আগমন: প্রথম টেস্ট খেলতে অ্যাডিলেডে পৌঁছনোর পরে ভারতীয় দলকে স্বাগত জানাচ্ছেন সমর্থকেরা। টুইটার
বিরাট কোহালির ব্যাটে রান ফোয়ারা দেখতে অভ্যস্ত যে অ্যাডিলেড ওভাল, সেখানে আসন্ন টেস্টের বাইশ গজ দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠতে পারে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের। কারণ, তাঁদের জন্য ঘাসে ঢাকা উইকেট অপেক্ষা করে আছে ঐতিহাসিক এই মাঠে। এবং বৃহস্পতিবার যখন এখানে টস করতে নামবেন দুই অধিনায়ক, তখনও এই পিচের একই চেহারা দেখা যাবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কিউরেটর ড্যামিয়েন হগ।
এখানে শেষ তিনটি টেস্টই হয়েছে দিন-রাতে। সেই ম্যাচগুলিতে গোলাপি কোকাবুরা বল যাতে সহজেই আকৃতি না হারায়, তাই এখানকার উইকেটে বাড়তি ঘাস ছেড়ে রাখা হয়েছিল। সেই বাড়তি ঘাস রাখা হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন কিউরেটর। অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্রে তিনি বলেছেন, ‘‘অন্য রকম কিছু করা হচ্ছে না এই উইকেটে। আগের টেস্টগুলোতে যে ভাবে উইকেট প্রস্তুত করা হয়েছে, এ বারেও সে ভাবেই করা হচ্ছে। তফাৎটা শুধু সময়ে। এই ম্যাচে পিচের ঢাকা তোলা হবে তাড়াতাড়ি, খেলাও শুরু হবে তাড়াতাড়ি।’’
ভারতের বিরুদ্ধেও এখানে দিন-রাতের টেস্ট খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের আপত্তিতে তা হচ্ছে না। তবে পিচের প্রস্তুতি দিন-রাতের টেস্টের মতোই হচ্ছে বলে জানান হগ। তিনি বলেন, ‘‘ঘরোয়া ক্রিকেটে লাল বলের খেলায় ও গোলাপি বলের খেলায় একই রকমের উইকেট থাকে এখানে। সমানে সমানে লড়াই দেখতে হলে উইকেটে কিছু ঘাস ছেড়ে রাখাই তো ভাল। ব্যাট ও বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে এমন উইকেটই দরকার।’’
তিন বছর আগে এই অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড প্রথম দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল তিন দিনে। গোলাপি বল ও দিন-রাতের পরিবেশের পার্থক্যের সঙ্গে ক্রিকেটার, মাঠকর্মীরা ঠিকমতো মানিয়ে নিতে না পারার জন্যই এমন হয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল তখন। তার পরের বছর, ২০১৬-য় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট জেতে চার দিনে। গত বছর অ্যাসেজ সিরিজে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে ম্যাচ শেষ হয়। তিনটি টেস্টেই জেতে অস্ট্রেলিয়া। আর এই তিন টেস্টই খেলা হয়েছিল সবুজ উইকেটে। গোলাপি বল যাতে আশি ওভার পর্যন্ত টেকে। কিন্তু এখন লাল কোকাবুরা বলের ম্যাচেও কেন সেই সবুজ উইকেটই দেওয়া হচ্ছে, তার সদুত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি।
এ জন্য অস্ট্রেলিয়ার তারকাখচিত পেস বিভাগের যেমন খুশি হওয়ার কথা, তেমনই ভারতীয় পেসারদেরও মুখে হাসি ফুটতে পারে। লড়াইটা মূলত হতে পারে মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্সদের সঙ্গে ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মাদের। ১৯৮৫-র ডিসেম্বরে যে মাঠে কপিল দেব এক ইনিংসে আট উইকেট নিয়েছিলেন, ২০০৩-এ ছ’উইকেট নিয়েছিলেন অজিত আগরকর, সেখানে ভুবি-বুমরারা নিজেদের কতটা ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারেন, সেটাই দেখার।
তবে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের এক নম্বর লক্ষ্য অবশ্যই হবে বিরাট কোহালিকে তাড়াতাড়ি ফেরানো। কারণ, অ্যাডিলেড ভারত অধিনায়কের কাছে স্মরণীয় মাঠ। এখানে দু’টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। দুই টেস্টের চার ইনিংসের মধ্যে তিনটিতেই সেঞ্চুরি করেছেন। সেই দুই টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ৯৮.৫০। ২০১৪-য় দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি ছিল তাঁর। যদিও সেই টেস্ট অস্ট্রেলিয়াই জিতেছিল। তবে এ বার যে অ্যাডিলেডে বিরাটকে রোখার সব রকম অস্ত্রই তৈরি তাঁর দলের পেসারদের, তা এ দিন বলেই দেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেইন। স্টার্কদের লড়াই যে শুধু বিপক্ষের পেসারদের সঙ্গে, তা নয়, বিপক্ষের অধিনায়কের সঙ্গেও।