ফাইল চিত্র।
আশঙ্কাই সত্যি হল। করোনার ধাক্কায় বাতিল হয়ে গেল শনিবার আইএসএলে এটিকে-মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচও। শনিবার সকাল এগারোটা নাগাদ সরকারি ভাবে ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে আইএসএল।
মোহনবাগানের একাধিক ফুটবলার ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন মারণভাইরাসে। সেই সংখ্যা যদি আরও বেড়ে যায়, তা হলে প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম ১৫ জন ফুটবলারও পাওয়া যাবে না। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসেছিলেন আইএসএল কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, এই বৈঠকেই ম্যাচ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরকারি ভাবে তা ঘোষণা করা হয়নি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শনিবার সকালে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পরেই এগারোটা নাগাদ ম্যাচ বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় সরকারি ভাবে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু দ্বৈরথের পরিবর্তিত সূচি পরে জানানো হবে। এক প্রেস বিবৃতিতে আইএসএলের তরফে জানানো হয়েছে, এখন থেকে প্রত্যেকটি খেলার আগে বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও ক্লাব ম্যাচে আদৌ দল নামানোর মতো অবস্থায় রয়েছে কি না অথবা কোন ক্লাবের কত জন ফুটবলার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব খতিয়ে দেখেই ম্যাচ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অষ্টম আইএসএলে গত ৮ জানুয়ারির মোহনবাগান বনাম ওড়িশা এফসি ম্যাচও বাতিল করা হয়েছিল। খেলা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সবুজ-মেরুনের তিন ফুটবলার ছাড়া আরও এক জনের শরীরে মারণভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে দিন দু’য়েকের মধ্যেই। নতুন করে মোহনবাগানের আরও চার জনের রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে। তার পরের দু’দিনে নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে বেঙ্গালুরু ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল মোহনবাগানকে। কিন্তু অনুশীলনের ঠিক আগে জানা যায়, এক সাপোর্ট স্টাফের রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’। সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল হয়ে যায় মাঠে নামার পরিকল্পনা। ফের কোয়রান্টিন শুরু হয় মোহনবাগানে। এখনও তা চলছে।
আইএসএলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দ্রুত হারে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। শুধু মোহনবাগান নয়, আক্রান্ত একাধিক দলের ফুটবলার ও কোচিং স্টাফ। এমনকী, হোটেলের কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। এফসি গোয়া প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দি। একাধিক ফুটবলার আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অবশ্য শুক্রবার নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে খেলেছিল তারা। ১-১ ড্রয়ের পরে এদু বেদিয়া তাই গণমাধ্যমে মোহনবাগান-বেঙ্গালুরু ম্যাচ বাতিল করা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আইএসএলের বিরুদ্ধে। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের দলের নয়জন করোনায় আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও ম্যাচ খেলতে হয়েছে। অথচ টানা দ্বিতীয়বার একই কারণের জন্য অন্য একটি দলের ম্যাচ স্থগিত রাখা হল। এর কারণ কি কেউ আমাকে ব্যাখ্যা করবেন?’’
সূচি অনুযায়ী মোহনবাগানের পরের ম্যাচ ২০ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচও কি শেষ পর্যন্ত হবে? শোনা যাচ্ছে, কেরল শিবিরেও করোনা থাবা বসিয়েছে। রাহুল কে পি ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্নবাসে রয়েছেন। যদিও আজ, রবিবার মুম্বইয়ের সঙ্গে খেলার কথা রয়েছে কেরলের।
প্রশ্ন উঠছে আইএসএলের ভবিষ্যৎ নিয়েও। যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন অন্তত দিন দশেকের জন্য হলেও স্থগিত রাখা হোক প্রতিযোগিতা। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফের শুরু করা যাবে খেলা। আজ, রবিবার সব ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা আইএসএল কর্তৃপক্ষের। ক্লাবগুলির তরফে প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, আপাতত আইএসএল স্থগিত রাখা হোক। সংক্রমণ কমলে এক দিনে দু’টি করে ম্যাচ দেওয়া হোক। যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা শেষ করা যায়। এই বৈঠকের পরেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আইএসএলের ভবিষ্যৎ।