প্রস্তুতি: অভিষেক বিশ্বকাপ স্মরণীয় করার অনুশীলনে গাভি। ছবি রয়টার্স।
ফুটবল দর্শন তাঁদের দু’জনেরই একই। ম্যাচের শুরু থেকেই বিপক্ষকে চাপে রেখে জিততে মরিয়া দুই চাণক্যই।
কাতারে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম ম্যাচেই সফল স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে। ব্যর্থ জার্মানির ‘বস’ হ্যান্সি ফ্লিক।
তিকি-তাকার মায়াজালে কোস্টা রিকাকে বিভ্রান্ত করে ৭-০ দুরন্ত জয়ের পরে শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা অনেকটাই উজ্জ্বল করে ফেলেছে স্পেন। কিন্তু জাপানের কাছে ১-২ গোলে হেরে বিদায়ের আতঙ্ক চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মান শিবিরে। আজ, রবিবার আল বায়েত স্টেডিয়ামে স্পেনের বিরুদ্ধে ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছে টমাস মুলারদের বিশ্বকাপ-ভাগ্য।
কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ৭-০ গোলে দুরন্ত জয়ের পর থেকেই উচ্ছ্বাস ভাসছেন স্পেনের সমর্থকরা। ব্যতিক্রম নন সাংবাদিকরাও। শনিবার বিকেলে দোহা কনভেনশন সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠক কক্ষে এনরিকে প্রবেশ করতেই জয়ধ্বনি শুরু করে দিলেন তাঁরা। ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ হয়নি স্পেনীয় কোচের। বলেই দিলেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে কোস্টা রিকাকে হারালেও এখনও আমরা শেষ ষোলোয় খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। এখনই এত উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি না। রবিবার আমাদের প্রতিপক্ষ এমন একটা দল, যারা চার বার বিশ্বকাপ জিতেছে। জার্মানি প্রথম ম্যাচে হারলেও কী করে ওদের অতীতের সাফল্যকে অস্বীকার করব?’’ যোগ করলেন, ‘‘ফ্লিক ও আমার দর্শনে কোনও পার্থক্য নেই। আমাদের দু’জনেরই লক্ষ্য থাকে শুরু থেকে বিপক্ষের উপরে আধিপত্য বিস্তার করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। যাঁরা মনে করছেন, জার্মানিকে আমরা সহজেই হারিয়ে দেব, আমার মতে তাঁরা ভুল করছেন। এই ম্যাচটা মোটেও সহজ হবে না।’’
বছর দু’য়েক আগে উয়েফা নেশনস কাপে জার্মানিকে ৬-০ হারিয়েছিল এনরিকের স্পেন। সেই সময় অবশ্য মুলারদের দায়িত্বে ছিলেন ওয়াকিম লো। ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও স্পেন জিতেছিল ১-০। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ৭৫ শতাংশ বল ছিল গাভিদের দখলে। দ্বিতীয়ার্ধে ৭০ শতাংশ। পুরো ম্যাচে ১০৬১টি পাস খেলেছিল স্পেন। এর মধ্যে ১০০৩টি ছিল সঠিক পাস।
জাপানের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে জার্মানি ৬৬ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছিল। দ্বিতীয়ার্ধে তা কমে ৫৭ শতাংশ হয়ে যায়। মুলাররা মোট পাস খেলেছিলেন ৮২০টি। সঠিক পাস ছিল ৭৪৩টি। এখানেই শেষ নয়। তা সত্ত্বেও কোনও পরিসংখ্যানেই আগ্রহ নেই এনরিকের। স্পেনীয় কোচ গুরুত্ব দিচ্ছেন খাদের কিনারা থেকে জার্মানির ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসকে। ফুটবলারদের হার-না-মানা মানসিকতাকে। তাই জাপানের কাছে হেরে জার্মানি প্রবল চাপে থাকলেও স্বস্তিতে নেই এনরিকে। বলছিলেন, ‘‘জার্মানি বিশ্বফুটবলের অন্যতম সেরা শক্তি। ওদের দলে একাধিক এমন ফুটবলার আছে, যারা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। তা ছাড়া আমাদের মতো ওরাও প্রচুর পাস খেলে আক্রমণে ওঠে।’’
এনরিকের কথা শেষ করার আগেই স্পেনের এক সাংবাদিক অপ্রিয় প্রশ্নটা করে ফেললেন। জানতে চাইলেন, স্পেন কি তা হলে জার্মানিকে সমীহ করছে? এনরিকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। বললেন, ‘‘আমরা কাউকেই সমীহ করি না। কোস্টা রিকার মতো জার্মানির বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলতে বলছি ছেলেদের। আমাদের লক্ষ্য রবিবারই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ছাড়পত্র আদায় করে নেওয়া। জিততে না পারলে পরিস্থিতি একটু কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, শেষ ম্যাচে আমাদের খেলতে হবে জাপানের বিরুদ্ধে।’’
জার্মানির সমর্থকরা যদিও খুব একটা আশার আলো দেখছেন না। লেরয় সানে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়টা বড় ধাক্কা। জাপান ম্যাচে ওর অভাব বারবার বোঝা গিয়েছে। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে স্পেনের ফুটবল দেখার পরে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। রবিবারের ম্যাচে সানে ফিরতে পারেন। তিনি অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছেন।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগ থেকেই ছিটকে গিয়েছিল জার্মানি। ইউরো ২০২০-তে বিদায় শেষ ষোলো থেকে। কোথায় সমস্যা? বিশ্বকাপ কভার করতে কাতারে আসা জার্মানির সাংবাদিক ইয়ান গোবেল বললেন, ‘‘রক্ষণ ও মাঝমাঠ আমাদের ঠিক নেই। এই কারণেইখেলায় ছন্দ নেই।’’