Paris Olympics 2024

চুরি গিয়েছে সুরক্ষার নীল নকশা, বন্‌ধের হুঁশিয়ারি, শুরুর আগেই ৫ সমস্যায় প্যারিস অলিম্পিক্স

১৫ দিন পরে শুরু হওয়ার কথা প্যারিস অলিম্পিক্স। কিন্তু এখনও পুরো প্রস্তুতি শেষ হয়নি। শুরু হওয়ার আগেই বিপাকে অলিম্পিক্সের আয়োজকেরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৯:২১
Share:

অলিম্পিক্স উপলক্ষে সেজে উঠেছে আইফেল টাওয়ার। —ফাইল চিত্র।

২৬ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে প্যারিস অলিম্পিক্স। আর ১৫ দিন বাকি থাকলেও এখনও পুরো প্রস্তুতি শেষ হয়নি। শুরু হওয়ার আগেই বিপাকে অলিম্পিক্সের আয়োজকেরা। বেশ কয়েকটি সমস্যায় পড়েছে তারা। সুরক্ষা বন্দোবস্ত থেকে শুরু করে আয়োজনের খরচ, চ্যালেঞ্জ সামলাতে হচ্ছে ফরাসি প্রশাসনকে।

Advertisement

১) চুরি গিয়েছে সুরক্ষার নীল নকশা— প্যারিস অলিম্পিক্সে সুরক্ষা বন্দোবস্ত কেমন থাকবে তার নীল নকশা চুরি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এক ইঞ্জিনিয়ারের কাছে অলিম্পিক্সের সুরক্ষার নীল নকশা ছিল। তিনি সেটি একটি কম্পিউটারে রেখেছিলেন। কিন্তু ট্রেন বদল করার সময় কোনও ভাবে তাঁর ব্যাগ চুরি হয়ে যায়। তার মধ্যেই ছিল কম্পিউটার। ব্যাগ উদ্ধার করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ব্যাগ উদ্ধার না হলে সুরক্ষা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে সুরক্ষা বন্দোবস্ত পুরো বদলে ফেলতে হতে পারে। এমনিতেই প্যারিসের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কিছু দেশ। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তারা। তার মাঝে সুরক্ষার নীল নকশা চুরি হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।

২) বন্‌ধের হুঁশিয়ারি বিমানবন্দরের কর্মীদের— অলিম্পিক্স শুরু হওয়ার আগেই প্যারিসের বিমানবন্দরের কর্মীদের সংগঠন বন্‌ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দরের অনেক কর্মী বোনাস পাননি। অবসর নেওয়া কিছু কর্মীকে অবসরকালীন ভাতা দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। অলিম্পিক্সের সময় প্যারিসের দু’টি বিমানবন্দরে গড়ে সাড়ে ৩ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করবেন। সেই সময় যদি কর্মীরা বন্‌ধ করেন তা হলে পরিষেবায় সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে মুখ পুড়বে আয়োজকদের। কর্মীদের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে প্রশাসন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Advertisement

৩) লাগামছাড়া খরচ— প্রথমে অলিম্পিক্সের আয়োজনের জন্য যে খরচ হিসাব করা হয়েছিল, তা বেড়েই চলেছে। গত চার বছরে বাজেট বাড়তে বাড়তে ৩৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তার একটা বড় অংশ জনগণের কর থেকে পাওয়া যাবে। কিন্তু বাকিটা কী ভাবে বিনিয়োগ করা হবে তা নিয়ে সরকার সমস্যায় পড়েছে। এই পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে লাগাতার বৈঠক চলছে।

৪) পরিবহণের সমস্যা— প্যারিসে পরিবহণের সমস্যা রয়েছে। এমনিতেই সেখানে জনসংখ্যা বেশি। অলিম্পিক্স উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে যাবেন। অলিম্পিক্সের বিভিন্ন খেলা যে সব জায়গায় হবে সেগুলিকে দু’টি মেট্রো লাইনের মাধ্যমে জোড়ার কাজ চলছে। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। রাস্তায় যানজটের কারণে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে অনেক সময় লাগে। অলিম্পিক্স চলাকালীন যানজটের সমস্যা মেটানো সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

৫) ফ্রান্সে ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট— প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর দল রেনেসাঁ পার্টির নেতৃত্বাধীন এনসেম্বল জোট রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে আসনসংখ্যায় শীর্ষে চলে আসছে বামপন্থী দলগুলির জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্ট’। সেই জোটও সরকার গঠনের জাদুসংখ্যা ২৮৯ থেকে অনেক দূরে। এই পরিস্থিতিতে মাকরঁর দলের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালাতে চান তিনি। প্রেসিডেন্ট মাকরঁ এখনও মুখ খোলেননি। তাতেই সমস্যায় পড়েছেন অলিম্পিক্স আয়োজকেরা।

প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী আটাল। কিন্তু তিনি ইস্তফা দিতে চাওয়ায় তৈরি হয়েছে সমস্যা। তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হাতে অলিম্পিক্সের মতো গেমসের উদ্বোধন করাতে চাইছেন না আয়োজকেরা। ২৬ জুলাইয়ের আগে ফ্রান্স নতুন প্রধানমন্ত্রী পেয়ে গেলে ভাল। তেমন সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। নতুন সরকার গঠনের জন্য কোনও জোটই অন্য কোনও জোটকে সমর্থনের কথা জানায়নি। আবার একক ভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না কোনও জোট। বল এখন মাকরঁর কোর্টে। তিনি ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আটালকে প্রধানমন্ত্রী রেখে কাজ চালিয়ে যেতে চাইলে সমস্যা মিটবে না অলিম্পিক্স আয়োজকদের। ফ্রান্স প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর পর গুরুত্বপূর্ণ পদ অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীর। উদ্বোধক হিসাবে তাঁর কথাও ভাবা হচ্ছে। তবু নজর রাখা হচ্ছে মাকরঁর সিদ্ধান্তের দিকে। রয়েছে প্রশাসনিক স্তরে অস্থিরতার উদ্বেগও। অলিম্পিক্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে সংশ্লিষ্টেরা কতটা অলিম্পিক্সের জন্য সময় দিতে পারবেন, তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার নতুন সরকার এসে সংশ্লিষ্ট কোনও আধিকারিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়েও দিতে পারে। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, অলিম্পিক্সের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা বজায় থাকলে, বিশ্বের সামনে ফ্রান্সের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement