ব্রাজিল বনাম জার্মানি। সেলেকাও বনাম ডাই ম্যানশ্যাফট।
আর সেই ম্যাচ ঘিরেই উত্তাল কলকাতা। হাহাকার টিকিটের জন্য।
১৯৬৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পেলের দেশ জার্মানির মুখোমুখি হয়েছে বাইশ বার। যার মধ্যে এক ডজন ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল। আর বেকেনবাওয়ার, মুলার-দের জার্মানি সেখানে জিতেছে মোটে পাঁচ বার। জার্মানির হয়ে বলার মতো ম্যাচ গত বিশ্বকাপে মিনেইরো-তে সেই ঐতিহাসিক ৭-১ জয়। কিন্তু এ সবই বড়দের ম্যাচে।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ?
এক্ষেত্রে কিন্তু পরিসংখ্যানটা জার্মানির দিকেই। রবিবার যুবভারতীতে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামার আগে এই টুর্নামেন্টে এক বারই ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানি। ছ’বছর আগে মেক্সিকোর অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে সেই তৃতীয় স্থান নির্ধারণের ম্যাচে জার্মানির কাছে ৩-৪ হেরে চতুর্থ হয় নেমারের দেশ।
আরও পড়ুন: টিকিটের বণ্টন নিয়ে ক্ষুব্ধ পিকে
জার্মান শিবির অবশ্য রবিবারের ম্যাচের আগে এই সব পরিসংখ্যানকে কোনও পাত্তা দিচ্ছে না। বরং রবিবারের ম্যাচ জিততে অকুতোভয় মেজাজে রয়েছে তারা। গত বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপে ৭-১ জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সাংবাদিক সম্মলনে মুচকি হাসেন জার্মান কোচ। বলেন, ‘‘আরে ওটা তো তিন বছর আগের ঘটনা। মানছি ওই ঐতিহাসিক জয় কোনও জার্মান-ই ভুলবে না। কিন্তু সেটা তো অন্য টিম ছিল। আর এটা অনূর্ধ্ব-১৭ দল।’’ পরক্ষণেই ছুটে যায় প্রশ্ন, তা হলে কি ব্রাজিলের মাটিতে মুলার, খেদিরা-দের সেই খ্যাতির বিড়ম্বনায় চাপে জার্মানি? যা শুনে হা হা করে ওঠেন, ‘‘না না, ওটা আলাদা ম্যাচ। সেই ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচ মেলাবেন না। আর ওই ম্যাচের জন্য আমরা কোনও চাপে নেই।’’
এই জার্মান টিমের মাঝমাঠের অন্যতম স্তম্ভ এলিয়াস আবুচাবাকাও ব্রাজিল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বলে, ‘‘ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এখন খেলতে নামলেই সবাই গত বিশ্বকাপের ম্যাচটা টেনে আনে। কিন্তু আপনারা ভুল করছেন। ওটা বড়দের টিম ছিল। আর আমরা ভারতে এসেছি নতুন ইতিহাস লিখে ট্রফিটা জার্মানি নিয়ে যাওয়ার জন্য। কাজেই অতীত নয়। গোটা জার্মানি রবিবার মুখিয়ে থাকবে ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আরও কাছে চলে যেতে।’’
চলতি বিশ্বকাপে কার্লোস আমাদেউ-এর ব্রাজিল যখন নয় গোল দিয়ে মাত্র এক গোল খেয়েছে, তখন জার্মানি হজম করেছে ছয় গোল। করেছে নয় গোল। আর সেই প্রসঙ্গ উঠতেই আবুচাবাকা-র মন্তব্য, ‘‘ব্রাজিলের রক্ষণ খুঁটিয়ে দেখেছি আমরা। ওদের সব কটা ম্যাচ হোটেলে বড় স্ক্রিনে কোচের সঙ্গে বসে দেখেছি। তাই জানি ওদের রক্ষণে কোথায় আঘাত হানতে হবে। আর আমাদের আক্রমণ ভাগও কিন্তু বেশ শক্তিশালী। আমরাও ন’গোল করেছি। কাজেই ব্রাজিলকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়া অসম্ভব নয়।’’
তা হলে কি রবিবারের ম্যাচ ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগ বনাম জার্মানির আক্রমণ ভাগ? প্রশ্ন করলে এ বার ঠিকরে বেরোয় জার্মান জাত্যাভিমান। জার্মান কোচ বলে দেন, ‘‘আমার স্ট্রাইকাররা ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদের চেয়ে অনেক ভাল। জানি ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগটাও দুর্দান্ত। একক দক্ষতায় ওরা ম্যাচ বার করতে পারে। শক্তি ও গতিতে মন্দ নয়। কিন্তু এই ব্রাজিল তো এখন খেলে ইউরোপের টিমের মতো। শুধু স্কিল নয়। সঙ্গে শক্তিটাও কাজে লাগায়। আমরাও কিন্তু সেই একই গতি ও শক্তিতে ওদের সামনে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে জানি।’’
কিন্তু ছয় গোল হজম? এ বার প্রশ্নকর্তার দিকে কড়া চোখে তাকান জার্মান কোচ ক্রিশ্চিয়ান উক। বলেন, ‘‘ইরানের বিরুদ্ধে ৪-০ হারটাকে গোটা জার্মানি ‘কালো সোমবার’ বলে উল্লেখ করছে। ইরান এমনিতেই ভাল দল। তার উপর আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে ভাল খেলতে পারিনি। কিন্তু তার পরেই টিমে অনেক বদল হয়েছে। রক্ষণ পাল্টেছি। তাই কলম্বিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ৪-০ জিতে ফেরার ম্যাচে কোনও গোল হজম করতে হয়নি।’ একটু থেমে তার পর বলে ফেলেন আসল কথাটা। ছুড়ে দেন হুঙ্কার, ‘‘এখন আর অতীত ঘেঁটে কী লাভ হবে। আমরা এখন তাকিয়ে ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য। উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে আমরা প্রচুর গোল করেছি। এখানেও গোলের মধ্যেই রয়েছে আমাদের টিম। আমাদের মাঝমাঠ যে সুযোগগুলো তৈরি করছে তা কাজে লাগাতে পারলে ব্রাজিলকে হারাতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আর ব্রাজিলের বিরুদ্ধে সুযোগ মিস করলে আমাদের জেতা কষ্ট হবে।’’
টিমকে এই মহাম্যাচের আগে ফুরফুরে মেজাজে রাখতে এ দিন পুরো জার্মানি দলটা সকালে গিয়েছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘুরতে। বিকেলের অনুশীলনেও নিজেদের গুটিয়ে রাখে জার্মানরা। হাল্কা অনুশীলন করেই হোটেলে ফিরে যায়, ইয়ান ফিতো আর্প, বিসেক-রা।