ভারতীয় হকি দলের কোচের পদ কি বিদেশিদের কাছে মিউজিক্যাল চেয়ারে পরিণত হল?
হকি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র বত্রা কি কোনও কোচকেই জাতীয় দলে থিতু হতে দেবেন না?
২০০৯ থেকে ২০১৫—ছয় বছরে চার জন বিদেশি কোচের চাকরি যাওয়ার পর সেই প্রশ্নগুলোই উঠে গেল সর্বত্র। বছর ঘুরলেই রিও অলিম্পিক। অথচ তার আগেই ফের তীব্র ডামাডোল সর্দার সিংহদের টিম ঘিরে। বর্তমান চিফ কোচ পল ফান আস জাতীয় শিবিরে যোগ দেননি। বিশ্ব হকি লিগের রিপোর্টও জমা দেননি। উল্টে তিনি হকি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তোপ দাগায় অদ্ভুত এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি যা তাতে ফান আসের জায়গায় নতুন কোনও বিদেশি কোচ এত তাড়াতাড়ি আনা কঠিন। এমনও শোনা যাচ্ছে, হাই পারফরম্যান্স ডিরেক্টর রোল্যান্ট অল্টম্যান-ই সামনের অলিম্পিকে কোচের দায়িত্ব পালন করতে পারেন ভারতীয় দলের। নতুন কোচের ব্যাপারে হকি ইন্ডিয়া অবশ্য ২৪ জুলাই সভা ডেকেছে। সেখানে কোচ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
সভায় যাই হোক, অলিম্পিকের আগে হিমাচলপ্রদেশের সাইতে কোচবিহীন শিবির শুরু হওয়ায় বিরক্ত প্রাক্তনরা। ধনরাজ পিল্লাই থেকে পারগত সিংহ, অশোককুমার থেকে অজিত পাল সিংহ—প্রায় সবাই সরব হয়েছেন বারবার কোচ পরিবর্তন নিয়ে। তাঁদের সবারই মত, ‘‘এতে ছেলেদের মনোবল ভেঙে যাবে। ঘনঘন কোচ পরিবর্তন অলিম্পিকের প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলবে।’’ আবার অনেকের পরামর্শ, নরেন্দ্র বত্রা এবং কোচ দু’জনে মিলে সমস্যা মিটিয়ে নিন।
কিন্তু যে ভাবে সর্দারদের কোচ নেদারল্যান্ডস থেকে সরাসরি তোপ দেগেছেন তাতে সমাধান সূত্র বার করা কঠিন। অবস্থা যা তাতে হোসে ব্রাসা, মাইকেল নবস, টেরি ওয়ালসের পর পল ফান আসকেও বিদায় নিতে হচ্ছে ঝামেলায় জড়িয়ে। তেরো বছর পর টেরি ওয়ালস এশিয়াডের সোনার পদক এনে দিয়েছিলেন। তাঁকে দুর্নীতির দায়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পল ফান আসের সরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে।
হকি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওয়ার্ল্ড হকি লিগের মালয়েশিয়া ম্যাচের পরই ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলেন আস। ম্যাচ জেতার পর মাঠে ঢুকে হিন্দিতে জাতীয় দলকে গালাগালি দিচ্ছিলেন হকি ইন্ডিয়ার প্রধান কর্তা। আর তাতে বাধা দেন কোচ। তিনি বলে দেন, ‘‘টিম যথেষ্ট ভাল খেলেছে। আর এটা আমার অঞ্চল। এ ভাবে আপনি মাঠে ঢুকে গালাগালি করতে পারেন না।’’ এর পরই মাঠ ছেড়ে চলে যান সর্বভারতীয় সংস্থার প্রেসিডেন্ট। এ দিন তিনি অবশ্য আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘হকি ইন্ডিয়া কোচকে বরখাস্ত করেনি। করলে সেটা সাই ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রককে জানিয়ে করতাম।’’
প্রেসিডেন্ট ছাঁটাই নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও সংবাদসংস্থার কাছে বোমা ফাটিয়ে গিয়েছেন জাতীয় হকি দলের চিফ কোচ আস। বলে দিয়েছেন, ‘‘যত দূর মনে পড়ছে বেলজিয়ামে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর হাই পারফরম্যান্স কোচ আমাকে বলেছিলেন তোমাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। পরে ১৩ জানুয়ারি আমাকে জানানো হয় মিস্টার বত্রা আমাকে চাইছেন না।’’ সঙ্গে ডাচ কোচ আরও বলেছেন, ‘‘এটা ঠিক, সরকারি ভাবে আমি হকি ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কোনও চিঠি পাইনি। তবে শুনেছি এই সপ্তাহের শেষে তা পেয়ে যাব। এ জন্যই আমি জাতীয় শিবিরে যোগ দিইনি।’’
আসকে অলিম্পিকের এক বছর আগে ছেঁটে ফেলা নিয়ে দেশজুড়ে যখন তীব্র আলোড়ন তখন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক এবং সাই কর্তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করছেন। সাইয়ের ডিজি শ্রীনিবাস বলে দিলেন, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমরা জানি আস ছুটিতে আছেন।’’
হিমাচলপ্রদেশের শিলারিতে জাতীয় শিবির শুরু হয়েছে। রিও অলিম্পিকের প্রস্তুতি। এই অবস্থায় যে ভাবে কোচ নিয়ে ডামাডোল শুরু হয়েছে তা অলিম্পিকের ইতিহাসে ভারতের সফলতম খেলাটার পক্ষে আরও এক বড় দুর্ঘটনা!