মহড়া: বল নিয়ে কসরত জার্মান অধিনায়ক আর্প-এর। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রিও অলিম্পিক্স ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলেছিল জার্মানি। যে ম্যাচে টাইব্রেকারে জিতে সোনাজিতেছিলেন নেমাররা। মে মাসেও ইউরো ২০১৭-র সেমিফাইনালে স্পেনের কাছে টাইব্রেকারে হারতে হয়েছিল জার্মানিকে।
রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে সেই জার্মানদের সামনে ব্রাজিল। দু’বছরে দু’টি বড় টুর্নামেন্টে জার্মানিকে হারতে হয়েছে টাইব্রেকারে। কলকাতায় এমনিতেই ব্রাজিলের সমর্থক বেশি। রবিবার যুবভারতীতে ভিড় জমাতে পারেন হাজার পঞ্চাশেকের বেশি দর্শক। তাঁদের সমর্থনের সামনে ম্যাচ যদি প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের মতোই ফের টাইব্রেকারে গড়ায় তা হলে কি জার্মানদের চাপ বাড়বে? পেনাল্টি-আতঙ্ক দূর করতে জার্মান কোচ ক্রিশ্চিয়ান উক কি ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপারের মতোই আলাদা করে পেনাল্টি অনুশীলন করাবেন?
উত্তরটা—না।
কালীপুজোর সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুশীলন ছিল জার্মান দলের। যেখানে জান ফিয়েতে আর্প, ইয়ান বিসেক-দের নিয়ে টানা দেড় ঘণ্টা অনুশীলন করালেন জার্মান কোচ উক। সিচ্যুয়েশন প্র্যাকটিস, দু’টিম বানিয়ে খেলা, রক্ষণের জন্য বিশেষ অনুশীলন—সবই হল। কিন্তু হল না কোনও পেনাল্টি মারার মহড়া। অনুশীলনের পর টাইব্রেকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই জার্মান কোচের হুঙ্কার, ‘‘দর্শকঠাসা স্টেডিয়ামে খেলতে আমাদের অবশ্যই ভাল লাগবে। ওরা আমাদের সমর্থন না করলেও খেলায় কোনও প্রভাব পড়বে না। আর টাইব্রেকার? পেনাল্টি শ্যুটআউট-এর কোনও প্রস্তুতিই নিচ্ছি না। ব্রাজিল অবশ্যই ভাল টিম। তবে আমাদের কাছেও জেতার সমান সুযোগ রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: রাঁধুনিকেও সঙ্গে নিয়ে এল লিঙ্কনরা
তা হলে কি ব্রাজিলের লিঙ্কন, ব্রেনের, পওলিনহো-দের বিরুদ্ধে নির্ধারিত নব্বই মিনিটেই ম্যাচ শেষ করে দেবে জার্মানি? জার্মান কোচ অবশ্য এর কোনও উত্তর দেননি।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে চার ম্যাচে নয় গোল দিয়েছে জার্মানি। কিন্তু হজমও করেছে ছয় গোল। যার মধ্যে রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে ০-৪ হার। সে কথা উঠলে জার্মান কোচ বলছেন, ‘‘ইরান ম্যাচের পর রক্ষণের ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনা করেছি। দলেও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’’
বুধবার গোটা জার্মান দল কেনাকাটা করতে গিয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার কোয়েস্ট মল-এ। তবে এ দিন অনুশীলন ছাড়া হোটেল থেকে কোথাও বেরোয়নি জার্মানরা। যুবভারতীর লাগোয়া মাঠে সন্ধ্যায় যখন অনুশীলন করছিল জার্মানি তখন স্টেডিয়াম সংলগ্ন বাড়িগুলোতে আতসবাজি পোড়ানো হচ্ছিল। অনুশীলনের মাঝে তা মুগ্ধ হয়ে দেখছিল জার্মান অধিনায়ক আর্প ও তার সতীর্থরা।
জার্মানির অনূর্ধ্ব-১৭ এই দলের সঙ্গে এই মুহূর্তে কলকাতায় রয়েছেন জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. হান্স-ডেটার ড্রিউইৎজ। এ দিন জার্মানির অনুশীলন চলাকালীন তিনি বলছিলেন, বিশ্বকাপে খেলার জন্য গত দু’বছর ধরে এক সঙ্গে অনুশীলন করছে এই জার্মান দল। তাঁর কথায়, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ফুটবলার পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়নি। যত সমস্যা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে। তখন ফুটবলাররা পেশাদার হয়ে যায়। ফলে দল গঠন করতে সমস্যা হয়। যেমন হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায় অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে।’’
হান্সের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এগারো বছর বয়স থেকে শুরু হয় ফুটবলার খোঁজার কাজ। গোটা জার্মানিতে এ রকম ফুটবলার খোঁজার কেন্দ্র রয়েছে ৩৬৬ টি। যেখানে ফুটবল শেখানোর পাশাপাশি চলে পড়াশোনা শেখানোও। ক্রোয়েশিয়ায় গত মে মাসে যখন ইউরো অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট চলছিল তখন সেখানে দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন দু’জন শিক্ষক। যাঁরা অবসর সময়ে জার্মান খুদে ফুটবলারদের অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইংরেজি ও জার্মান সাহিত্যের ক্লাস নিতেন।
বিশ্বকাপ খেলতে এসে গোয়াতেও দু’সপ্তাহ ছিল জার্মানি। সেখানেও ছিলেন দুই শিক্ষক। হান্স বলছেন, ‘‘হোমওয়ার্ক করেছে ছেলেরা। কারণ দেশে ফিরেই পরীক্ষা দিতে
হবে ওদের।’’