Kiyan Nassiri

Kiyan Nassiri: গতি আর শটে নজর কাড়ল জামশিদ-পুত্র, লিখলেন সুব্রত ভট্টাচার্য

প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ায় সবুজ-মেরুন। ৪৭ মিনিটে লিস্টনের শট ক্রসপিসে লেগে ফেরে।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:২১
Share:

নায়ক: ডার্বিতে হ্যাটট্রিক। নায়ক কিয়ান নাসিরি। এটিকে-মোহনবাগান।

ফতোরদা স্টেডিয়ামে হুগো বুমোস ও লিস্টন কোলাসো চারটি করে গোল করে রাখায় এই ম্যাচের আগে এটিকে-মোহনবাগান জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বুমোসেরা যে মাঠে নেমেই হইহই করে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দিয়ে আসবে, তা এক বারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি।

Advertisement

ভেবেছিলাম, লাল-হলুদ জার্সিধারীরা এই ম্যাচে পাল্লা দিয়ে লড়বে। তা হয়েছেও। কিন্তু লাল-হলুদের সব লড়াই এ দিন একাই থামিয়ে দিল কিয়ান নাসিরি। দীপক টাংরির পরিবর্ত হিসেবে নেমে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করে পিছিয়ে পড়া এটিকে-মোহনবাগানকেই ৩-১ জেতাল না, দলকে প্রথম চারে তুলে নিয়ে এল আট নম্বর থেকে। ১১ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে জুয়ান ফেরান্দোর দল প্রত্যাবর্তন ঘটাল আইএসএলে।

কিয়ানের বাবা জামশিদ নাসিরির বিরুদ্ধে আশির দশকে অনেক ফুটবল ম্যাচ খেলেছি। কখনও আমরা জিতেছি সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে দিয়ে। কখনও জামশিদের ইস্টবেঙ্গল বা মহমেডান। এখনও জামশিদের হোয়াটসঅ্যাপে ওর লাল-হলুদ জার্সি পরা ছবি রয়েছে। জামশিদের ফুটবলার জীবনে মোহনবাগান ক্লাবে বিদেশি ফুটবলার খেলানো হত না। তাই মোহনবাগান জার্সি গায়ে ওর খেলা হয়নি। যা নিয়ে আজও আক্ষেপ করে। শনিবার রাতে বাবার আক্ষেপ সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে হ্যাটট্রিক করে মুছে দিল কিয়ান।

Advertisement

টিভিতে দেখছিলাম লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুন জার্সি দুই রিজার্ভ বেঞ্চে একটি চেয়ারে রেখে আমার প্রয়াত বন্ধু সুভাষ ভৌমিককে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল। সবুজ-মেরুন জার্সির গায়ে লেখা ছিল সুভাষ। আর লাল-হলুদ জার্সির গায়ে লেখা ভৌমিক। এক সপ্তাহ আগে এই পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছে ময়দানের সফল ফুটবলার ও কোচ। সুভাষদা জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করতে ভালবাসত। কিয়ানের হ্যাটট্রিক সেই অর্থে প্রয়াত সুভাষদার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিও।

এটিকে-মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো এ দিন তাঁর আক্রমণ ও রক্ষণের দুই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার রয় কৃষ্ণ ও সন্দেশ জিঙ্ঘনকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে ৪-২-৩-১ ছকে দল নামিয়েছিলেন। সেখানে বিপক্ষ মারিয়ো রিভেরা ৪-৪-২ ছকে দল নামালেও আক্রমণের সময় দলকে করে দিচ্ছিলেন ৪-৩-৩। তখন মার্সেলো রিবেইরো ও আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচের সঙ্গে আক্রমণে যোগ দিচ্ছিল ওয়াহেংবাম লুয়াং।আর এটিকে-মোহনবাগান আক্রমণে এলেই সৌরভ দাসেরা হয়ে যাচ্ছিল ৪-৫-১। ফলে বুমোসেরা বিপক্ষের মাঝমাঠে ঢোকার পরেই বিপক্ষের নয় ফুটবলারের জটলায় গোলের দরজা হারিয়ে ফেলছিল। তাই একের পর এক আক্রমণ শানিয়েও গোল করতে পারেনি। তা ছাড়া ৪-২-৩-১ ছকে বিপক্ষের দুই স্টপারের মাঝে থাকছিল না ডেভিড উইলিয়ামস। বুমোস গোটা মাঠ জুড়ে খেললেও বাঁ দিকে সরে যাচ্ছিল। ফলে ওই দিক থেকেই যত আক্রমণ হচ্ছিল লিস্টন কোলাসোদের। আর বুমোস বাঁ দিকে সরায় মাঝখানে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছিল, সেখান দিয়েই ভিতরে ঢুকে আসছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের মার্সেলো ও পেরোসেভিচ। ২৫ মিনিটে তিরির সামান্য ভুলে মার্সেলো প্রায় গোল করেই ফেলেছিল।

প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ায় সবুজ-মেরুন। ৪৭ মিনিটে লিস্টনের শট ক্রসপিসে লেগে ফেরে। কিন্তু খেলার গতির বিরুদ্ধে ৫৬ মিনিটে পেরোসেভিচের কর্নার থেকে লাল-হলুদকে ১-০ এগিয়ে দেয় ড্যারেন সিডোয়েল। এই গোলের সময় শুভাশিস ওকে নজরে রাখেনি। এই গোলের চার মিনিট পরেই কিয়ানের মাঠে নামা। ‍‘সুপার সাব’ হিসেবে চার মিনিটের মধ্যেই প্রথম গোল কিয়ানের। ডান দিক থেকে প্রবীর দাসের ভাসিয়ে দেওয়া বল এসসি ইস্টবেঙ্গল বক্স থেকে বিপন্মুক্ত হয়ে এসেছিল লিস্টন কোলাসোর কাছে। ওর শট সৌরভের পায়ে লেগে ফিরলে তা ধরে গোল করে সবুজ-মেরুনের এ দিনের নায়ক কিয়ান। এর পরের মিনিটেই লিস্টনকে অমরজিৎ বক্সে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় এটিকে-মোহনবাগান। যে পেনাল্টি নষ্ট করে উইলিয়ামস। ৮০ মিনিটে হামতে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে সবুজ-মেরুনের গোলরক্ষক অমরিন্দরকে পেয়েও গোল করতে পারেনি। বুমোসেরা যদিও হতোদ্যম না হয়ে গোলের জন্য এই সময়ে ঝাঁপিয়েছিল।

সংযুক্ত সময়ে এ বারও লিস্টনের বাঁ দিক থেকে বাড়ানো বল বারে লেগে কিয়ানের কাছে এলে যোগ্য স্ট্রাইকারের মতো তা গোলে পাঠাতে ভুল করেনি। এক মিনিট পরেই ডান দিক থেকে মনবীরের বাড়ানো বল ধরে হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করে কিয়ান। ছেলেটার গতি ও পাস বাড়ানোর দক্ষতা ভাল। চকিতে ঘুরতে পারে। পায়ে শট রয়েছে। স্বাস্থ্য, হেড ও প্রথম টাচ ভাল করতে পারলে অনেক দূর যাবে কলকাতা ময়দানের এই তরুণ-তুর্কি নায়ক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement