জকোভিচ-নাদাল, বহু প্রতীক্ষিত কোয়ার্টার ফাইনালটা যতটা মারকাটারি, উথাল-পাথাল করা ক্লে কোর্ট ক্লাসিক হবে বলে প্রত্যেকে আশায় ছিলেন, ততটা হল না।
তার জন্য অবশ্য আমার কোনও নালিশ নেই!
যেহেতু ম্যাচটার গোড়া থেকেই আমার ছাত্রের স্ট্র্যাটেজি পরিষ্কার ছিল— চূড়ান্ত আগ্রাসী টেনিসে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যাকফুটে পাঠানোর কাজটা নিশ্চিত করে ফেলা। প্রথম কয়েক মিনিট নোভাক অসাধারণ খেলে ঝড়ের গতিতে ৪-০ এগিয়ে গেলেও নাদালও হল নাদাল! ঠিক পাল্টা লড়াই দিয়ে সমান-সমান করে দিল। নোভাক ৫-৩ এগিয়ে থেকেও সেটটা শেষ করতে পারেনি। যদিও শেষমেশ ৭-৫-এ জিতল।
কিন্তু জটিল প্রথম সেটটা নোভাক একবার পকেটে পুরে ফেলার পরে ও ঠিক সেই টেনিসটা খেলতে শুরু করল যার জন্য পুরুষদের সার্কিট অনেক দিন ধরেই ওর শাসনাধীন।
ম্যাচটার আগে আমাদের মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছিল। যদিও এখানে সবিস্তার সেটা আমি লিখতে পারব না। তবে আলোচনায় অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে একটা ছিল যে, এই ম্যাচটাই নোভাকের কাছে সুবর্ণ সুযোগ গত বারো মাসে ওর যে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে সেটাকে এক ধাক্কায় আরও অনেকটা উঁচুতে তোলার। সমস্ত ধরনের সারফেসকেই নোভাকের কী অসাধারণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আর ওর ফিটনেসকে কোন অবিশ্বাস্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে! এক কথায় অনবদ্য।
আজকের নোভাক এক জন কমপ্লিট প্লেয়ারের চেয়েও বেশি এবং নিজের অসাধারণ ক্ষমতার ব্যাপারে নিশ্চিত রূপে ওয়াকিবহাল। আর ঠিক সেটারই প্রমাণ বুধবারের রোলাঁ গারোয় নোভাক রেখেছে।
ম্যাচটায় নাদালের হারের পর লক্ষ্য করলাম ওর আগাম শোকগাথা লেখালেখি শুরু হয়ে গিয়েছে। যা আমার মতে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে অনেক দিন যাবৎ ও চোট নিয়ে ভুগেছে। কিন্তু ওর বয়স মাত্র ঊনত্রিশ এবং যে ভাবেই হোক আরও খেলবে। তার চেয়েও বড় কথা, পুরুষদের সার্কিটে নাদালের মতো জিনিয়াস আর ক্যারিশমার দরকার আছে। এবং আমি নাদাল-ভক্তদের পরিষ্কার বলে দিতে চাই— ওর শেষ আমরা এখনও মোটেই দেখিনি। একই কথা আমি রজার ফেডেরার সম্পর্কেও বলব। ওরা দু’জন আমার চোখে অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন, যাদের নামের পাশে এখনই ‘ছিল’-র মতো ‘পাস্ট টেন্স’ বসানো অসম্ভব।
শুক্রবার পুরুষ সেমিফাইনাল প্রসঙ্গে বলব, অ্যান্ডি মারে নিয়ে আমার আগের কলামেই লিখেছি প্যারিসে ওর অসাধারণ ফর্ম চলেছে। বরাবর ওকে ক্লে কোর্টে অস্বাচ্ছন্দ্য দেখায়। কিন্তু এ বার রোলাঁ গারোয় লম্বা র্যালি, বেসলাইন লড়াইকেই অ্যান্ডি বরং উপভোগ করছে। আবার নোভাকের সঙ্গে যখনই মারে খেলে ওর সেরাটা বেরিয়ে আসে। যার শেষ প্রমাণ গত অস্ট্রেলীয় ওপেন ফাইনাল। আমি তো বলব আজ নোভাক ‘ওয়েফার’-এর মতোই হালকা এগিয়ে রয়েছে। ওকে ফাইনালে উঠতে যেমন নিজের সমস্ত গোলাগুলি ছুড়তে হবে কোর্টে, তেমনই ম্যাচের শুরুটা নিশ্চিত ভাবে ভাল করতে হবে।
অন্য সেমিফাইনালে গ্যালারির পুরো সমর্থন স্থানীয় তারকা সঙ্গার দিকে থাকলেও ওয়ারিঙ্কা যদি ফেডেরার-বধের দিনের ফর্মে থাকে তা হলে ওকে শুক্রবারও আটকানো প্রায় দুঃসাধ্য!