ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ থেকে ধীরগতির ব্যাটিং। মনোজ প্রভাকরের ক্রিকেট জীবন বার বার বিতর্কের কেন্দ্রে। তবে শুধু মাঠেই নয়, বিবাহিত জীবনেও তিনি বিতর্কিত। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য চলাকালীন অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এক ছেলের বাবা প্রভাকর।
যাঁর সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন, তিনি বলিউডের নায়িকা ফারহিন। কোনও এক সময়ে ফরহীনকে বলা হত মাধুরী দীক্ষিতের লুক অ্যালাইক। তবে মাধুরীর সমরূপী হয়েও তাঁর কেরিয়ার দীর্ঘ হয়নি ইন্ডাস্ট্রিতে।
ফরহীনের প্রথম হিন্দি ছবি ‘জান তেরে নাম’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯২ সালে। এরপর ‘আগ কা তুফান’, ‘মেরি আন’, ‘দিল কি বাজি’, ‘সৈনিক’, ‘নজর কে সামনে’, ‘সাজন কে ঘর’-সহ কিছু বলিউডি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পরিচিত বিন্দিয়া নামে। অভিনয় করেছেন কন্নড়, তামিল এবং মালয়লম ভাষার কিছু ছবিতে। ফরহীনের শেষ হিন্দি ছবি ‘অগ্নি প্রেম’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে। পরের বছর একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এরপর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে।
ফরহীনের দাবি, ‘বাজিগর’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ তাঁর কাছে এসেছিল। কিন্তু তিনি সে সময় কমল হাসনের সঙ্গে অন্য একটি ছবিতে অভিনয় করছিলেন। তাই ‘বাজিগর’-এ শাহরুখের সঙ্গে কাজের সুযোগ তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল।
নয়ের দশকের মাঝামাঝি ক্রিকেটার প্রভাকরের সঙ্গে পরিচয় হয় ফরহীনের। ক্রমে তাঁদের আলাপ ঘনিষ্ঠ হয়। আলাপ থেকে প্রণয়। বলিউডের নায়িকা, তাঁর থেকে বয়সে ৮ বছরের ছোট ফরহীনের প্রেমে পড়েন প্রভাকর।
টিনেসল টাউনের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, ফরহীনের সঙ্গে লিভ ইন শুরু করেন প্রভাকর। ৪ বছর পর ফারহিনকে ছেড়ে তিনি নাকি ফিরে যান প্রথম স্ত্রী সন্ধ্যার কাছে। তখন প্রভাকর-ফরহীনের প্রথম সন্তানের বয়স ১ বছর।
কিন্তু সন্ধ্যার সঙ্গে প্রভাকরের দাম্পত্য ক্ষতে প্রলেপ পড়েনি। কয়েক বছর পরে ২০০৬ সালে প্রভাকরের বিরুদ্ধে আদালতে পণের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ করেন সন্ধ্যা।
বর্তমানে অবশ্য প্রভাকর দিল্লিতে থাকেন ফরহীনের সঙ্গে। তাঁদের বড় ছেলে রাহিলের বয়স ২০ বছর। ছোট ছেলে মানবংশ ১৫ বছরের। মনোজ প্রভাকর এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী সন্ধ্যার একমাত্র ছেলে রোহনও তাঁর স্ত্রী ও সন্তান-সহ থাকেন তাঁদের সঙ্গে।
গত বছর হঠাৎই প্রভাকরের পারিবারিক বিবাদ জায়গা করে নেয় শিরোনামে। বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী সন্ধ্যা। প্রসঙ্গত প্রভাকরের থেকে বয়সে ৩ বছরের বড় সন্ধ্যা দ্বিতীয় বার বিয়ে করে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।
পুলিশের কাছে সন্ধ্যার অভিযোগ ছিল, প্রভাকর এবং ফরহীন দু’জনে মিলে চক্রান্ত করে তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁকে নাকি হুমকি দিয়েছেন ফরহীন। অভিযোগ সন্ধ্যার।
এফআইআর-এ সন্ধ্যার বক্তব্য ছিল, দিল্লির সর্বপ্রিয় বিহারে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্বামী প্রয়াত লক্ষ্মীচাঁদ পণ্ডিত। ২০০৬ অবধি ওই ফ্ল্যাটে থাকতেনও সন্ধ্যা। এরপর তিনি ঠিকানা পরিবর্তন করলে ওই ফ্ল্যাটটি বছর দুয়েক আগে অবধিও মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাচক্রে একই আবাসনে ফরহীনকে নিয়ে সপরিবার থাকেন প্রভাকরও।
সন্ধ্যার অভিযোগ, প্রয়াত লক্ষ্মীচাঁদের ফ্ল্যাটের তালা খুলে সেটি জবরদখল করেছে মনোজের লোকজন। অন্যদিকে, প্রাক্তন স্ত্রীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রভাকর। দু’ পক্ষের এই চাপান-উতোর ঘিরে জল গড়ায় বহু দূর।
১৯৮৪ সালে জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পাওয়া প্রভাকরকে নিয়ে মাঠের বিতর্কও কিছু কম নয়। ১৯৯৯ সালে ম্যাচ গড়াপেটা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রভাকরকে নির্বাসিত করে বিসিসিআই। তার ৫ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপরীতে কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ান ডেতে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে অভিযুক্ত হন প্রভাকর এবং নয়ন মোঙ্গিয়া।
সেই ম্যাচে মোঙ্গিয়া ২১ বলে ৪ রান করেছিলেন। অন্য দিকে, প্রভাকর ১৫৪ বলে ১০২ রান করলেও তাঁর বিরুদ্ধে অহেতুক ধীর ব্যটিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। ২৫৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ৫ উইকেটে ২১১ রানে গিয়ে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। সেই ম্যাচ ঘিরেও গড়াপেটার অভিযোগ তীব্র হয়েছিল।
৩৯ টেস্টে প্রভাকরের মোট রান ১৬০০। উইকেট পেয়েছেন ৯৬টি। সেরা ৯২ রানে ৬ উইকেট। ১৩০ ওয়ান ডেতে রান করেছেন ১৮৫৮। উইকেট শিকার ১৫৭ টি। সেরা বোলিং ৩৩/৫।
১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল তাঁর কেরিয়ারের শেষ ওয়ান ডে। এরপর তিনি অবসর নিয়ে নেন। ক্রিকেট ছাড়ার পরে দিল্লি এবং রাজস্থান ক্রিকেট দলের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ক্রিকেটের পাশাপাশি পা রেখেছিলেন রাজনীতিতেও। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ।১৯৯৬ সালে ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে যোগ দেন অল ইন্ডিয়া ইন্দিরা কংগ্রেস ( তিওয়ারি) দলে। সে বছরই লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিল্লি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০০১ সালে চিটফান্ড কাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। (ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)