মুগ্ধ: কিয়ানের সাফল্য দেখে খুশি ভিকুনা। ফাইল চিত্র
এই মুহূর্তে কলকাতা থেকে তিনি রয়েছে পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। সুদূর তুরস্কে। পোলান্ডের যে ক্লাবের সঙ্গে তিনি এই মুহূর্তে যুক্ত, তাদের প্রস্তুতি শিবির চলছে সেখানে। সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন কোচ কিবু ভিকুনা শনিবার রাতে তুরস্কে বসেই দেখেছেন আইএসএলের কলকাতা ডার্বির শেষ আধঘণ্টা। যেখানে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসে নাম তুলেছেন তাঁরই প্রাক্তন ছাত্র কিয়ান নাসিরি— যাঁর বড় ক্লাবে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে উঠেছিল কিবুর হাত ধরেই।
সবুজ-মেরুন সমর্থকদের প্রিয় ‘কিবু স্যর’ ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘শনিবারের রাতটা দারুণ কেটেছে। বিকেলে দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুশীলন করিয়ে ডার্বি দেখতে শুরু করি। কিয়ান তখন নামছে। তার পরেই ওর হ্যাটট্রিক। সবুজ-মেরুনের জয় দেখে খুশি মনে ঘুমোতে গিয়েছি। ছেলেটা শান্ত মাথায় নিখুঁত ফিনিশ করে এটিকে-মোহনবাগানকে জিতিয়ে নিয়ে ফিরল। ফিটনেস দুর্দান্ত! গোলের পর সমারসল্ট দিয়ে সেটা ও বুঝিয়ে দিয়েছে।’’
মেসির ভক্ত কিয়ান ম্যাচের পরে বলেছেন, তাঁর হ্যাটট্রিক দেখে জুনিয়র ফুটবলারেরা প্রেরণা পেলে তাঁর তিন গোল সার্থক। যা শুনেই কিবু বললেন, ‘‘এই হচ্ছে কিয়ানের পরিণতবোধ। এটা ওর একটা বিশেষ গুণ।’’ যোগ করেন, ‘‘তিন বছর আগে মোহনবাগানের ট্রায়াল দিয়ে যে ক’জন জুনিয়র ফুটবলারকে নিয়েছিলাম, তাদের মধ্যে কিয়ান একজন। ছেলেটার যা বয়স, ওর ফুটবল-মস্তিষ্কের বয়স তার দ্বিগুণ। প্রথম দিন কথা বলার পরেই তা বুঝেছিলাম। গোয়ায় প্রাক্-মরসুম শিবিরে ওকে দেখার পরে বুঝি, বড়দের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে খেলতে জানে, ফুটবলবোধ ও পাস বাড়ানোর দক্ষতা বেশ ভাল। দু’পায়েই শুটিং রয়েছে। বলের উপর নিয়ন্ত্রণ চমৎকার। সিনিয়রদের ট্যাকল করতেও ভয় পায় না। মাঝেমধ্যে অনুশীলনে দর্শণীয় গোলও করে। পেশাদার ফুটবলার হওয়ার সব গুণ রয়েছে।’’
অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছেন, কিয়ানের ছিপছিপে শরীরে শক্তিবৃদ্ধি প্রয়োজন। যা মানতে নারাজ কিবু বলেন, ‘‘ফুটবল তো কুস্তি নয়। ওর শরীরে ভালই শক্তি রয়েছে। বিশেষ করে কোমর ও পায়ের অংশ বেশ সুগঠিত। ফলে ও রকম শিশুসুলভ মুখ ও রোগাসোগা দেখতে হলেও ওর গায়ে কিন্তু প্রবল শক্তি। সেটা মাঠে নামলে বোঝা যায়। আর গতি দারুণ। পাঁচ গজে দ্রুত গতি বাড়িয়ে বলের কাছে যাওয়া বা ২০ গজের লম্বা দৌড়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছতে ও সমান দক্ষ। তাই স্ট্রাইকারের চেয়েও উইঙ্গার হিসেবে ও বেশি সফল হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘এসসি ইস্টবেঙ্গল ও পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামার পরে কিয়ানকে ধর্তব্যের মধ্যে রাখেনি। তার মূল্য চোকাতে হয়েছে। এটিকে-মোহনবাগান কোচ ওর এই গুণগুলি জানেন বলেই নামিয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা চলে না এলে, মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে অনেকগুলো ম্যাচে ওকে খেলানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু লিগ বন্ধ হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ছেলেটা যেন মাথা ঠান্ডা রাখে। তা হলে কিন্তু ভারতীয় দলে দ্রুত ঢুকে পড়বে।’’
যাঁকে নিয়ে সিনিয়র পর্যায়ে তাঁর ক্লাব জীবনের প্রথম কোচ এত উচ্ছ্বসিত, সেই কিয়ান যদিও এ দিন বিশ্রাম নিয়ে, জিম করে কাটিয়েছেন। হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতানোর ঘোর এখনও যায়নি। বলেছেন, ‘‘স্বপ্নের মতো লাগছে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে দলকে জিতিয়ে। আরও বেশি সময় মাঠে থাকতে চাই।আমাদের দলে গুণসম্পন্ন ফুটবলার বেশি। দলে জায়গা করতে গেলে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’ যার অর্থ ডার্বির পরেই পেশাদার ফুটবলারের মতো অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসে না ভেসে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছেন বড় ম্যাচের নতুন তারকা।
তিন গোলের মধ্যে দ্বিতীয় গোলকেই সেরা বেছেছেন আশির দশকে ডার্বির তারকা জামশিদ নাসিরির পুত্র। তাঁর কথায়, ‘‘সবুজ-মেরুন জার্সিতে জুনিয়র ডার্বি খেলেছি। বড়দের ডার্বি এই প্রথম। তবে জিতে কোনও উৎসব হয়নি। রবিবার রাতে বাড়িতে মায়ের সঙ্গে কথা বললাম। কিন্তু বাবার সঙ্গে কথা হয়নি। শিবিরে থাকার সময় বাবার সঙ্গে কথা বলি না।’’জানেন, এর আগে ডার্বিতে হ্যাটট্রিককারী ভাইচুং ভুটিয়া ও এডে চিডির কথা। যে প্রসঙ্গে সবুজ-মেরুনের ২৫ নম্বর জার্সিধারী বলছেন, ‘‘ওই তারকাদের কাছাকাছি পৌঁছতে পারলে বুঝব কিছু করেছি। দলকে একটা ম্যাচ জিতিয়ে তাই আত্মতুষ্ট হতে চাই না। এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।’’