০টা গদি কিনে আনি। তার আগে গদির জন্য প্রতি দিন ১২ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছিল। স্পিকার ও মাইকের জন্যও প্রতি দিন ১২ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছিল। তাই দিল্লির চাঁদনি চক থেকে ৬০ হাজার টাকায় স্পিকার ও মাইক কিনি। আমাদের দেখে দোকানদার খুব কম দামে আমাদের সে সব দেয়।’’
তবে তার পরেও কিছু জিনিস ভাড়ায় নিতে হয়েছিল তাঁদের। যেমন ফ্যান ও জেনারেটর। তার জন্য প্রতি দিন ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়েছিল।
কোথা থেকে টাকা এসেছিল? সোমবীর জানিয়েছিলেন, সব টাকা কুস্তিগিরেরা নিজেদের পকেট থেকেই দিয়েছিলেন। তবে এত খরচ হবে তাঁরা বুঝতে পারেননি। সোমবীর বলেন, ‘‘শুরুতে আমরা ২-৩ লক্ষ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। সেটা শুরুতেই শেষ, হয়ে গিয়েছিল। তার পরে আবার টাকা আনতে হয়েছিল।’’
ধর্না চলাকালীন অবশ্য অনেকের সাহায্যও পেয়েছিলেন কুস্তিগিরেরা। সোমবীর বলেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছিলাম একে অপরকে সাহায্য করব। কয়েক জন কোচ তাঁদের আখড়ায় রান্না করে সেই খাবার পাঠিয়েছেন। অন্য এক জন দলের জোগান দিয়েছেন। এক জন ধর্না চত্বর পরিষ্কারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নিরাপত্তাকর্মীরাও আমাদের সাহায্য করেছেন।’’ কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল, বা অন্য কারও কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য তাঁরা নেননি বলেই দাবি করেছেন সোমবীর।
হরিয়ানার প্রায় ৮০টি আখড়া থেকে তরুণ কুস্তিগিরেরা ধর্নায় যোগ দিতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সোমবীর। কিন্তু বেশি লোক হলে সামলানো মুশকিল হবে বলে তাঁরা সেই সব আখড়ার কোচদের জানান, ধর্নামঞ্চে না এসে দূর থেকেই সমর্থন করতে।
ধর্না শেষে ফিরে যাওয়ার সময় সেই সব স্পিকার, মাইক, গদি কোনও গুরুদ্বার বা মন্দিরে তাঁরা দান করে যাবেন বলে জানিয়েছেন সোমবীর। তিনি বলেছেন, ‘‘গুরুদ্বার বা মন্দিরে গদি, মাইকের প্রয়োজন হয়। তাই ওগুলো আমরা দিয়ে যাব। আশা করি তাতে অনেকের উপকার হবে।’’