পরিস্থিতি সামলাতে মণিপুরের রাস্তায় টহল নিরাপত্তারক্ষীদের। —ফাইল চিত্র
সাফ কাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে মণিপুরের হিংসা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জিকসন সিংহ। মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়ের পতাকা নিয়ে উল্লাস করেছিলেন তিনি। এ বার মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন ভারতের আর এক ফুটবলার বালা দেবী। মণিপুরের এই মহিলা ফুটবলারের অনুরোধ, এ বার অশান্তি বন্ধ হোক। মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মানুষদের একসঙ্গে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
ভারতের মহিলা দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বাধিক গোল (৫২) করা বালা দেবী বলেন, ‘‘আমরা শুধু শান্তি চাই। হিংসা নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা উচিত। আমি বহু বছর ধরে ভারতের হয়ে খেলছি। মেইতেই ও কুকিরা দেশের হয়ে একসঙ্গেই খেলেছে। তাতে তো আমাদের কোনও দিন সমস্যা হয়নি। মণিপুরে যা চলছে তা এ বার বন্ধ হওয়া উচিত।’’
তিনি নিজের খেলার জন্য গোটা দেশে ঘোরেন। কিন্তু তাঁর পরিবার মণিপুরে থাকে। পরিবারের জন্য চিন্তা হয় তাঁর। বালা দেবী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত পরিবারের সবাই সুরক্ষিত আছে। কিন্তু তার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ওদের। এই সমস্যা আর চাই না।’’
মণিপুরের এই অশান্তির জন্যই সিনিয়র জাতীয় মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় তাঁদের ফল খারাপ হয়েছে বলে মত বালা দেবীর। ২১ বারের চ্যাম্পিয়ন দল মণিপুর এ বার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে ৩৩ বছর বয়সি এই স্ট্রাইকার বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতার আগে অনুশীলন করার সুযোগই পাইনি আমরা। তা ছাড়া ফুটবলারদের মানসিকতাতেও প্রভাব পড়েছিল। সেই কারণে ভাল খেলতে পারিনি।’’
মঙ্গলবার সাফ কাপ জেতার পরে মেইতেই সম্প্রদায়ের পতাকা কাঁধে পদক নিতেও ওঠেন জিকসন। এর পর তিনি জানান, শুধু নিজের কথা তুলে ধরতেই এই পতাকা নিয়েছিলেন। জিকসন বলেন, ‘‘আমি কারও ভাবাবেগে আঘাত করতে চাইনি। আমার রাজ্য মণিপুর এখন কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেটাই সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।’’ শান্তির কথা এ বার বললেন বালা দেবীও।
মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০০ পার করেছে। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। শুরু হয় দীর্ঘ অশান্তি।
গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। তার পর থেকে তা ক্রমে বাড়তে থাকে। এই ঘটনায় গত দু’মাস দরে মণিপুরের এনএইচ-২ বা ইম্ফল-ডিমাপুর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল কুকিরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বদল বৈঠক ডাকেন অমিত। তার পরেও শান্তি আসেনি। অবশেষে অমিত মণিপুরে শান্তি স্থাপনের অনুরোধ করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের পরে জাতীয় সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয় কুকিরা। দু’মাস পরে স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ।