লিভারপুলের হয়ে সই করার পর সালাহ। ছবি: সমাজমাধ্যম।
সই করবেন, না কি নতুন ক্লাবে যোগ দেবেন? গত কয়েক মাস ধরে এমনই জল্পনা তৈরি হয়েছিল মহম্মদ সালাহকে নিয়ে। মিশরের এই তারকা ফুটবলার অ্যানফিল্ড ছেড়ে যান, এটা কেউই চাইছিলেন না। সেটা হচ্ছেও না। অন্তত আগামী দু’বছরের জন্য। শুক্রবারই লিভারপুলের হয়ে নতুন চুক্তি সই করলেন সালাহ। ২০২৭ সাল পর্যন্ত তিনি থাকছেন অ্যানফিল্ডেই।
লিভারপুলের হয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৯৪টি ম্যাচ খেলেছেন সালাহ। ২৪৩টি গোলের পাশাপাশি ১০৯টি অ্যাসিস্ট রয়েছে। সই করে সালাহ বলেছেন, “আমি খুবই উত্তেজিত। এখন দলটা অনেক ভাল। তার আগেও ভাল ছিল। তবে আমি সই করেছি এটা ভেবে যে, আরও বেশি ট্রফি জেতার সুযোগ রয়েছে আমার কাছে। নিজের ফুটবলটা উপভোগও করতে পারব। এখানে আট বছর খেলছি। আশা করি সেটা দশ বছর হবে। লিভারপুলে জীবন উপভোগ করছি।”
চলতি মরসুমে সালাহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩২টি গোল করেছেন। এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে রয়েছে ২৭টি। আর্সেনালকে টপকে ২০তম লিগ জিতে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে লিভারপুলের সামনে। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন সালাহ।
চলতি মরসুমে সালাহ ছাড়াও ট্রেন্ট আলেকজ়ান্ডার আর্নল্ড এবং ভার্জিল ফান ডাইকের চুক্তি শেষ হচ্ছে। আর্নল্ডের রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া প্রায় পাকা। ফান ডাইক জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।
দীর্ঘ দিনের জল্পনা অবশেষে শেষ
তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল অনেক দিনই। সেপ্টেম্বরে একটি সাক্ষাৎকারে সালাহ বলেছিলেন, অ্যানফিল্ডে এটাই তাঁর ‘শেষ মরসুম’। কারণ চুক্তি নিয়ে তাঁর সঙ্গে ক্লাবকর্তাদের কোনও কথাই হয়নি। ম্যান ইউয়ের বিরুদ্ধে ৩-০ জেতার পর সালাহের এই মন্তব্যে শোরগোল পড়ে। এর দু’মাস পরে সাউদাম্পটনের বিরুদ্ধে জিতে সালাহ জানিয়েছিলেন, লিভারপুলের তরফে নতুন চুক্তির আভাস না পাওয়ায় তিনি ‘হতাশ’। ক্লাবে আর হয়তো তিনি নেই।
সেই সময় লিভারপুল দাবি করেছিল, সালাহের এজেন্টের সঙ্গে ইতিবাচক কথা হয়েছে। তবে জানুয়ারিতে সালাহ আবার চুক্তি নিয়ে জবাব দেন। জানান, দু’পক্ষের কথাবার্তায় কোনও উন্নতি লক্ষ করেননি। অনেক আগেই থেকেই কানাঘুষো ছড়াচ্ছিল যে তিনি সৌদি আরবের কোনও ক্লাবে যোগ দিতে পারেন। মোটা অঙ্কের প্রস্তাব রয়েছে তাঁর হাতে। সৌদি আরবের ক্রীড়ামন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন তুর্কি আল ফয়সাল জানিয়েছিলেন, সালাহ তাঁদের দেশে এলে সেটা হবে বড় পুরস্কার ।
তবে জানুয়ারিতেই লিভারপুলের কোচ আর্নে স্লট জানিয়েছিলেন, সালাহ লিভারপুলেই থাকুন, এটাই তিনি চান। পাশাপাশি এটাও বলেছিলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সালাহের যথেষ্ট বুদ্ধি রয়েছে।
সালাহের মানসিকতায় মুগ্ধ স্লট
রবিবার ওয়েস্ট হ্যামের মুখোমুখি হওয়ার আগে এ দিন স্লট জানিয়েছেন, সালাহ লিভারপুলে থেকে যাওয়ায় তিনি খুশি। কারণ সালাহকে নেওয়ার জন্য ‘বিশ্বের যে কোনও ক্লাব’ তৈরি ছিল। তিনি আরও বলেছেন, “ওকে সবাই ফুটবলার হিসাবেই দেখে। আমি ওকে মানুষ হিসাবেও দেখি। ও খুব ভদ্র। সব সময় বাড়তি পরিশ্রম করতে চায়। আজ যে ফুটবলার হয়েছে তার পিছনে অনেক প্রয়াস রয়েছে। সেই জায়গাই ধরে রাখতে চায়। প্রতি দিন উন্নতি করতে চায়। মো (সালাহের ডাকনাম) গোল করতে পারে, এটাই ওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। গোল করতে আরও অনেকে পারে। কিন্তু শেষ আধ ঘণ্টা বা ১৫ মিনিটে খারাপ খেললেও হঠাৎ করে গোল করার ক্ষমতা রাখে মো। সে কারণেই মানসিক ভাবে ও এতটা শক্তিশালী।”
লিভারপুলের প্রাপ্তি কী?
সালাহের পাশাপাশি যদি ফান ডাইকও নতুন চুক্তিতে সই করেন, তা হলে হাঁপ ছাড়তে পারে লিভারপুলও। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ফুটবলার থেকে যাবেন। আগামী দু’বছর আর তাঁদের নিয়ে ভাবতে হবে না। পাশাপাশি, চিন্তা কমবে কোচ স্লটেরও। দুই ফুটবলার ছেড়ে গেলে দলের ভারসাম্যে যে ক্ষতি হত তা পূরণ করা সহজ হত না। সেটা আপাতত হচ্ছে না। লিভারপুলের সামনে ঘরোয়া লিগ জেতার সুযোগ রয়েছে। পরের মরসুমে নতুন উদ্যমে আরও অনেক ট্রফির জন্য ঝাঁপাতে পারবে তারা।