মোহনবাগান নির্বাচনে প্রার্থী বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আমলাও

ক্লাব প্রশাসনে আসার জন্য এ বার মোহনবাগান নির্বাচনে কার্যত নজিরবিহীন ভাবে ভোট-যুদ্ধে নেমে পড়লেন প্রাক্তন ফুটবলাররা। ফুটবল সচিব পদে দুই ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য বনাম সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের লড়াই যেমন হচ্ছে, তেমনই কর্মসমিতিতে আসার জন্য সোমবার মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন ক্লাবের আরও দুই ফুটবলার বিদেশ বসু এবং শঙ্কর সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

লড়াইয়ে থাকা তিন প্রাক্তন। বিদেশ বসু, সুব্রত ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

ক্লাব প্রশাসনে আসার জন্য এ বার মোহনবাগান নির্বাচনে কার্যত নজিরবিহীন ভাবে ভোট-যুদ্ধে নেমে পড়লেন প্রাক্তন ফুটবলাররা।

Advertisement

ফুটবল সচিব পদে দুই ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য বনাম সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের লড়াই যেমন হচ্ছে, তেমনই কর্মসমিতিতে আসার জন্য সোমবার মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন ক্লাবের আরও দুই ফুটবলার বিদেশ বসু এবং শঙ্কর সরকার।

শাসকগোষ্ঠীর প্যানেলে থাকছেন সত্যজিৎ আর বিদেশ। উল্টো দিকে বিরোধীদের প্যানেলে রয়েছেন সুব্রত এবং শঙ্কর। তবে গুরু-শিষ্যর লড়াই ঘিরেই উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

এ দিন মনোনয়ন জমা দিতে এসে ক্লাব তাঁবুতে সুব্রতর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় সত্যজিতের। সুব্রত নিজেই ডাকেন সত্যকে। বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিস? বালির (সত্যজিতের বাড়ি যেখানে) ভোটগুলো নেওয়ার চেষ্টা কর।’’ পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সুব্রত রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সত্যকে। বলেন, ‘‘ঠিক মতো ভোট হলে আমিই জিতব, চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গেলাম।’’ আর সত্য বলেন, ‘‘আমি জিতব, এই ব্যাপারে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।’’

এ দিনই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দেখা যাচ্ছে, যুযুধান দুই পক্ষেই প্রচুর চমক আছে। শেষ মুহূর্তে বিদেশকে মনোনয়ন পত্রে সই করিয়ে যেমন চমক দিয়েছেন টুটু-অঞ্জনরা, তেমনই সহ-সচিব পদে পদ্মশ্রী বিজ্ঞানী বিমল রায়কে সই করিয়ে চমক দিয়েছেন বলরাম চৌধুরীরা। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সিটিটিউটের ডিরেক্টর বিমলবাবু লড়বেন বর্তমান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসুর বিরুদ্ধে।

দু’পক্ষেই মাঠের পরিচিত মুখ ছাড়াও নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন রাজনৈতিক জগতের বহু নেতা। বিরোধীদের প্যানেলে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, হাওড়ার বিধায়ক অশোক ঘোষ, মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ, বিধাননগরের পুরপিতা বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছেন। তেমনই শাসকদের প্যানেলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছেন মাঠ-সচিব পদে।

সচিব পদে অঞ্জন মিত্রর বিরুদ্ধে ল়ড়তে নেমেছেন বলরাম চৌধুরী। অর্থসচিব পদে দেবাশিস দত্তের প্রতিপক্ষ বাণীব্রত। কোষাধ্যক্ষ পদে মদন দত্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন পার্থসারথি মিত্র।

শাসকগোষ্ঠী তাদের প্যানেল থেকে পাঁচ জনকে বাদ দিয়েছে। সত্যজিৎ ফুটবল সচিব পদে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বর্তমান ফুটবল সচিব উত্তম সাহা দাঁড়াচ্ছেন টেনিস সচিব পদে। গত দশ বছরের মাঠ সচিব স্বাধীন মল্লিককে কেন সরিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে অবশ্য গুঞ্জন রয়েছে ক্লাব তাঁবু জুড়ে। শাসকগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট পদে টুটু বসুই নির্বাচনের পর থাকবেন, জানিয়ে দিয়েছেন শাসকরা। বিরোধীগোষ্ঠী অবশ্য কোনও নাম ঘোষণা করেনি। এ দিন প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসে বিরোধীদের প্রধান মুখ সুব্রত ভট্টাচার্য বলে দেন, ‘‘আমরা জিতে আসার পর প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম জানাব। অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে।’’ বিরোধীদের প্যানেলে অবশ্য দু’জন নামী ব্যক্তিত্ব দাঁড়িয়েছেন। এঁদের এক জন শল্যচিকিৎসক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জন আইএএস জ্যোতির্ময় মাইতি। শাসকদের প্যানেলে ফের দাঁড়াচ্ছেন ক্লাব সচিবের মেয়ে সোহিনী মিত্র। সোহিনী ছা়ড়া আর কোনও মহিলা সদস্য নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন না।

শাসকরা এ দিন কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করে প্যানেল জানাননি। টুটু-অঞ্জন-দেবাশিস-সৃঞ্জয়রা ব্যস্ত ছিলেন কর্মসমিতির সভা এবং নির্বাচন আধিকারিকদের সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক নিয়ে। সেখানে ঠিক হয়, ২৪ এপ্রিল মনোনয়ন পরীক্ষা করা হবে। ২৯ এপ্রিল ভোটের তারিখ জানানো হবে। নির্বাচন কমিটির প্রধান প্রাক্তন বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মে-র দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন করতে চাই। সবার সঙ্গে কথা বলেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’’ কোথায় নির্বাচন হবে, তা অবশ্য তিনি জানাতে পারেননি। তবে ইঙ্গিত দেন কোনও বড় জায়গা না পাওয়া গেলে, ক্লাব তাঁবুতেও নির্বাচন হতে পারে। কুড়িটি পদের জন্য মোট ৪২টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। বাগানের এ বারের ভোটারের সংখ্যা ৯১৩৫ জন। তাঁদের মন পেতে এ দিন থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছে দু’ পক্ষই। সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের প্যানেল জানাতে এসে বিরোধী সচিব পদ প্রার্থী বলরাম চৌধুরী বলে দেন, ‘‘যত ভোটার আছেন তাঁরা সবাই মাঠে আসলে চেয়ার পাবেন তো? গ্যালারি তো ওরা শেষই করতে পারেনি। সদস্যদের ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ দিতে পারেনি ওরা। আমরা সেটাই করব। চাই স্বচ্ছ হোক মোহনবাগান।’’

বলরাম, সুব্রতরা জানিয়ে দেন, ভোট পেতে জেলায়, জেলায় সভা করবেন। যা শুনে বর্তমান সচিব অঞ্জন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা কুড়ি বছর ধরে পড়াশোনা করেছি। আমরা যে ভাল রেজাল্ট করব, সেটা আমাদের জানা। সদস্যরা জানেন আমরা কত স্বচ্ছ ভাবে ক্লাব চালিয়েছি।’’

ভোটের দামামা বেজে যেতেই বাগান তাঁবুতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে আই লিগ জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে উত্তেজনার পাশাপাশি ভোট নিয়েও উত্তেজনা।

তবে এ দিন শাসকদের দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত নন। উল্টো দিকে বিরোধী শিবির এ দিন থেকেই জাল ভোটের কথা বলতে শুরু করেছে। ভোট যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য আদালতেও নাকি যাচ্ছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement