ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতোই অনেকটা খেলার ধরন অনূর্ধ্ব-১৭ ব্রাজিলের পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলহো (পাওলিনহো)!
সি আর সেভেনের মতোই উইং দিয়ে উঠে কাট করে ভিতরে ঢুকে গোল করতে ভালবাসে। শুধু তাই নয় মাঝমাঠে নেমে এসে আক্রমণে নেতৃত্বও দিচ্ছে ব্রাজিলের ভবিষ্যতের তারকা।
জার্মানির ইয়ান ফিটো আর্প আক্ষরিক অর্থেই স্ট্রাইকার। সারাক্ষণ বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে ছটফট করে ডিফেন্ডারদের অস্বস্তিতে রাখে। দুর্দান্ত হেডার। ইতিমধ্যেই চার ম্যাচে চার গোল হয়ে গিয়েছে ওর। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে যুবভারতী সাক্ষী থাকবে ভবিষ্যতের দুই তারকার দ্বৈরথের।
পাওলিনহো ও আর্পের মধ্যে সেরা কে? এই মুহূর্তে এটা নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে ফুটবলমহলে। প্রাক্তন স্ট্রাইকার হিসেবে আমার মনে হয়, দু’জনেরই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তবে ওদের খেলার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা।
আরও পড়ুন: সুযোগের খোঁজে থাকবে জার্মানি
পাওলিনহোর খেলার ব্রাজিলের ছন্দ, সাম্বার মাদকতা। পাওলিনহো ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে গোল করতে ভালবাসে। তবে স্ট্রাইকারসূলভ স্বার্থপরতা একেবারেই নেই। তাই হতো চার ম্যাচে ওর গোল সংখ্যা মাত্র দুই। তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ পাওলিনহোর আদৌ রয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। ব্রাজিলীয়দের মানসিকতাটাই আলাদা। ফুটবলটা ওরা খেলে আনন্দ পাওয়ার জন্য। ব্যক্তিগত সাফল্য ওদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই কারণেই ব্রাজিল পাঁচ বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন।
রবিবার জার্মানির ডিফেন্ডারদের কিন্তু সব সময় সতর্ক থাকতে হবে পাওলিনহোর জন্য। তবে ওকে ম্যান মার্কিং করে আটকানো কঠিন। ব্রেনের, লিঙ্কন ও অ্যালেনের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া পাওলিনহোর। ম্যাচের মধ্যে ক্রমাগত সতীর্থদের সঙ্গে জায়গা পরিবর্তন করে বিভ্রান্ত করে দেয় ডিফেন্ডারদের।
আর্প বিধ্বংসী। বিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে গোল করাতেই ওর আনন্দ। চিরাচরিত জার্মান মানসিকতাই ফুটে ওঠে ওর খেলার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, শরীর দুর্দান্ত ব্যবহার করে। এই বয়সেই আর্পের ঈর্ষণীয় শরীরের গঠন। রবিবার ব্রাজিলের ডিফেন্ডারদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট হওয়ায় হেডিংয়েও দক্ষ। আর্পের জন্যই জার্মানির স্ট্র্যাটেজিই হচ্ছে, দু’প্রান্ত থেকে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে বল ভাসিয়ে দেওয়া। আর্পের সঙ্গে জন ইবোয়ার বোঝাপড়াও ব্রাজিল ডিফেন্ডারদের দুশ্চিন্তা বাড়াবে।
আর্পকে দেখে মনে হচ্ছে, থোমাস মুলারের যোগ্য উত্তরসূরি পেতে চলেছে জার্মান ফুটবল। অনেক সময় ওকে মুলারের চেয়েও বেশি প্রতিভাবান মনে হয়েছে। আর্পের স্কিল অনেক বেশি। মুলারের প্রধান সমস্যা, মাঝমধ্যেই খেলা থেকে হারিয়ে যায়। আর্প কিন্তু সারাক্ষণই দুর্দান্ত ভাবে উদ্বুদ্ধ করে সতীর্থদের।
তবে রবিবারের ম্যাচ মানে কিন্তু শুধুই পাওলিনহো বনাম আর্প নয়। বিশ্ব ফুটবলের সেরা দুই শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইও।
ব্রাজিল ছন্দময় ফুটবল খেলে গোট বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। জার্মানি মানেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়া। কখনও হার না মানা। ইরানের বিরুদ্ধে জার্মানির চার গোলে হারের পর অনেকেই দেখছি, এই ম্যাচে ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখছে। আমি কিন্তু তাদের সঙ্গে একমত নই। ভুললে চলবে না, জার্মানিও চার বার বিশ্বকাপ জিতেছে। ওদের জাত্যাভিমান ভয়ঙ্কর। তিন বছর আগে বিশ্বকাপে জার্মানি যে সাত গোলে ব্রাজিলকে তাদের ঘরের মাঠে বিধ্বস্ত করবে, সেটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল। এই ধরনের ম্যাচে কেউ এগিয়ে থাকে না। সুতরাং ব্রাজিলও সহজে রবিবার জার্মানিকে হারিয়ে দেবে এ রকম স্বপ্ন না দেখাই ভাল।