বিপন্ন: বিদেশি চয়ন নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ছবি: টুইটার।
মরসুম বদলে যায়। লাল-হলুদে ব্যর্থতার ধারা অপরিবর্তিতই থাকে! গত বার এগারো দলের আইএসএলে নবম স্থানে শেষ করেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। এ বার কি সবার শেষে থাকবে মশাল-বাহিনী? এটিকে-মোহনবাগানের কাছে শনিবারের ডার্বিতে ০-৩ হারার পর থেকে এই আতঙ্কেই ভুগতে শুরু করেছেন লাল-হলুদের প্রাক্তন তারকা ও সমর্থকেরা।
আইএসএলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার। গত মরসুমে শেষ ম্যাচে এই দলের কাছেই ৫-৬ গোলে হেরেছিল লাল-হলুদ। এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমে ক্ষুব্ধ সমর্থকদের কেউ কেউ ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া ব্যর্থ বিদেশি ফুটবলারদের নামের তালিকা পোস্ট করে লিখছেন, ‘‘ফ্রানিয়ো পর্চে, ড্যানিয়েল চিমা, টমিস্লাভ মর্সেলা, ড্যারেন সিডোয়েল, আমির দেরভেসেভিচরা সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। লাল-হলুদের ইতিহাসে এত নিম্নমানের বিদেশি কখনও আসেনি।’’
কেন এই বেহাল অবস্থা দলের? দল গঠনে ব্যর্থতার জন্য লাল-হলুদের লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা আঙুল তুলছেন ইস্টবেঙ্গলের ক্লাব কর্তৃপক্ষের দিকে। দাবি করছেন, ‘‘চুক্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই ভারতীয় ফুটবলার যাদের নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম, তারা এই ডামাডোলের জন্য অন্য ক্লাবে চলে গিয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে দল গড়তে হয়েছিল আমাদের।’’ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তারা বলছেন, ‘‘ক্রীড়া স্বত্ব তো লগ্নিকারী সংস্থার কাছেই ছিল। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে দল গঠন করা যাবে না, এ রকম কোনও শর্ত তো ছিল না। লগ্নিকারী সংস্থা অনেক সময় পেয়েছিল। আসলে ওরা শক্তিশালী দল গড়তেই চায়নি।’’
ভাল মানের ভারতীয় ফুটবলারদের সই করাতে না পারার জন্য ক্লাব কর্তাদের দায়ী করছে লগ্নিকারী সংস্থা। কিন্তু আইএসএলে পার্থক্য তো গড়ে দিচ্ছেন বিদেশিরাই। এটিকে-মোহনবাগানের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন হুগো বুমোস, রয় কৃষ্ণ, জনি কাউকো, কার্ল ম্যাকহিউ, ডেভিড উইলিয়ামস, তিরি-রা। এই কারণেই দল গঠনে ব্যর্থতার জন্য ক্লাব ও লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তির দিকেও আঙুল উঠছে। ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র সমরেশ চৌধুরী বলেই ফেললেন, ‘‘আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ ছাড়া বাকি পাঁচ বিদেশিই অত্যন্ত নিম্নমানের। পর্চে, মর্সেলা, চিমাদের খেলা দেখে মনে হয়েছে জোর করে মাঠে নামানো হয়েছে।’’ আই এম বিজয়নও বললেন, ‘‘লাল-হলুদ জার্সি পরে এত নিম্ন মানের বিদেশিদের কখনও খেলতে দেখিনি।’’
এসসি ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ বিদেশি নির্বাচন নিয়ে কোচ ম্যানুয়েল দিয়াসের কোর্টেই বল ঠেললেন। বলছেন, ‘‘এই ছয় বিদেশির বায়োডাটা ও খেলার ভিডিয়ো দেখে কোচই তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’’ এর পরেই যোগ করেন, ‘‘আর কয়েকটা ম্যাচ দেখা যাক। তার পরে আমরা বিদেশিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’’ সূত্রের খবর, জানুয়ারিতে ব্রাইট এনোবাখারেকে ফেরানোর ভাবনা-চিন্তা চলছে লাল-হলুদ শিবিরে। প্রশ্ন উঠছে কেন কোচকেই শুধু কাঠগড়ায় তোলা হবে? দায় নিতে হবে লগ্নিকারী সংস্থার কর্তাদেরও। টানা দুই মরসুমে যে বিদেশি নির্বাচনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তাঁরা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ডামাডোলের জন্য যেমন ক্লাব কর্তারা, তেমনই দল গঠনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী লগ্নিকারী সংস্থা। ক্ষুব্ধ সমরেশ বললেন, ‘‘দু’পক্ষই সমান দায়ী। লগ্নিকারী সংস্থার কর্তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত যখন নিলেন, তা হলে আগে থেকে কেন দল গড়ার কাজ শুরু করলেন না?’’ আর এক কিংবদন্তি গৌতম সরকারও বললেন, ‘‘ফুটবলার নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। ডার্বি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল ১৯৭৫ সালের পাঁচ গোলের নজির ভেঙে যাবে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিদেশিদের ন্যূনতম ফুটবল জ্ঞানও নেই।’’ যোগ করলেন, ‘‘ক্লাব ও লগ্নিকারী সংস্থার দ্বন্দ্বে ইস্টবেঙ্গলের সম্মানই মাটিতে মিশে যাচ্ছে বারবার। জানি না, কবে এই সমস্যা মিটবে।’’
উত্তর খুঁজছেন লাল-হলুদ সমর্থকরাও।