এ ভাবেই বার বার সুযোগ নষ্ট করলেন মনবীররা। ছবি: টুইটার
বিতর্কিত গোল থেকে শুরু করে লাল কার্ড, কী না হল এটিকে মোহনবাগান বনাম মুম্বই সিটি এফসি ম্যাচে। বার বার পেন্ডুলামের মতো দুলল খেলা। ১০ জন হয়ে যাওয়ার পরেও হার মানল না এটিকে মোহনবাগান। শক্তিশালী মুম্বইয়ের সঙ্গে ২-২ ড্র করল তারা। গুরুত্বপূর্ণ ১ পয়েন্ট নিয়ে আরব সাগরের তীর থেকে ফিরলেন জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা।
প্রথমার্ধেই চার গোলে এগিয়ে যেতে পারত এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু শুধু গোলের সুযোগ তৈরি করলেই তো হবে না, বলটা গোলে জড়াতে হবে। সেটাই করতে পারলেন না মনবীর সিংহ, লিস্টন কোলাসোরা। ময়দানে একটা চিরাচরিত প্রবাদ রয়েছে। ডার্বি জিতলে তার পরের ম্যাচে সেই দল জেতে না। প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগানের খেলা দেখে সেটাই মনে হচ্ছিল। নইলে খেলার শুরুতেই যে ভাবে তারা গোল খেল, সেটা সবুজ-মেরুন রক্ষণের দুর্বলতাকে প্রমাণ করে দিল। প্রায় ৩০ গজ দূরে বল পেয়েছিলেন মুম্বই সিটি এফসির লালরিনজুয়ালা ছাংতে। বাঁ পায়ের চকিত শটে গোলরক্ষক বিশাল কাইথকে পরাস্ত করেন তিনি। বল বারে লেগে গোলের মধ্যে যায়। ৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় মুম্বই।
তবে গোল খেয়ে হতাশ না হয়ে পাল্টা আক্রমণের পথে যান জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। ৬ মিনিটের মাথায় লিস্টনের দুর্দান্ত হেড বারে লেগে ফেরে। মাঝমাঠে গ্রেগ স্টুয়ার্ট, আহমেদ জহুর যুগলবন্দিতে ভাল খেলছিল মুম্বই। অন্য দিকে মাঝমাঠের দখল নিতে পারছিল না সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। তবে ২৫ মিনিটের পরে খেলার ছবি বদলায়। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে খেলা শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। ২৯ মিনিটের মাথায় জনি কাউকোর পাস ধরে বক্সের মধ্যে ঢোকেন মনবীর। গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট মারেননি তিনি। পাস দেন সতীর্থকে। দিমিত্রি পেত্রাতোসের দুর্বল শট গোলের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরের মিনিটেই মনবীরের পাস থেকে বক্সের মধ্যে বল পান হুগো বুমোস। কিন্তু তিনিও বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন।
৪১ মিনিটে আবার একই দৃশ্য দেখা যায়। বক্সের মধ্যে মনবীর বল পেয়ে নিজে না মেরে ক্রস করেন। কিন্তু সেই বল থেকে কেউ ফায়দা তুলতে পারেননি। বক্সের মধ্যে ঢুকে বার বার এটিকে মোহনবাগান ফুটবলাররা কোনও অজানা কারণে গোলে শট না মেরে ক্রস দিলেন। তার খেসারত দিতে হল দলকে।
দ্বিতীয়ার্ধে দীপক টাংরিকে তুলে নিয়ে লেনি রদ্রিগেজকে নামান সবুজ-মেরুন কোচ। মাঝমাঠের দখল নেয় এটিকে মোহনবাগান। ৪৮ মিনিটের মাথায় বক্সের ভিতর থেকে কাউকোর শট মেহতাব সিংহের পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। আত্মঘাতী গোলে সমতা ফেরায় এটিকে মোহনবাগান। তার পর থেকে ক্রমাগত আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের খেলা চলতে থাকে। দু’দলই সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু গোলের মুখ খুলছিল না।
৭২ মিনিটের মাথায় স্টুয়ার্টের ক্রসে পা লাগান রস্টন গ্রিফিথস। বল বারে লেগে ফেরে। ফিরতি বল পাঞ্চ করে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করেন বিশাল। কিন্তু তাঁর গায়ের উপরই ছিলেন গ্রিফিথস। বিশালের হাতে বল লাগেনি। গ্রিফিথসের হেড গোলে ঢুকে যায়। এটিকে মোহনবাগান ফুটবলাররা রেফারির কাছে অভিযোগ জানান, যে গোলরক্ষককে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেফারি সেই আবেদনে কান দেননি। খেলার উত্তাপ বাড়তে থাকে। পরের মিনিটেই মাথা গরম করে লাল কার্ড দেখেন লেনি। এটিকে মোহনবাগান ১০ জন হয়ে যায়।
এক জন ফুটবলার কমে যাওয়ায় দাপট দেখাতে শুরু করে মুম্বই। আরও বেশি গোল করতে পারত তারা। ৮৩ মিনিটে স্টুয়ার্টের ফ্রিকিক বারে লাগে। বিপিন সিংহের দুর্দান্ত শট ভাল বাঁচান বিশাল। দেখে মনে হচ্ছিল হেরেই মাঠ ছাড়তে হবে এটিকে মোহনবাগানকে। কিন্তু ৮৮ মিনিটের মাথায় পেত্রাতোসের ফ্রিকিক থেকে পরিবর্ত হিসাবে নামা কার্ল ম্যাকহিউ হেডে গোল করে সমতা ফেরান। ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।