তুমি ছিলে, তাই...তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যাবতীয় কুৎসার জবাব দিয়েছিলেন ২৪ ঘণ্টা আগেই। বলেছিলেন, অনুষ্কা শর্মা তাঁর জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মাঠে অনুষ্কার উপস্থিতি যে তাঁকে অনেক কঠিন যুদ্ধ জিতে ওঠার শক্তি দেয়, সে কথাও বলেছিলেন। শনিবার ইডেনে তারই যেন হাতেগরম প্রমাণ দিলেন বিরাট কোহলি। এ দিন অনুষ্কা ছিলেন গ্যালারিতে। বিরাট নিজে রান পাননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর আরসিবি ৩ উইকেটে দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নিল কেকেআরের বিরুদ্ধে। ছবি: উৎপল সরকার
ক্রিস গেইলকে দেখে বোঝা কঠিন, তাঁর মনের মধ্যে ঠিক কী চলছে। শূন্য রানে আউট বা ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে নতুন রেকর্ড, তাঁর মুখের ভাব খুব একটা বদলায় না। আর তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সে ‘ত্যাজ্য’ হওয়ার পর ক্রিস গেইলের মনের ভাব কী ছিল, তাঁর হাবেভাবে অনুমান করা কঠিন। তবে তাঁর ব্যাটের ভাষা পাঠোদ্ধার করা গেলে একটা ব্যাপার জলবৎ তরলং হয়ে যাওয়ার কথা।
সামনে যদি কেকেআর পড়ে, তা হলে গেইল-গর্জন প্রায় অবধারিত। বধ্যভূমি পুরনো ঘরের মাঠ হোক বা নতুন ‘হোম’, গেইল ও সবের ধার ধারেন না। ২০১৩-র ইডেন আছে। সে বছরেরই চিন্নাস্বামী আছে। আর গেইলের নাইট-নিধন কাব্যে যোগ হয়ে গেল শনিবারের ইডেনও।
৫৬ বলে ৯৬ রান, স্ট্রাইক রেট ১৭১.৪২, সাত-সাত চোদ্দোটা বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি। যার নিট ফল: টিম গম্ভীরের বিজয় রথের চাকা দশে দশেই আটকে যাওয়া। টিম কোহলির ‘আইপিএল চোকার্স’ গারদ থেকে সদর্প মুক্তি। ১৭৭ তাড়া করতে নেমে এক ওভার বাকি থাকতেই জয়ের উৎসব শুরু করে দেওয়া।
যে জয় শেষ পর্যন্ত অনায়াস দেখালেও আদৌ সহজ ছিল না। টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা দুনিয়া ১৭৭-কে ভয়ঙ্কর স্কোর বলবে না। কিন্তু কেকেআর বোলিং তো আর পাঁচটা টিমের বোলিং নয়। সুনীল নারিন-মর্নি মর্কেলদের ইকনমি রেট সব ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে সবচেয়ে কম। তার উপর ইডেনে এ দিন অভিষেক ঘটালেন নতুন রহস্য স্পিনার কারিয়াপ্পা, গম্ভীরের কথায় টিমের ‘অজানা ফ্যাক্টর’।
গম্ভীররা যখন শুধুই দর্শক। ছবি: উৎপল সরকার
এ হেন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আরসিবির শুরুটা যা হল, তাতে মনে হচ্ছিল ম্যাচ দেখতে আসা অনুষ্কা শর্মা বুঝি আবার বিরাট-ভক্তদের রোষের সামনে পড়বেন! পাঁচ ওভার কাটেনি, ডাগআউটের পথে বিরাট। দু’ওভার যেতে না যেতে আরসিবির ব্যাটিং-শিরদাঁড়ায় জোড়া ধাক্কা ইউসুফ পাঠানের। নাইট ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময় যে দায়িত্ব নিয়ে মণীশ পাণ্ডেকে রান আউট করেছিলেন, বল হাতে সেটা সুদে-আসলে পুষিয়ে দিলেন পাঠান। এক ওভারে দীনেশ কার্তিক আর মন্দীপ সিংহকে ফিরিয়ে। আরসিবি ৫৬-৩, চল্লিশটা রান হতে না হতে স্টাম্পের পিছনে রবিন উথাপ্পা নামক বিদ্যুতে প়ৃষ্ট এবি ডে’ভিলিয়ার্স। একটু পর ডারেন স্যামি স্টাম্পড। উন্মত্ত টিম গম্ভীর, গ্যালারির গর্জন কান নয়, ধাক্কা মারছে সোজা হৃদপিণ্ডে। আর তো কেউ নেই গেইল ছাড়া। একটা, মাত্র একটা বল আর চাই।
চার ওভারে আরসিবির দরকার ৪৬। এখনও সেই বলটা এল না। গেইল এখনও ক্রিজে, সাকিব আল হাসানকে পরপর দুটো ছয় মেরে টার্গেট প্রায় তাঁর পকেটে।
সুনীল নারিন— পারবেন তিনি? স্কোরবোর্ড তো দেখাচ্ছে এখন পর্যন্ত করেছেন তিন ওভার, রানও দশের বেশি দেননি। কিন্তু না, ক্যারিবিয়ান কালবৈশাখীর সামনে তিনিও আজ খড়কুটো। একটা ছয় গেল ‘এল’ ব্লকে, পরেরটা ওই একই জায়গায়, এ বার চার। পরম কৃপণ নারিনকে শেষ ওভারে হজম করতে হল ১৭। আরসিবির চাই আর মোটে ১৪, হাতে দু’দুটো ওভার। মর্কেল এলেন, প্রথম বলেই ছয়। বাউন্ডারির ধারে গেইল এ বার মণীশ পাণ্ডের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের শিকার না হলে হয়তো কলকাতার বিরুদ্ধে আসত আর একটা সেঞ্চুরি। হয়তো জয়ের রানটাও তুলে দিত গেইলের ব্যাট।
ইডেনে কেকেআর বনাম বেঙ্গালুরু ম্যাচে আরসিবি চিয়ারলিডারদের নাচ। ছবি: উত্পল সরকার
কিন্তু তাতে গেইল বা তাঁর টিমের আফসোসের কোনও কারণ থাকার কথা নয়। প্রায়-নিশ্চিত হার থেকে টিমকে জয়ের পা-দানিতে তুলে দেওয়া, অর্ধেক আনফিট শরীর নিয়ে বারবার দ্রুত সিঙ্গলস নিতে দৌড়নো, আগ্রাসনের সঙ্গে সতর্কতা একেবারে সঠিক অনুপাতে মেশানো— দিনের শেষে এগুলোই মনে থাকবে। গৌতম গম্ভীর যে আইপিএলে ২৫তম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড করলেন, আন্দ্রে রাসেল যে সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির চেন্নাই ঠ্যাঙানো আন্দ্রে রাসেল হয়ে উঠলেন, রবিন উথাপ্পা যে আবার বুঝিয়ে গেলেন গত আইপিএলের ফর্ম ফ্লুক ছিল না, আরসিবি ফিল্ডিং যে আগাগোড়া হাস্যকর হয়ে থাকল, গেইলকে যে একাধিক বার জীবন দিলেন নাইট ফিল্ডাররা, তবু ক্যাপ্টেন গম্ভীর ক্যাপ্টেন কোহলিকে রণনীতিতে পাঁচ গোল দিলেন, গেইলের গুলিগোলায় সে সব স্রেফ ফুটনোট হয়ে থাকবে।
আর এ ভাবেই যদি চলতে থাকে, লোকে যদি এ ভাবেই পড়তে থাকে গেইল-গিলোটিনে, আইপিএল শেষে যদি দেখা যায় দলে দলে বোলার বেরোচ্ছেন নতুন চাকরির খোঁজে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কলকাতা নাইট রাইডার্স
১৭৭-৬, গম্ভীর ৫৮, রাসেল ৪১ ন.আ., চাহাল ১-২৮
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
১৭৯-৭ (১৯ ওভারে), গেইল ৯৬, ডে’ভিলিয়ার্স ২৮, ইউসুফ পাঠান ২-৪০, সাকিব ১-১৭